• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০১:১৮ পূর্বাহ্ন

এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজন রপ্তানিমুখী শিল্পের সম্প্রসারণ

অর্থকণ্ঠ ডেস্ক / ৬৭ ভিউ
আপডেট সময়: মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০২২

এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে রপ্তানিমুখী শিল্পের সম্প্রসারণের ওপর অধিক গুরুত্বারোপের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল ডায়ালগের বক্তারা।
সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যকার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা : প্রেক্ষিত এলডিসি উত্তরণ’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় এ আহ্বান জানান বক্তারা।
তারা বলেন, সত্তর দশকে দক্ষিণ কোরিয়ার এলডিসি উত্তরণের সময় দেশটি অধিকহারে রপ্তানি শিল্পের ওপর মনোনিবেশ করেছিল। ফলে আজ সারা পৃথিবীতে ইলেকট্রনিক্স, কেমিক্যাল, অটোমোবাইল, মেশিনারিজ প্রভৃতি পণ্য রপ্তানিতে দেশটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
তারা আরও বলেন, দক্ষিণ কোরিয়াকে অনুসরণ করে এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে রপ্তানিমুখী শিল্পের সম্প্রসারণের ওপর অধিকহারে গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন।

ভার্চ্যুয়াল সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। দক্ষিণ কোরিয়াকে বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে আগামীতেও দেশটির সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, করোনা পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সকলের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এছাড়াও রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের কারণে বিশেষ করে জ্বালানি খাতে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা মোকাবিলায় আমাদের আরও সচেতন থাকতে হবে।
এ সময় তিনি দু’দেশের মধ্যকার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে পুরোনো বাণিজ্য চুক্তিগুলোর যুগোপযোগীকরণ, দ্রুততম সময়ের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর, ঢাকা-সিউল সরাসরি বিমান চালুকরণ, কারিগরি ও প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ, মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন, সম্ভাবনাময় খাতে কোরিয়ান বিনিয়োগ বাড়ানো এবং কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষাব্যবস্থার ওপর গুরুত্বরোপ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ১.২৩ বিলিয়ন ইউএস ডলারের সরাসরি বিনিয়োগের মাধ্যমে বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়া পঞ্চম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় ১৫০টি কোরিয়ান কোম্পানি তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, ইলেকট্রনিক্স ও সফটওয়্যার প্রভৃতি খাতে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে তিনি বাংলাদেশকে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ, শ্রমঘন শিল্প ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ খাতের ওপর গুরুত্বারোপের পরামর্শ দেন। এছাড়াও বাংলাদেশে ‘স্যামসাং গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র’ স্থাপনের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ডায়ালগের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ১.৫২৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার। পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ার দশম বৃৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য হলো বাংলাদেশ। তিনি উল্লেখ করেন, কোরিয়ায় রপ্তানি করা বাংলাদেশি পণ্যের প্রায় ৯৫ ভাগই শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। কিন্তু এলডিসি হতে উত্তরণের পর বাংলাদেশ এ সুযোগ হারাবে।
এ অবস্থায় এলডিসি পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের প্রস্তুতি ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ সুবিধা ২০৩০ সাল পর্যন্ত বর্ধিতকরণের প্রস্তাব করেন ডিসিসিআই সভাপতি। একই সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের অধিকতর সম্প্রসারণে এফটিএ স্বাক্ষরের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
রিজওয়ান রাহমান জানান, দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্যোক্তারা এরই মধ্যে টেক্সটাইল, চামড়া, অবকাঠামো, জ্বালানি, মোবাইল ফোন ম্যানুফ্যাকচারিং এবং তথ্য-প্রযুক্তি প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগ করেছে।
পাশাপাশি কৃষি ও খাদ্য প্র্রক্রিয়াজাতকরণ, প্লাস্টিক, পাট ও পাটজাত পণ্য, হালকা প্রকৌশল ও অটোমোবাইল প্রভৃতি খাতে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ডায়ালগে ইয়াংওয়ান করপোরেশন ও কোরিয়ান ইপিজেড করপোরেশন (বিডি) লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কিহাক সাং সম্মানিত অতিথি হিসেবে অংশ নেন। তিনি বলেন, তার প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে বাংলাদেশে ৬০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার বিনিয়োগ করেছে।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ আগামী ৫ বছরে প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক খাতের পণ্য দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি করতে সক্ষম হবে। এ সময় এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে দু’পক্ষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। এক্ষেত্রে দু’পক্ষের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
এছাড়া কাস্টমস ও কর কাঠামো সহজীকরণ, বন্দর সুবিধার আধুনিকায়ন ও অভ্যন্তরীণ নদীপথে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন কিহাক সাং। সেই সঙ্গে মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে পণ্য উৎপাদনে দক্ষতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তিনি উল্লেখ করেন, দক্ষিণ কোরিয়ার সামুদ্রিক ভোগ্যপণ্যের বাজার বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এবং এ খাতে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসতে পারে।
সামনের দিনগুলোতে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের সম্ভাবনা খুবই বেশি। এরই মধ্যে ইয়াংওয়ান করপোরেশন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে ‘হাইটেক পার্ক’ স্থাপন করেছে। এখানে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের বিনিয়োগ আসবে।
ডায়ালগের নির্ধারিত আলোচনায় কোরিয়া ট্রেড ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এজেন্সির (কোটরা) গ্রীন গ্রোথ বিভাগের মহাপরিচালক জন উন কিম ও কোরিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (কেবিসিসিআই) উপদেষ্টা শাহাব উদ্দিন খান বক্তব্য দেন। অর্থকণ্ঠ ডেস্ক


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর