গুগল ম্যাপ এখন সবারই পরিচিত। জানা-অজানা যে গন্তব্যে যাওয়াই হোক না কেন, দৈনন্দিন জীবনে যাতায়াত ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছে এই গুগল ম্যাপ।
এই প্রযুক্তি শুধু গন্তব্যের পথই চিনিয়ে দেয় না, সরাসরি দেখিয়ে দেয় কোন পথে কতটা বা যানজট রয়েছে। গুগল ম্যাপে কোনও রাস্তা লাল দেখানোর মানেই সেই রাস্তায় যানবাহন চলাচলের গতি অত্যন্ত ধীর। কিন্তু কীভাবে এতো হাজার হাজার রাস্তার যানবাহনের গতিবিধিতে সরাসরি নজর রাখে গুগল?২০০৯ সাল পর্যন্ত সংস্থাটি বিভিন্ন রাস্তার উপর থাকা স্থায়ী প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তথ্য সংগ্রহ করত। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উপর গাড়ির গতি মাপার যন্ত্র থাকে। পাশাপাশি থাকে ক্যামেরাও। সেই সময় এই ধরনের যন্ত্রের মাধ্যমে যানবাহনের গতিবিধির হার পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন রাস্তায় যানজটের তথ্য দিত সংস্থাটি। কিন্তু এই পদ্ধতিতে বেশ কয়েকটি অসুবিধা ছিল। একে তো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ছাড়া অধিকাংশ সড়কেই এই ধরনের গতি মাপার যন্ত্র ও ক্যামেরা ছিল না, উপরন্তু এই ভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে সময়ও লাগত বেশি।
২০০৯ ও ২০১৩ সালে অ্যালফাবেট বা গুগল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এমন কিছু আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়, যা এক লাফে বদলে দেয় গোটা ব্যবস্থাটি। রাস্তার উপর থাকা যন্ত্রের বদলে স্মার্ট ফোন ও যানবাহনের থেকে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ শুরু করে তারা। কাজে লাগানো হয় জিপিএস পদ্ধতি। এখন গুগল ম্যাপসহ অধিকাংশ অ্যাপ ব্যবহার করতে চাইলে চালু করতে হয় ফোনের ‘লোকেশন’। যখন আমরা নিজেদের অবস্থান বা লোকেশন চালু করি, তখন সেই তথ্য সরাসরি চলে যায় গুগলের সার্ভারে। একইভাবে স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারী অসংখ্য মানুষের অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য প্রতিনিয়ত জমা হতে থাকে গুগলের কাছে।
পাশাপাশি এখন অধিকাংশ গাড়িতেও এই ব্যবস্থা থাকে। সংস্থাটি প্রযুক্তির মাধ্যমে খতিয়ে দেখে এই সব তথ্য। যদি দেখা যায়, একটি রাস্তার উপর যত মানুষ যাতায়াত করছেন তাদের সকলের অবস্থানই দীর্ঘক্ষণ বদল হচ্ছে না অথবা ধীর গতিতে বদল হচ্ছে, তখন প্রযুক্তি জানিয়ে দেয় যে সংশ্লিষ্ট রাস্তায় যান চলাচলের গতিবেগ খুবই কম। ফলে এই সময় গুগল ম্যাপে রাস্তার রং হয়ে যায় লাল।
তবে শুধু এই মূল পদ্ধতিটিই নয়, এটি ছাড়াও আরও হরেক রকমের পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রযুক্তিকে আরও নিপুণ করার চেষ্টা করে চলেছে গুগল। শোনা যাচ্ছে, ভবিষ্যতে অসংখ্য ক্ষুদ্রাকৃতি উপগ্রহ মহাকাশে পাঠিয়ে ম্যাপের তথ্যকে আরও নিখুঁত করতে চায় সংস্থাটি। তথ্যসূত্র: বিজনেস ইনসাইডার, সায়েন্সএবিসি, লাইভমিন্ট