যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলাদেশ গণহত্যা দিবস ২০২২ উপলক্ষে ব্রাসিলিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস একটি আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার -এর আয়োজন করে। “Rising from the Devastation of 1971 Genocide to a Development Miracle”- শীর্ষক এই ওয়েবিনার-এ বাংলাদেশ, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রথিতযশা ব্যক্তিত্বরা অংশগ্রহণ করেন। ব্রজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত মিজ সাদিয়া ফয়জুননেসা-র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ ওয়েবিনারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) শাব্বির আহমেদ চৌধুরী, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল (অবঃ) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির, বীর প্রতীক , মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননাপ্রাপ্ত মার্কিন আলোকচিত্রশিল্পী এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা লিয়ার লেভিন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আর্জেন্টাইন মানবাধিকার আইনজীবী অধ্যাপক ড. আইরিন ভিক্টোরিয়া মাসিমিনো এবং প্রখ্যাত ব্রাজিলীয় সাংবাদিক ইভান গোদোয় অংশগ্রহণ করেন। ওয়েবিনারের পূর্বে দুতাবাসের মিলনায়তনে দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত্ বাণী পাঠ করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা আমাদের একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ উপহার দেবার জন্য জাতির পিতাকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করার পাশাপাশি ১৫ আগষ্ট নির্মম হত্যাকান্ডে নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল শহীদ, মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী সকল শহীদ এবং সম্ভ্রমহারা সকল মা বোনদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর তিনি ‘Operation Searchlight’ নামক ঘৃণ্য বর্বরতার মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে সংগঠিত হত্যাকান্ডের বর্ণনা করে বাংলাদেশের গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের ক্রমঅগ্রসরমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিস্তারিত বর্ণনা করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্বের কথা তিনি তুলে ধরেন। প্রায় ধ্বংস্প্রাপ্ত একটি দেশকে মাত্র সাড়ে তিন বছরে পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরণীয় অবদানকে তিনি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল সাজ্জাদ জহির তাঁর প্রত্যক্ষ করা ১৯৭১ সালের হত্যাযজ্ঞের বিবরণ দেন। তিনি পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক ১৯৬০-এর দশকে সংগঠিত আরো ২টি হত্যাযজ্ঞের দিকটি তুলে ধরেন। তিনি ২৫ মার্চের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর বর্বরতার স্থির চিত্র ধারণ করে পুরো পৃথিবীর কাছে তা তুলে ধরা সাংবাদিক লিয়ার লেভিনও তাঁর চাক্ষুস অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন। তবে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে না পারায় তাঁর হতাশার কথা তুলে ধরেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মানবাধিকার কর্মী ও আর্জেন্টাইন আইনজীবি আইরিন মাসিমিনো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল গঠনের মাধ্যমে যুদ্ধপরাধীদের বিচার করায় বাংলাদেশ সরকারকে সাধুবাদ জানান। তিনি জানান আর্জেন্টিনাসহ পৃথিবীর বহু দেশ এ ধরণের গণহত্যার বিচার করতে পারেনি। ব্রাজিলীয় সাংবাদিক ইভান গোদয় তাঁর নিজ চোখে দেখা বাংলাদেশের উন্নয়নের বর্ণনা করে বলেন যে ৯ লক্ষ মানুষ বাস করা ব্রাজিলীয় রাজ্য আমাপার সমান একটি দেশ ১৭ কোটি মানুষ নিয়েও যে অভুতপূর্ব গতিতে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যেতে পারে তা বাংলাদেশকে নিজ চোখে না দেখলে তিনি বিশ্বাস করতেন না। একজন মানবাতাবাদী নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে দক্ষিণ আমেরিকাবাসীর নিকট পরিচিত করার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব শাব্বির আহমেদ চৌধুরী বলেন যে বিভিন্ন গবেষণায় এটা প্রমাণিত যে ২৫ মার্চের বর্বর হত্যাকান্ড এবং পরবর্তীতে ১৪ ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ড একটি পরিকল্পিত গণহত্যা যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য আমাদের কাজ করে যেতে হবে। তিনি আরো বলেন যে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানীরা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। তিনি দৃঢ় কন্ঠে বলেন যে পৃথিবীর যাকোন প্রান্তের যে কোন গণহত্যার বিপক্ষে বাংলাদেশ অবস্থান নিবে।
সাদিয়া ফয়জুননেসা-র সঞ্চালনায় দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু কর্ণার থেকে প্রচারিত এই ওয়েবিনারটি দূতাবাসের YouTube চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। ব্রাজিলের কুরিচিবা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষে অনুষ্ঠানটি সরাসরি উপভোগ করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করে যাওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।