প্রবাসী বাংলাদেশিদের সম্পদ
রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায়
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে
রায়হান জামান
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠাতা
উৎসব গ্রুপ
‘কেবল বিশেষ ব্যক্তিরাই পরিবর্তনের প্রয়োজন উপলব্ধি করতে পারেন, সেই পরিবর্তনটি হোক ছোট অথবা বড়ো কিছুু যা ভবিষ্যতের দিকে আমাদেরকে টেনে নিয়ে যায়। এর জন্য প্রয়োজন সফল হওয়ার ইচ্ছাশক্তি এবং সেই সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওঠার উদ্যম’। এ কথাগুলো বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অন্যতম সফল প্রবাসী উদ্যোক্তা রায়হান জামান।
রায়হান জামান বাংলাদেশের উদীয়মান মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ‘উৎসব গ্রুপ’ এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি তার নিষ্ঠা এবং অধ্যবসায়ের জন্য ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেছেন। তিনি বলেন, নিউ ইয়র্কে হিলসাইড হোন্ডার সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে কাজ শুরু করার সময় আমি বেশ পরিচিতি পেয়েছি। এখন আমি সফল উদ্যোক্তাদের একজন। আমার পূর্বের খ্যাতির উপর ভর করে, আমি utshob.com-এর এই প্রকল্পটি শুরু করি। utshob গ্রুপের প্রথম প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে একটি। সূচনা হওয়ার পর থেকে, utshob,com উৎসব গ্রুপের অন্যতম নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও জানান, আমাদের ত্যাগ ও নিষ্ঠা ছাড়া এই প্রচেষ্টা সফল ও সার্থক হতে পারত না।
উদ্যোক্তা রায়হান জামান তার উদ্যোগের চেয়েও বেশি জনপ্রিয়। তিনি উত্তর আমেরিকার বিশিষ্ট আইকন যার নাম চিরকাল সমাজের সম্মিলিত চেতনায় খোদাই করা থাকবে। সংস্কৃৃতির প্রবর্তক হিসেবে তিনি নিউ ইয়র্কে সুপরিচিত। তার পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত প্রোগ্রাম এবং ইভেন্টগুলো সেখানকার ব্যবসায়ী সমাজসহ বিশাল প্রবাসী কমিউনিটির উপকার সাধন করেছে, যার ফলে তার নাম নিউ ইয়র্কের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এই অনুষ্ঠানগুলো তাদের ফেলে আসা জন্মভূমি এবং নতুন গড়ে ওঠা মাতৃভূমির মাঝে সেতুবন্ধনের কাজ করে।
২০০৫ সালে utshob.com এর মাধ্যমে উৎসব গ্রুপের যাত্রা শুরু। এটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম ক্রস-বর্ডার ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম। এটি সকলকে বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা প্রদান ও নিশ্চিতের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। রায়হান জামানের মতে, বিষয়টি অ্যামাজন নদীর বিস্তৃতির মতো। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তারা দেশের সকল প্রধান সেক্টরে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে আসছে। এখন গ্রুপটি ৯টি দেশে ১৮টি কর্পোরেট ইউনিট এবং ১০টি কর্পোরেট ভবন পরিচালনা করছে।
রায়হান জামানের জন্ম বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায়। ১৯৯৩ সালে ছাত্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর থেকে নিউ ইয়র্কে বসবাস করেন। তিনি এমন এক ব্যক্তি যিনি দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সত্ত্বেও নিজেকে খুব একটা পরিবর্তন করেননি। তিনি এখনও প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ এবং বাঙালি সংস্কৃতির সাথে একটি দৃঢ় সখ্য ও শিকড়ের টান অনুভব করেন। তিনি আমেরিকায় দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের অধিকারের বিষয়ে আইনজীবী হিসেবে তাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে যারা কর্মসংস্থানের জন্যে আটলান্টিকের তীরে পৌঁছেছে সেই মানুষদের উন্নতির লক্ষ্যে তার প্রচেষ্টার মধ্যে রয়েছে তাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং শিক্ষা অব্যাহত রাখা। তিনি ডিজিটাল যুগের একজন অদম্য কর্মী-চিন্তাবিদ যিনি দক্ষিণ এশীয় অভিবাসী সম্প্রদায়ের ঐক্য ও পুনর্গঠন নিশ্চিত করার জন্য নিবিড়ভাবে কাজ করছেন। তার নিজস্ব পরিচয়ের শিকড় ও মূল্যবোধ তাকে নিজ পরিধির বাইরে যেতে আরও উৎসাহ যুগিয়েছে। মানুষকে ভালোবাসা এবং সকলের জন্য কিছু করার আকাক্সক্ষা থেকে, তিনি বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগে উদ্যোগী হতে পেরেছিলেন। মানুষের পরিধানের জন্য বস্ত্র এবং লাইফস্টাইলের প্রয়োজন মিটানোর জন্য তিনি পোশাক এবং লাইফস্টাইল পণ্যের খুচরা বিক্রেতাতে পরিণত হন। ব্যবসায় জগতের সাথে হালনাগাদ রাখতে তিনি একটি বিজ্ঞাপন সংস্থায় প্রবেশ করেন। বিশ্বব্যাপী নাগরিকদের জন্য তাদের প্রিয়জনদের কাছে উপহার পাঠানোর লক্ষে তিনি নিজস্ব কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করেছেন। উৎসব গ্রুপের কাজের পরিধি কৃষি সম্প্রসারণেও বিস্তৃত। উৎসব গ্রুপ পশুসম্পদ, পোলট্রি এবং মৎস্যসম্পদ নিয়ে কাজ করছে।
রায়হান জামান উৎসব গ্রুপের অধীনে একটি দাতব্য ফাউন্ডেশনও প্রতিষ্ঠা করেছেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মানসম্পন্ন শিক্ষার অভিগমনে সহায়তা করে যাতে তারা তাদের সম্ভাবনাকে আরও কাজে লাগাতে পারে। এটি উৎসব গ্রুপের বিস্তৃত পরিসরের কাজের কয়েকটি উদাহরণ মাত্র। ১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১-এর মর্মান্তিক ঘটনাগুলো অভিবাসন বিধিনিষেধের দিকে পরিচালিত হয়েছিল এবং আবেদন প্রক্রিয়া কঠোর হওয়ার কারণে অনেক অভিবাসী নিয়মের মধ্যে আটকা পড়েছিল। আইনগত মর্যাদা পেতে অক্ষম হওয়ায় লক্ষ লক্ষ লোক ছিন্নমূল হয়ে পড়েছিল। সঙ্গত কারণে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে ভ্রমণের বিধি-নিষেধের শিকার হয়ে পড়ার কারণে তারা কেনাকাটা এবং দেশে টাকা পাঠানোর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। এই দুর্ভোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার লোকদের দুর্দশা দেখে এবং বাংলাদেশের দিকে অতিরিক্ত মনোযোগ দিয়ে রায়হান জামান উৎসব গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন।
রায়হান জামান প্রযুক্তি ব্যবহার করে জীবনের সমস্যা সমাধানে বিশ্বাসী। বিশ্ব নাগরিক হিসেবে তিনি প্রযুক্তিগতভাবে অবগত এবং তিনি জানেন তার দক্ষতা সমস্যার কোথায় প্রয়োগ করলে তার সমাধান পাওয়া যাবে। উৎসব গ্রুপকে এ কারণে বিশ্বের নতুন উদ্ভাবন, প্রযুক্তি, কৃষি, জীবনধারা, শিল্প এবং বিনোদনের ব্যাপারে হালনাগাদ থাকতে হয়।
বর্তমানে উৎসব গ্রুপের নিজস্ব ১৮টি উদ্যোগ ক্রিয়াশীল এসবের মধ্যে রয়েছে প্রসাধনী এবং লাইফস্টাইল, পোশাক, ব্যবসা সমাধান, কৃষি উন্নয়ন, কুরিয়ার পরিষেবা, বিজ্ঞাপন সংস্থা, ই-ম্যাগাজিন, দাতব্য ফাউন্ডেশন এবং আরও অনেক কিছুু। আধুনিক ও আন্তর্জাতিক ক্রেতার প্রয়োজন ও চাহিদার কথা মাথায় রেখে এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
উৎসব গ্রুপের সবচেয়ে সাম্প্রতিক উদ্যোগ হলো ম্যানেজোলজি হোল্ডিংস, একটি ক্রস-বর্ডার রিয়েল এস্টেট প্ল্যাটফর্ম। ম্যানেজোলজি হোল্ডিংস যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি অভিবাসীদের জমি সংক্রান্ত সমস্যাসমূহ সমাধানে কার্যক্রম পরিচালনা এবং অন্যান্য সহায়তা করে। বিশ্বায়নের যুগে অনেকেই বিশ্ব নাগরিকে পরিণত হয়েছি। এই কারণে, অনেকে তাদের জীবনযাত্রার অগ্রগতির জন্য বা উন্নত জীবিকার আশায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয়। অনেকে তাদের ঘরবাড়ি, জমিজমা ফেলে চলে যান এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের সম্পত্তি দেখাশোনা করার মতো কেউ থাকে না। ম্যানেজোলজি হোল্ডিংস এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করে এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে। রিয়েল