• রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন

সকল সঙ্কট ও দলীয় সংকীর্ণ মানসিকতা কাটিয়ে মানবিক একটি রাষ্ট্র হবে বাংলাদেশ

Reporter Name / ৪ Time View
Update : শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

হওয়ার কথা ছিল চিকিৎসক। ভর্তিও হয়েছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে। কিন্তু উচ্চতর শিক্ষার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের বৃত্তি পাওয়ায় আর দেশে থাকেননি। একুশ বছর বয়সেই চলে আসেন আমেরিকায়। ইউনিভার্সিটি অব পেনসেলভেনিয়ায় ‘রসায়ন’ বিষয়ে পিএইচডি করেন ১৯৯০ সালে। জেফারসন ইউনিভার্সিটি থেকে ফেলোশিপ করেছেন মলিক্যুলার জেনেটিক্স তথা চিকিৎসা বিজ্ঞানে। একজন রিসার্চ সায়েন্টিস্ট হিসেবে ব্যাপক সুনাম তাঁর। এর চাইতে অধিক সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করেছেন আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান এবং একের পর এক নির্বাচনে জয়ী হয়ে। এই কৃতী মানুষটি হলেন বাংলাদেশের ময়মনসিংহের কন্যা ড. নীনা আহমেদ, পিএইচডি। তিনি বর্তমানে ফিলাডেলফিয়া সিটি কাউন্সিলের মেম্বার।

ড. নীনা আহমেদ ২০২০ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়নে পেনসেলভেনিয়ায় ‘অডিটর জেনারেল’ পদে পাঁচ লাখ ভোটে জিতেছেন। তাঁর এই বিজয় ছিল বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী সকলের। আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে ইতিহাস সৃষ্টি করে ‘অডিটর জেনারেল’ পদে প্রথম বাংলাদেশি নারীর বিজয় রেকর্ড গড়েছেন তিনি। আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে দীর্ঘ ২৩৭ বছরের ইতিহাসে তিনিই প্রথম একজন বাংলাদেশি ও অশ্বেতাঙ্গ এই পদে নির্বাচিত হবার সৌভাগ্যের অধিকারী। এর আগে কখনো শ্বেতাঙ্গ প্রার্থীকে হারানো যায়নি। ডেমোক্রেটিক প্রাইমারির এই ভোট অনুষ্ঠিত হয় ২ জুন। ড. নীনার প্রাপ্ত ভোট প্রায় ৪,৮৫,০০০। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে তিনি ৮০ হাজার ভোট বেশি পেয়েছেন।
পেনসেলভেনিয়ার রাজধানী ফিলাডেলফিয়ায় বসবাসকারী ড. নীনা আহমেদ সমাজমনস্ক নারী ব্যক্তিত্ব। তিনি ২০২৩ সালে ফিলাডেলফিয়া সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে মেম্বার পদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। ড. নীনা ২০১৪ সালে বারাক ওবামা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এশিয়া-আমেরিকা বিষয়ক কমিশনের উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। প্যাসিফিক আইল্যান্ডও এই কমিশনের আওতাভুক্ত ছিল। ড. নীনা আহমেদ ফিলাডেলফিয়া সিটির ডেপুটি মেয়র হন ২০১৫ সালে। রাজনীতিতে সক্রিয় ড. এই নারী ব্যক্তিত্ব তাঁর রাজনৈতিক কার্যক্রমের বিস্তৃতি ঘটান। ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা হিসেবে অন্যান্য রাজ্যেও তিনি সক্রিয়ভাবে কাজ করেন। ২০১৮ সালে তিনি রাজ্যের লে. গভর্নর পদে প্রার্থী হন। তাঁর জয় নিশ্চিত জেনে প্রতিপক্ষ প্রার্থী আদালতের মাধ্যমে নির্বাচনী এলাকা পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়। নীনা আহমেদ হয়ে যান এলাকাবিহীন প্রার্থী। এতে করে তাঁকে পরাজিত হতে হয়। কিন্তু রাজনীতিতে অদম্য এই বাংলাদেশি আমেরিকান তাঁর কার্যক্রমকে আরও জোরদার করেন— ফলে ২০২০ সালের ওই নির্বাচনের মাধ্যমে আমেরিকায় বাংলাদেশিদের অবিসম্বাদিত নেতা হবার সৌভাগ্য লাভ করেছেন।
বাংলাদেশি আমেরিকান ড. নীনা আহমেদের স্বামী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আহসান নসরুল্লাহ। তিনি ফিলাডেলফিয়ার একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। স্বামী ব্যবসায় সফল হলে ড. নীনা আহমেদ চাকরি ছেড়ে দিয়ে পূর্ণোদ্যমে রাজনীতিতে অংশ নেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ২০২০ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্বাচনী মোর্চায় কাজ করেছেন। পেশাজীবী হিসেবে তিনি ইউলস আই হসপিটাল ও থমাস জেফারসন মেডিকেল কলেজে বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করেছেন।
ড. নীনা আহমেদ শুধু রাজনীতিবিদ কিংবা পেশাজীবী হিসেবে ওষুধ শিল্পের বিজ্ঞানীই নন, তিনি একজন গবেষকও। মার্কিন জীবনের কল্যাণ চিন্তার ওপর অনেক গবেষণা-কর্ম রয়েছে তাঁর। ব্যক্তিগতভাবে বাংলা ভাষার সাহিত্যসহ অন্যান্য ভাষার সাহিত্যের প্রতিও রয়েছে তাঁর গভীর অনুরাগ। বাংলাদেশে অবস্থানকালে মেধাবী ও সুদর্শনা নীনা আহমেদ লাক্স সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ‘রানার্স আপ’ হয়েছিলেন। তিনি রাজনৈতিক জীবনের ব্যস্ততার মধ্যেও সৌন্দর্যচর্চা করেন। তিনি মনে করেন, সৌন্দর্য সচেতনতা মানুষকে কাজের অনুপ্রেরণা এনে দেয়।
ড. নীনা আহমেদ ব্যক্তিগতভাবে নিরহঙ্কারী ও বন্ধুবৎসল। বাংলাদেশি কমিউনিটিতে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়। কারণ, তিনি সবসময় মানুষের কল্যাণ চিন্তা করেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও বাংলাদেশিদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনে অংশ নেন এবং বাঙালি সংস্কৃতিকে গুরুত্বপূর্ণভাবে উপস্থাপন করেন। নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের সব সময়েই স্মরণ করিয়ে দেন, নিজেদের শিকড়ের কথা- তাঁর প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের কথা।
বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন ধারা তাঁকে আপ্লুত করে। তিনি গর্ব অনুভব করেন। তিনি আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, সকল সঙ্কট ও দলীয় সংকীর্ণ মানসিকতা কাটিয়ে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে মানবিক একটি রাষ্ট্র। এখানে আইন ও বিচারিক শাসনের উন্নয়ন ঘটবে।

তিনি মনে করেন, পেনসেলভেনিয়ার মানুষজন যে পরিবর্তন চায়- এই নির্বাচন তার প্রমাণ। তিনি এই অঙ্গরাজ্যের অর্থনীতি, পুলিশি সেবা ও বিচার ব্যবস্থা পুনর্গঠনের আশ্বাস প্রদানের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকেননি- এসবের বাস্তবায়নেও ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। বাংলাদেশি আমেরিকান এই নারী ব্যক্তিত্ব বর্ণবাদ-বিরোধী নেতা হিসেবেও সমাদৃত।
ড. নীনা আহমেদ আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে নিজের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করতে সক্ষম হবেন- এ প্রত্যাশা সবার।অর্থকণ্ঠ প্রতিবেদক


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category