দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাওয়া টাকা ফেরত আনা হবে জানিয়ে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, অর্থ পাচারকারীরা যাতে টাকার বালিশে ঘুমাতে না পারে সেই ব্যবস্থা করব। যেহেতু তারা দেশের অবস্থা খারাপ করে দিয়েছে তাই তাদের শান্তিতে থাকতে দেওয়া হবে না। আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই পাচার হয়ে যাওয়া টাকা ফেরত আনা হবে।
দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন ১৪ আগস্ট বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকে বোর্ড মিটিংয়ে সংবাদ সম্মেলনে অর্থপাচারকারীদের এ হুঁশিয়ারি দেন গভর্নর ।
তিনি আরও বলেন, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো বাংলাদেশ ব্যাংককেও ধ্বংস করা হয়েছে। একটি জাতির মধ্যে যখন পচন ধরে তখন সব জায়গায় নষ্ট হয়ে যায়। তাই সব জায়গায় সংস্কার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ব্যাংকের খেলাপি ঋণের তথ্য একত্রিত করতে হবে। কারণ বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে খেলাপি ঋণ কমিয়ে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আদালতে অনেক টাকা আটকে আছে। সব মিলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়বে।
পরিদর্শন শেষে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আসার আগেই পরিদর্শন প্রতিবেদন বদলে যাওয়ার বিষয়টি আর প্রশ্রয় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন নতুন গভর্নর।
মাঠের প্রতিবেদন উপরে আসবে এবং মধ্যবর্তী কর্মকর্তারা পরামর্শ দিতে পারবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংককে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়া হবে বলেও অঙ্গীকার করেন ড. আহসান এইচ মনসুর।
নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর
বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৩তম গভর্নরের দায়িত্ব পেয়েছেন বিশিষ্ট গবেষক আহসান এইচ মনসুর। গত ১৩ আগস্ট মঙ্গলবার রাতে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তিনি সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন।
তবে এর আগে গভর্নরের বয়সসংক্রান্ত আইনি শর্ত শিথিলের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এজন্য গভর্নরের জন্য নির্ধারিত বয়সসীমা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যমান আইন অনুসারে, ৬৭ বছরের বেশি বয়সী কারোর গভর্নর হওয়ার সুযোগ নেই।
গত ৯ আগস্ট পদত্যাগ করেন সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। তিনি তার এক পৃষ্ঠার পদত্যাগপত্রটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আবদুর রহমান খানের কাছে পাঠান। সেখানে তিনি পদত্যাগের জন্য ব্যক্তিগত অসুবিধার কথা উল্লেখ করেন।
ড. আহসান এইচ মনসুর বর্তমানে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় এনজিও ব্র্যাকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব আছেন।
ড. আহসান এইচ মনসুর বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী। তিনি ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরের বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৭৭ সালে ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ১৯৮২ সালে ওয়েস্টার্ন অন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন।
ড. মনসুর ১৯৮১ সালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ফিসকাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগে কাজ করেছেন।
তিনি ১৯৮৯ সালে অর্থমন্ত্রী ওয়াহিদুল হকের অর্থ উপদেষ্টা নিযুক্ত হন এবং ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়া বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন।অর্থকন্ঠ ডেস্ক