আজিজুল হক মুন্না
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
সেলস পার্সন
শুধু মেধা থাকলেই হয় না, থাকতে হয় স্বপ্ন এবং প্রচেষ্টা- তাহলেই কোনো ব্যক্তি পরিণত হতে পারেন ব্যক্তিত্বে, পেতে পারেন সফল কর্মজীবন। এমনই একজন মেধাবী ও আত্মপ্রত্যয়ী মানুষের নাম আজিজুল হক মুন্না। আমেরিকার ব্যবসা-বাণিজ্য অঙ্গনের রিয়েল এস্টেট খাতের সম্ভাবনাময় ব্যক্তিত্ব আজিজুল হক মুন্না বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের আবাসন প্রতিষ্ঠান Keller Williams Realty Landmark-11 এর Sales person. তিনি চলতি বছরের ২৪ মে পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে ব্যবসা পরিচালনার লাইসেন্স পেয়েছেন।
দেশের মেধাবী ও কৃতী সন্তানদের একজন আজিজুল হক মুন্নার জন্ম ১৯৬৪ সালে ঢাকা শহরের আরামবাগে এক সম্ভ্রান্ত শিক্ষিত পরিবারে। তার পিতা মরহুম মো. মজহারুল হক ছিলেন রেলওয়ে মেইল সার্ভিসের (আরএমএস) তত্ত্বাবধায়ক কর্মকর্তা। মা মরহুম মাজেদা বেগম। তাদের পৈতৃক বাড়ি বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চরপাড়া গ্রামে। পিতার রেলওয়েতে চাকুরির সুবাদে আজিজুল হক মুন্না ছাত্র জীবনে লালমনিরহাট চার্চ অব গড জুনিয়র হাইস্কুলে (মিশন স্কুল) ও লালমনিরহাট মডেল হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন। তিনি এই মডেল হাইস্কুল থেকে ১৯৮০ সালে ডিস্টিঙ্কশনসহ এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেন। তিনি পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিও পেয়েছিলেন। তিনি ১৯৮২ সালে ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্সসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
অনার্সে অধ্যয়নকালে আজিজুল হক মুন্না তার ভাইয়ের গড়ে তোলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলি চাইল্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল পদে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। তিনি ১৯৯১ সালে করতোয়া প্রিন্টার্স অ্যান্ড পাবলিকেশন্স প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন এর প্রেসিডেন্ট ও সিইও। তার এই প্রেস ছিল রাজধানীর তরুণ ও মেধাবী বুদ্ধিজীবীদের আড্ডাখানা। এখানে ওই সময় আসিফ নজরুল, সেলিম ওমরাও খান, সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, কবি ও সাংবাদিক মাহমুদ শফিক, আহমেদ মজহার প্রমুখ আড্ডা জমাতেন। উল্লেখ্য, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বাধীন গণআদালতের রায় এই প্রেস থেকেই মুদ্রণ করা হয়।
আজিজুল হক মুন্না দেশের অন্যতম ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল Lyceum International School এর প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল। তিনি ১৯৯১ সালে ঝর্না হককে বিয়ে করেন। তিনি ২০০৫ সালে পারিবারিক কারণে স্ত্রীসহ আমেরিকা প্রবাসী হন। ২০০৭ সালে এই দম্পতির মেয়ে ফাতিমা হক এর জন্ম। ২০১০ সালে জন্ম হয় ছেলে মিশাল হকের এবং ২০১১ সালে মুরসাল হকের। সংগঠনমনস্ক উদ্যমী তরুণ আজিজুল হক মুন্না নিউ ইয়র্কেও বেশ কিছু সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হন। নিউ ইয়র্কে তিনি বাঙালিদের বৃহত্তম সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচিত স্কুল অ্যান্ড এডুকেশন সেক্রেটারি পদে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি এ সংগঠনের জীবন সদস্য। তিনি নিউ ইয়র্কের বাঙালিদের চেম্বার অব কমার্স খ্যাত Jackson Heights Bangladesh Business Association (JBBA) এর নির্বাচিত সাহিত্য সম্পাদক ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি নিউ ইয়র্কের পাইওনিয়র Literary Organization এর সাবেক প্রতিষ্ঠাতা ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি গাঙচিল সাহিত্য আসর, নজরুল একাডেমি ইউএসএ এবং নর্থবেঙ্গল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস প্রেসিডেন্ট- বর্তমানে উপদেষ্টা পদে নিয়োজিত। তিনি বগুড়া ডিস্ট্রিক্ট অ্যাসোসিয়েশন (অধুনা বগুড়া সোসাইটি) এর প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি। তিনি সংস্কৃতিমনস্ক মানুষদের সংগঠন বহুবচন-এর কার্যকরী সদস্য, তিন বাংলা নিউ ইয়র্কের প্রেসিডিয়াম মেম্বার এবং সাহিত্য একাডেমির সদস্য। তিনি কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট, কলাম লেখক ও ম্যাগাজিন সম্পাদক হিসেবেও পরিচিত। শিশু-কিশোর বয়সেই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশ নিতেন আজিজুল হক মুন্না। নটর ডেম কলেজে (১৯৮২ পর্যন্ত) অধ্যয়নকালে ক্যাম্পাস বেশ মাতিয়ে রাখতেন বিভিন্ন ফাংশন করে। ছাত্ররা এক নামেই চিনতেন মুন্নাকে।
আমেরিকায় নিউ ইয়র্কের কুইন্সের বাসিন্দা আজিজুল হক মুন্না এখনো সংস্কৃৃতি অঙ্গনে নিবেদিতপ্রাণ এক ব্যক্তিত্ব। তিনি নজরুল একাডেমি ইউএসএ-এর সাথে সম্পৃক্ত। আমেরিকায় এসে তিনি পড়াশোনা অব্যাহত রাখেন এবং
City University of New York থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এখানে তিনি নিজস্ব ব্যবসার উদ্যোগ নেন।
তিনি অতি সম্প্রতি রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি আমেরিকার আবাসন খাতের উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান Keller Williams Realty Landmark II এর
Sales Person হিসেবে লাইসেন্সের অধিকারী হয়েছেন। উল্লেখ্য, নিজস্ব রিয়েল এস্টেট বিজনেস শুরুর আগে রীতিমতো পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হয় এবং একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করতে হয়। ওখানকার রিয়েল এস্টেট বিজনেস সরাসরি নিউ ইয়র্ক ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট-এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় এবং Sales Person এর লাইসেন্স তারাই দেয়।
আজিজুল হক মুন্না বহুভাষাবিদ। তিনি বাংলা ছাড়াও ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চ ভাষা চমৎকারভাবে রপ্ত করেছেন। তিনি আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতেও জড়িয়েছেন। তিনি Democratic Part ‘র সাথে সম্পৃক্ত।
স্বপ্নদর্শী আজিজুল হক মুন্না দারুণ কর্মঠ ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে প্রচুর সময় দেন। নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশ সোসাইটিতে তিনি পরিচিত মুখ। Keller Williams Realty Landmark-11 এর Sales person. হিসেবে লাইসেন্স প্রাপ্তির পর তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন যে, প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। সারা বিশ্বে এর রয়েছে ১,৯০,০০০ এজেন্ট। কাস্টমার সার্ভিসের দিক থেকে এর অবস্থান #১. প্রতিষ্ঠানটি ৪৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার প্রায় ৪০০০ পরিবারকে সহায়তা হিসেবে দিয়েছে। পেশাক্ষেত্রে নানা অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ আজিজুল হক মুন্নার মতে, শুধু মেধা থাকলেই হবে না, পরিশ্রম ও পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজে সম্পৃক্ত হতে হবে।
বগুড়ার কৃতী সন্তান আজিজুল হক মুন্না নিজের শেকড় সমৃদ্ধ মাতৃভূমি বাংলাদেশকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। তিনি এদেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে বরাবরই আগ্রহী। কোভিড-১৯ অভিঘাত চলাকালে তিনি
আমেরিকায় অসহায় বাঙালি পরিবারকে যেমন সহায়তা করেছেন, তেমনই বাংলাদেশের নিজ এলাকার মানুষদেরও সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করেন। বাংলাদেশ থেকে তার পরিচিত বন্ধু-বান্ধব কিংবা কোনো গুণী ব্যক্তিত্ব নিউ ইয়র্ক গেলে তিনি উদ্যোগী হয়ে তাদের জন্যে আনন্দ আয়োজনের ব্যবস্থা করেন। সাম্প্রতিক সময়ে বগুড়া-৩ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম তালুকদার নিউ ইয়র্ক এলে তিনি বগুড়া সোসাইিট ইউএসএ-এর পক্ষ থেকে তাকে উষ্ণ সংবর্ধনা প্রদান করেন। আজিজুল হক মুন্না বন্ধুপ্রিয় এবং মানুষের উপকারে বরাবরই সিদ্ধহস্ত। তিনি বিড়াল পছন্দ করেন এবং বাসায় খুব চমৎকার পরিবেশে বেশ কিছু বিড়াল পোষেন। আজিজুল হক মুন্না বলতে গেলে একই সঙ্গে অনেক রূপের সমাহার। তিনি একদিকে শিক্ষাবিদ, উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। এই তিনের সমাহারে সমৃদ্ধ আজিজুল হক মুন্না বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটিরও অধিক প্রবাসী মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্জিত রেমিট্যান্স দেশে প্রেরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছেন বলেই দেশ বিভিন্ন মেগা প্রজেক্ট গ্রহণে সক্ষম হচ্ছে; কিন্তু এই রেমিট্যান্স প্রেরণকারীরা নিজ দেশেই নিরাপদ নন। তিনি দেশে প্রবাসীদের যথাযথ নিরাপত্তা প্রদানের এবং তাদের আর্থিক কর্মকাণ্ডে সহায়তার জন্যে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।