২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনই পারবেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারাতে। অন্তত তিনি তা মনে করেন। এমন মনে করেন দেখেই সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে পুনর্নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়েছেন বাইডেন। একান্ত আলোচনায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাথে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এমন আলোচনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যমগুলো সংবাদ পরিবেশন করেছে।
আমেরিকার রাজনীতিতে কঠিন সময় যাচ্ছে। রিপাবলিকান দলেও এখন পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়া কোনো প্রার্থীর তেমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ডেমোক্র্যাট দলেও আপাতত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ছাড়া কোনো তারকার উত্থান দেখা যাচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর আবার ক্ষমতায় আসার ইতিহাস সৃষ্টি করার অভিপ্রায় লালন করছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। পরিষ্কার করে ঘোষণা না দিলেও ২০২৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে তাঁর তৎপরতা লক্ষণীয়।
আমেরিকার নিকটঅতীতের কোনো প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর রাজনৈতিকভাবে এমন তৎপর থাকতে দেখা যায়নি। রিপাবলিকান দলের মধ্যে ট্রাম্প গড়ে তুলেছেন একচ্ছত্র আধিপত্য। মধ্যপন্থী রিপাবলিকানরা দেশজুড়ে এখন অনেকটাই নিষ্ক্রিয় অবস্থায়। আমেরিকার সমাজজীবনে উগ্রতাকে উস্কে দিয়ে রিপাবলিকান দলকে উগ্র এক ডান দলে পরিণত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দলের সক্রিয় সদস্যদের মধ্যে জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের ধারেকাছেও নেই কেউ। আমেরিকার সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ৭৯ বছর বয়সে আমেরিকার রাষ্ট্রক্ষমতা সামাল দিতে তাঁকে প্রায়ই হিমশিম খেতে দেখা যাচ্ছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর ক্ষমতা গ্রহণের সময় তাঁর বয়স দাঁড়াবে ৮২ বছর। বয়স তাঁর পক্ষে না হলেও জো বাইডেন বলছেন, তাঁর শরীর চমৎকার রয়েছে। নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিসকেই রানিং মেট রাখার কথাও বলেছেন তিনি। যদিও জনমত জরিপে নাজুক অবস্থায় আছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ক্ষমতার প্রথম বছরেই তাঁর জনমত সবধরনের জরিপে চল্লিশ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। কৃৃষ্ণাঙ্গ, হিস্পানিক এবং যুব সমাজের মধ্যে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে নিয়ে কোনো চাঞ্চল্য নেই।
ডেমোক্র্যাট দলের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, এ বছর খারাপ সময়ের মধ্যদিয়ে গেলেও আগামী বছর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘুরে দাঁড়াবেন। এরইমধ্যে মধ্যবর্তী নির্বাচন হয়ে যাবে। মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দল খারাপ করবে। এই নির্বাচনের পরই আমেরিকার অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো অনেকটা দৃৃশ্যমান হয়ে উঠবে। মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থনীতির অন্যান্য টানাপড়েন অনেকটাই সহজ হয়ে উঠবে। আমেরিকার স্বাধীনচেতা ভোটারদের সহানুভূতি জো বাইডেনের ওপর থাকবে। আমেরিকান সমাজে রক্ষণশীলতা উস্কে উঠলেও এমন উস্কে ওঠা রক্ষণশীলতা দমনের জন্য অন্য বিবদমান পক্ষগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠবে। এসব প্রত্যাশার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাঁর সাফল্য দেখছেন বলে আমেরিকার সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলেছে।
হান্টার কলেজের পাবলিক পলিসি কর্মসূচির পরিচালক বাসিল স্মাইকেলও এমন মনে করেন। তিনি বলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দল যদি মুষড়ে না পড়ে তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঠিকই ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার প্রেসিডেন্সিয়াল স্টাডিজের পরিচালক বারবারা পেরি বলেন, আমেরিকার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে বেশ কয়েকজন প্রেসিডেন্টই তাঁদের ক্ষমতার প্রথম বছরে নাজুক অবস্থা কাটিয়ে পুনর্নির্বাচনে সফল হয়েছেন। তিনি এক্ষেত্রে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জর্জ বুশ এবং বারাক ওবামার উদাহরণ দিয়েছেন। ২০০৮ সালের মন্দা এবং চরম নাজুক অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর পর সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে দ্বিতীয় দফা নির্বাচিত হতে বেগ পেতে হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য ক্ষমতায় আসার পরই কিছু অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জ তাঁকে সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। আফগানিস্তান থেকে সরে আসার বিশৃঙ্খলা, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সীমান্তের বেসামাল অবস্থার সাথে প্রলম্বিত মহামারির জের। নিকটঅতীতের কোনো আমেরিকান প্রেসিডেন্টকে এমন সাঁড়াশি সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়নি।
নিজের অবস্থান নিয়ে অনেকটাই দৃঢ়চেতা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ২০২৪ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার প্রার্থী হলে নিজের প্রার্থী হওয়াটা আর বেশি প্রেরণার হবে। ব্যক্তিগতভাবে ভাগ্য বিড়ম্বনায় পড়া প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাজনীতির মাঠে সাফল্যই পেয়েছেন। শেষ প্রশ্নে তিনি বার বার ভোটারদের মন জয় করতে পেরেছেন রাজনীতির মাঠে। বয়স ও শরীর সামাল দিয়ে ২০২৪ সালে আরেক দফা আমেরিকার মানুষের মন জয় করতে পারবেন এমন বিশ্বাস থেকেই তাঁর একান্ত মানুষ সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে নিজের প্রার্থিতার কথা নিশ্চিত করেছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। অর্থকণ্ঠ ডেস্ক