ব্রাসিলিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস যথাযথ মর্যাদায় প্রাণবন্ত পরিবেশে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি সম্মান জানিয়ে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালন করে। ঐতিহাসিক এ দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে দূতাবাসে আয়োজিত আলোচনা সভায় রাষ্ট্রদূত ব্রাজিলের প্রথম সারির প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে জাতির পিতার ঐতিহাসিক এ ভাষণের গুরুত্ব তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাংবাদিক ভাষণটির গুরুত্ব অনুধাবন করে আপ্লুত হয়ে পড়েন।
দিবসটি উপলক্ষ্যে দূতাবাসে দিনব্যাপী কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। ৭ই মার্চ সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গনে রাষ্ট্রদূত মিজ সাদিয়া ফয়জুননেসা কর্তৃক জাতীয় সঙ্গীতের সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন শুরু হয়। ৭ মার্চ সন্ধায় ব্রাজিলের প্রথম সারির প্রায় সকল পত্রিকার সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। উল্লেখ্য, এ অনুষ্ঠানে প্রায় ৩০ জন ব্রাজিলীয় সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। ঐতিহাসিক এ দিবস উপলক্ষ্যে দূতাবাসে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপর আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পবিত্র কুরআন থেকে তেলওয়াতের পর দিবসটি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়।
আলোচনা পর্বে রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই আমাদের একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ উপহার দেবার জন্য জাতির পিতাকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করার পাশাপাশি ১৫ আগষ্ট নির্মম হত্যাকান্ডে নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল শহীদ, মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী সকল শহীদ এবং সম্ভ্রমহারা সকল মা বোনদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের ক্রমঅগ্রসরমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিস্তারিত বর্ণনা করে বলেন যে সারা বিশ্বে আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। তিনি উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্বের কথা তিনি তুলে ধরেন। রাষ্ট্রদূত বলেন যে এ সবই আজ সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু আমাদের একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়ে যাবার জন্য। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন যে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বাঙ্গালী জাতিকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। রাষ্ট্রদূত আরো বলেন যে একটি ভাষণ একটি পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারে- পৃথিবীতে এমন নিদের্শন বিরল। এ ঐতিহাসিক ভাষণকে রাষ্ট্রদূত পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম সেরা ভাষণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন যে বিংশ শতাব্দীতে যে কয়েকটি ঘটনা পৃথিবীতে গণতন্ত্রকামী মানুষের মুক্তির পথ সুগম করেছিল, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ তাঁর অন্যতম।
অনুষ্ঠানের শেষ অংশে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ এর ভিডিও প্রাচারিত সমাগত সুধীবৃন্দ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ভাষণের ঝংকার উপস্থিত ব্রাজিলীয় নাগরিকদেরও স্পর্শ করে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ইংরেজি সাব-টাইটেলসহ প্রচারের পাশাপাশি ভিন্ন একটি প্রজেক্টরে ভাষণটির ব্রাজিলীয় পর্তুগীজ অনুবাদও প্রদর্শিত হয়। উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধু-র ৭ই মার্চের ভাষণ ব্রাজিলীয় পর্তুগীজ ভাষায় অনুবাদ করে পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করা হয় এবং উপস্থিত সাংবাদিকদের উপহার হিসেবে তা প্রদান করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী ও মুজিব্বর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে আয়োজিত এ ধরণের মত বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বহু দূরে অবস্থিত দক্ষিণ আমেরিকার জনগণও বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে পারবেন বলে রাষ্ট্রদূত আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্রাজিলীয় জণগণের মাঝে বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।