• রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন

ডলারের দাম লাগামহীন, ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ

অর্থকণ্ঠ ডেস্ক / ৯৩ Time View
Update : সোমবার, ৬ জুন, ২০২২

দেশে ইউএস ডলারের দাম এখন লাগামহীন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিষয়টি উদ্বেগজনক।
অর্থ পাচার বাড়ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি প্রয়োজন।
মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য বলছে, খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে প্রতি ইউএস ডলারের দাম এখন ৯১ টাকা ৮০ পয়সা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, প্রতি ডলারের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্য ৮৬ টাকা ২০ পয়সা। যদিও সংকট সামাল দিতে প্রায় দিনই ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্র্রীয় ব্যাংক।


এর মাঝে দেখা গেছে, ডলারের দাম ৮৭ টাকা ১১ পয়সা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাস্তবতার পরিপ্র্রেক্ষিতে ডলারের দাম বাড়ছে। সম্প্রতি ঋণপত্র বা এলসির চাহিদা অনেক বেড়েছে। দেশে প্রচুর পণ্য আমদানি হচ্ছে। এ কারণে ডলারের ওপর চাপও বাড়ছে। তবে আমরা সচেতন রয়েছি। ডলারের দাম সহনীয় রাখতে কেন্দ্র্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্র্রীয় ব্যাংক একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, খাদ্যপণ্য বা প্রয়োজনীয় পণ্যের বাইরে কোনো বিলাসী দ্র্রব্য আমদানি করতে হলে ২৫ শতাংশ মার্জিন দিতে হবে। এতে করে ডলারের ওপর বাড়তি চাপ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এ ছাড়া ঈদ উপলক্ষে রেমিট্যান্স বাড়বে। পাশাপাশি রপ্তানিও কিছুটা বাড়বে বলে আমরা আশা করছি।’ এর ফলে দ্রুত ডলারের দাম কমে আসবে বলে মনে করেন কেন্দ্র্রীয় ব্যাংকের এই দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।
তবে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বিষয়টি উদ্বেগজনক। নতুন করে দেশ থেকে অর্থ পাচার বাড়ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি প্রয়োজন। ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ব্যবসায়ীদের আমদানি খরচ বাড়বে। যার প্রভাব নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের ওপর পড়তে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে পাওয়া পরিসংখ্যান বলছে, চলতি এপ্রিলের শুরু থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতি ইউএস ডলারের ক্রয়-বিক্রয় মূল্য ৮৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৮০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে গত ১২ এপ্রিল প্রতি ডলারের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্য ছিল ৮৬ টাকা ১৯ পয়সা। ফলে এপ্রিলে এখন পর্যন্ত ডলারের ক্রয়-বিক্রয় মূল্য ১ পয়সার ব্যবধান বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে প্রকাশ পেলেও বাস্তবে এ চিত্র ভিন্ন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সাধারণত ডলারের দাম বাড়লে রেমিটার ও রপ্তানিকারকরা লাভবান হন। আর ক্ষতিগ্রস্ত হন আমদানিকারক ও সাধারণ মানুষ। কারণ ডলারের দাম বাড়লে পণ্যমূল্যও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। রপ্তানি আয়ে ধীরগতি ও রেমিট্যান্স প্রবাহের নিম্নমুখিতার মধ্যে আমদানিতে গতি আসায় অনেক ব্যাংকে দেখা দিয়েছে ডলারের সংকট। ফলে কিছুদিন ধরে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে ডলারের দাম।
জানা গেছে, আন্ত:ব্যাংক মুদ্র্রাবাজারে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে খোলাবাজারে চড়েছে ডলারের দাম। খোলাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে এখন খরচ হচ্ছে ৯১ টাকা ৮০ পয়সা। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে একই জায়গায় স্থির ছিল ডলারের দর। গত ৫ বছরের আগস্ট থেকে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে। এখন প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে দাম।


জানা গেছে, ডলারের দাম মূলত দেশের আমদানি চাহিদা ও মুদ্র্রাটির সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। হঠাৎ করে পণ্য আমদানি অনেক বেড়েছে। আবার অনেক দেশের সীমান্ত খুলে যাচ্ছে। তাই ভ্রমণ, চিকিৎসা ও শিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া বেড়ে গেছে। আবার করোনার কারণে বিভিন্ন আইনকানুন শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ডলারে খরচ করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মিলিয়ে ডলারের চাহিদা বেড়েছে, তাই দামও বাড়ছে।
মানি চেঞ্জার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, করোনাকালে বিদেশি পর্যটক ও যাত্রীদের যাতায়াত কমে যাওয়ায় খোলাবাজারে নগদ ডলারের সরবরাহ দীর্ঘদিন ধরেই কম। এখন লকডাউন উঠে যাওয়ায় বিদেশি পর্যটক ও যাত্রীদের আসা-যাওয়া কিছুুটা শুরু হয়েছে। আবার চিকিৎসাসহ জরুরি প্রয়োজনে অনেকেই দেশের বাইরে যাওয়া শুরু করেছেন। তারা খোলাবাজার থেকেই নগদ ডলার সংগ্রহ করছেন। এতে খোলাবাজারে ব্যাপক চড়েছে ডলারের দাম। ২১ এপ্রিল খোলাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হয় ৯১ টাকা ৮০ পয়সা। এর মানে এখন খোলাবাজারের সঙ্গে আন্ত:ব্যাংক মুদ্র্র্রাবাজারের দামের পার্থক্য ৫ টাকা ৬০ পয়সা। স্বাভাবিক সময়ে এই পার্থক্য থাকে দেড় থেকে দুই টাকার মধ্যে। মূলত সরবরাহের চেয়ে চাহিদা বেশি থাকায় খোলাবাজারে ডলারের দাম বেশি বাড়ছে। জানা গেছে, গত বছর বেশ কয়েক মাস এক ডলার ৮৪ থেকে ৮৫ টাকা ছিল। তা এখন ৯২ থেকে ৯৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নববর্ষের ছুুটির আগে ১২ এপ্রিল মঙ্গলবার ও ১৩ এপ্রিল বুধবার আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে এক ডলার কিনতে খরচ হয় ৯১ দশমিক ৫০ থেকে ৯২ টাকায়। আর খোলাবাজারে খরচ হয় ডলার প্রতি ৯১ টাকা ৮০ পয়সা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের মার্চ মাসে ডলারের দাম বেড়েছে মাত্র ২০ পয়সা। ব্যাংক খাতে ডলারের দাম ৮৬ থেকে বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা হয়। আর এই সময়ে খোলাবাজারে ডলারের দাম উঠেছে প্রায় ৯২ টাকা পর্যন্ত।অর্থকণ্ঠ ডেস্ক


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category