পল্লব দল! শুধাই তোমায়,
এতো অপরূপ রঙে কেন সেজেছ?
যেন নব বধুর মতন মেখে মেহেদি-
রাঙা কি বাসন্তী শাড়ি পরে, ঘর বাঁধতে চলেছ
কোন রাজকুমারের সাথে- সে কি স্বপ্নে দেখা?
তাই কি তোমার বিদায় লগনে,
প্রিয়জনেরা তোমার- মেতেছে উৎসব পালনে?
ঝলমলো চারদিক এ বিদায়ের পালা কেন মাতে আনন্দে?
চলে যাবে বৃক্ষ মায়ের বাহু ছেড়ে,
মমতার মায়াজাল দ্বিধায় ফেড়ে,
চলেছ এক অন্য গৃহে- যাচ্ছ কি সানন্দে?
ব্যাকুল নব বধুর মত বিহ্বল নাকি বিভ্রান্ত-
মনে করে এ কথা মা বলেছিল,
‘তোর জন্ম হয়েছে পরের ঘরের জন্যে।
পরের ঘরের তুই ধন!
ওই পরের ঘরই হবে তোর আপন’।
ও পল্লব দল! তোমারও কি চলেছ,
মৃত্তিকার পরে সেই রকম আপন ঘরের আশাতে?
তাই কি ব্যাকুল বিদায় নেবার উৎসবে, এই অপরূপ সাজ সাজতে?
তোমাদের যত আহ্লাদ আর সাধ,
প্রেম-ভালোবাসা মায়াজালে হবে সাধন,
চিরকালের তরে নিজেকে করে বিসর্জন,
মৃত্তিকায় যেতে চাও মিশে।
আপন ঘর সাজানোর জন্যে যেমন করে,
অন্যের মাঝে সত্তা বিলিয়ে,
নিজের অস্তিত্ব পরিপূর্ণ হবে ভেবে-
বিদায় নাও ঐ নব বধু মত পরের ঘরকে আপন করতে।
জীবনের গান ছন্দ বদলে কখন,
হয়ে গেছে এক পরিমিত কীর্তন।
সেই কীর্তন ছন্দ ছন্দে ভাবের উচ্ছাসে-
চলে একই সুর সেধে।
নিয়মিত সূর্য উদয়ের অপেক্ষায়,
কি যেন অমোঘ আকাঙ্ক্ষায়-
নির্ঝরের উপাসনা যেমন উপচায়,
সব কিছুর তীক্ষ্ণ প্রান্তে টেনে দেয় মসৃণ মমতা।
মিশে গেছে সব আবেগ, কেড়ে নিয়েছে স্বতন্ত্র সত্ত্বা-
কোথায় মিলিয়েছে অধীর বেহাগের তান সেথা।
সমুদ্রের লহরির খেলা যেমন বারে বারে,
ফিরে ফিরে আসে একই প্রচল ধরে।
অনুরাগের স্পর্শ লাগি আকুল কোন দ্বিপ্রহরে,
হৃদয় হয়নাতো আর বিদারিত।
ঝংকার উঠে অনাবিল আশায় প্রতিভাত-
মনে হয় বহুদূর চলে যেতে পারব
হোক না সে পথ, যতই কংকরময়।
আজ জীবনের এই মঞ্চে-
বসে সাধি সুর সেই কীর্তনের
যেখানে অন্য আরেক খেলা।
জীবনের তাগিদে, বেঁচে থাকার খেলা।
সেখানে কোষের গভীরে কারুকাজ সুরের-
অনুলিখন যেন অনুভবের,
কোন সেই অনাদি কালের
ফিরে ফিরে আসা অনুরণন প্রতিভাস।
সে কীর্তনের সুরে জীবনের মালা গাঁথা-
একই সুরে গীতি রচে- জীবনের সঙ্গীত সাধা,
দিনের পর দিন অন্তরের অভিলাষ।