ঢাকার নিউমার্কেটে দুই দিন ধরে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে যে সংঘর্ষের ঘটনা আমরা দেখছি তাতে হকারদের ভূমিকা বলাই বাহুল্য। পুলিশ হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে। হকারদের লাইনম্যান ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে তাদের বসার স্থান নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে পুলিশ ও লাইনম্যান হকারদের পক্ষে।
সম্প্রতি নিউমার্কেট দুই নাম্বার গেটের পাশে একটি দোকানের গেটের সামনে দুইজন হকার বসেন তাদের মালপত্র নিয়ে। ফলে ওই দোকানে ক্রেতাদের যাতায়াতে সমস্যা সৃষ্টি হয়। এরপর দোকান মালিক হকারদের মালপত্র সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু হকাররা মালপত্র না সরিয়ে কয়েকজন লাইনম্যান ও কথিত নেতা নিয়ে হাজির হন দোকান মালিকের সামনে। দোকান মালিক তাদের দেখে চুপ হয়ে যায়। এরপর থেকে হকাররা ইচ্ছামতো কেনাবেচা করছেন। আর ওই দোকান মালিক চুপচাপ রয়ে যায়। এভাবে শতশত দোকান মালিক নিউমার্কেটের হকারদের কাছে জিম্মি। এ হকারদের উচ্ছেদের জন্য সিটি করপোরেশনও একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েছে। এরপর উচ্ছেদকারীরাই উচ্ছেদ হয়ে গেছেন। হকাররা রয়ে গেছেন।
শুধু দোকান মালিক নয় নিউমার্কেটের হকারদের কাছে ক্রেতারাও জিম্মি। গত সোমবার রাতে ঢাকা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এই হকারদের তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এরপর থেমে থেমে সংঘর্ষ দেখছি। পরিস্থিতি থমথমে।
ঢাকা কলেজের শিক্ষকরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ছাত্রদের চাপে মধ্যে রেখেছেন। সংঘর্ষে ঢাকা কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপরও হামলা করেছে হকাররা। ঢাকা কলেজ শিক্ষক সমিতির একজন নেতার ভাষায়, মঙ্গলবার দুপুরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য শিক্ষকরা দোকান মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে রাস্তায় আসেন। দোকান মালিক সমিতির নেতারাও রাস্তায় এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আশ্বাস দিলেও আসেনি। পরে শিক্ষকরা হামলার শিকার হন। পুলিশ সদস্যরাও শিক্ষকদের ডাকে সাড়া দেয়নি। কিন্তু দোকান মালিক সমিতির নেতারা হকারদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও তাদের পক্ষ নিয়ে বুধবার সংবাদ সম্মেলন করেছে। নিউমার্কেটন দোকান মালিক সমিতির সভাপতি শিগগিরই দোকান দোকান খোলার কথা জানিয়েছেন।
এ সংঘর্ষের ঘটনার ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যেমন হামলার শিকার হয়েছেন। তেমনি ঈদ বাজারে ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এছাড়া গত দুই বছর করোনা মহামারীর কারণে ব্যবসা হয়নি তাদের। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকায় বিব্রত হচ্ছে সরকার। সার্বিক পরিস্থির বিবেচনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, পুলিশ প্রশাসন ও হকারদের নিয়ে দ্রুত সুষ্ঠু সমাধান প্রয়োজন। এমন ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না হয় এজন্য অশিক্ষিত হকারদের ক্রেতাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহারের জন্য মৌলিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে দোকান মালিক নেতাদের ভালো সম্পর্ক রাখতে হবে। যাতে যে কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়।
ঢাকা কলেজের একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে প্রায়শই দেখেছি একজন ক্রেতা যখন বলেন ভাই শার্টটার দাম কত? এরপরই হকাররা শুরু করেন নেন ভাই। অনেক ভালো কাপড়। এই নেন বোতাম ছাড়িয়ে দিলাম। গায়ে দিয়ে দেখেন। দাম বলেন। পড়েন। দেখেন, একদম ফিটিং হবে। সবই ঠিক আছে। দামটা বলেন না? ভাই, দামাদামি করবো না। একটা দাম বলে দেবো যদি ভালো লাগে নিবেন না হয় রেখে যাবেন। জী বলুন। একদাম পড়বে ১৫০০ টাকা। বলেন কী? এই শার্ট ১৫০০? কেন ভাই? অসম্ভব কি হলো? না ভাই লাগবে না। আরে ভাই শুনেন। কত দিবেন? না ভাই, আমার এতোটাকা বাজেট নাই। ওই মিয়া ফাজলামো করেন? বাজেট নাই তো মার্কেটে আসছেন কেন?
এভাবেই দিনের পর দিন ক্রেতাদের জিম্মি করে ব্যবসা করছেন নিউমার্কেটের হকাররা। সাধারণ মানুষ লজ্জা ভয়ে প্রতিবাদ করে না। যারা অন্যায় অনিয়ম মানতে পারে না তারা প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। আর এই প্রতিবাদী শ্রেণীটির নাম ‘ছাত্র’।
দেলওয়ার হোসেন, সাংবাদিক ও ঢাকা কলেজের সাবেক ছাত্র