এস্টেটের ক্ষেত্রে, প্রতিটি ক্লায়েন্ট আলাদা এবং তাদের পরিস্থিতি ভিন্ন ভিন্ন। যখন আন্তঃসীমান্ত পরিস্থিতি হয় তখন চ্যালেঞ্জগুলোও হয় বহুগুণ। কেউ কেউ তাদের ফেলে যাওয়া সম্পত্তি ভাড়া দিয়ে রাখতে চান আবার কেউ দেশে না ফেরার কারণে বিক্রয় করে দিতে চান। উৎসব গ্রুপের ম্যানেজোলজি হোল্ডিংস গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী তাদের পরিষেবাসমূহ পরিবেশন এবং ব্যবস্থাপনা করে। ম্যানেজোলজি হোল্ডিংস একটি শীর্ষস্থানীয় এন্টারপ্রাইজ যার লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী বাংলাদেশিদের যার যার অবস্থান থেকে তাদের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে সাহায্য করা। উৎসব গ্রুপের ‘ম্যানেজোলজি হোল্ডিংস’ প্রযুক্তিভিত্তিক বিশ্ব নাগরিকদের জন্যে একটি আধুনিক এবং দূরদর্শী উদ্যোগ।
ইউনিক এই এন্টারপ্রাইজের নামটি এসেছে বাংলা শব্দ ‘উৎসব’ থেকে যার ইংরেজি অনুবাদ ‘সেলিব্রেশন’। এই নাম বেছে নেয়ার পেছনের কারণ ক্রেতাদের ঝামেলাবিহীন কেনাকাটার উৎসব। তারা এখন ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ছাড়া প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে এবং বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে যে কোনো জায়গায় পরিবার ও বন্ধুদের কাছে পাঠাতে পারেন। অনলাইন স্টোর ছাড়াও কুইন্স, ব্রুকলিন এবং ব্রঙ্কসে আছে ফিজিক্যাল আউটলেট যেখানে অসংখ্য বাংলাদেশিদের বসবাস। utshob.com-এর খবর আমেরিকা-কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশিদের মাঝে আগুনের মতো ছড়িয়ে গিয়ে একটি ঘরোয়া নামে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে utshob গ্রুপের utshob.com বিশ্বব্যাপী ৬০০টি বিক্রেতার কাছ থেকে ৩০,০০০টির বেশি পণ্য ক্রেতাদের কাছে উপস্থাপন করে। প্রতিদিন তার গ্রাহকদের জন্য ১০,০০০টির বেশি অর্ডার প্রক্রিয়া করে।
রায়হান জামানের প্রচেষ্টা এখানেই থেমে নেই, utshob.com চালু করার পর থেকে তিনি বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টায় জয়ী হয়েছেন। উৎসব গ্রুপ ২০১৫ সাল থেকে ক্রমাগত নিউ ইয়র্ক এবং যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বাংলাদেশি অনুষ্ঠানসমূহে উদার বিজ্ঞাপনী উদ্যোগ প্রদান করে আসছে (ফোবানাসহ)। এছাড়াও, রায়হান জামান আরও কয়েকটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন যার লক্ষ্য হলো বাংলাদেশি শিল্প ও বিনোদন, অর্থ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষা এবং গুরুত্বপূর্ণ সচেতনতামূলক প্রচেষ্টাকে আরও এগিয়ে নেওয়া। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে রায়হান জামান utshobbd.com নামে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন যা এখন বাংলাদেশি গ্রাহককে তাদের প্রিয়জনদের উপহার পাঠিয়ে দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। উৎসব গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশে একটি সুপরিচিত নাম যা গ্রাহকদের কাছে চমৎকার পরিষেবার মাধ্যমে ব্যাপক আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। রায়হান জামানের দুর্দান্ত নেতৃত্বের মাধ্যমে এটি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোতেও গ্রাহক পেতে সক্ষম হয়েছে। রায়হান জামানের এ সকল উদ্যেগের কারণে উৎসব গ্রুপ একটি মাল্টিন্যাশনালে পরিণত হতে সক্ষম হয়েছে।
রায়হান জামান সব সময়ই কাজে মগ্ন থাকেন। তার বিশ্বাস, কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। তবে স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি বলেন, সাফল্যের চাবিকাঠি সেখানেই। বিশ বছর পরও রায়হান জামান স্বপ্ন দেখছেন আরও বৃহৎ অর্জনের। তিনি মনে করেন- আগামী প্রজন্মকে, তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে তাদেরও নিরলসভাবে কাজ করতে হবে।