প্রেসিডেন্ট
আমেরিকা-বাংলাদেশ
চেম্বার অব কমার্স
প্রেসিডেন্ট
জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস
এসোসিয়েশন অব নিউ ইয়র্ক (জেবিবিএ)
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: এনামুল হক এনাম
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিজেদের মেধা, সাংগঠনিক কার্যক্রম ও ঐক্যের মধ্যদিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাংলাদেশ গড়ে তুলেছেন। তারা সেখানে নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ কর্মের অবস্থানকেও দৃঢ় করেছেন। বিশ্বের ক্ষমতাধর উন্নত রাষ্ট্র আমেরিকাতেও এখন বাংলাদেশিদের জয়-জয়কার। নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসাকেন্দ্রেও বাংলাদেশিদের অবস্থান ও প্রভাব লক্ষণীয়।
সম্প্রতি জ্যাকসন হাইটসে বাংলাদেশি উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের সংগঠন জেবিবিএ’র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। নির্বাচনে একাধিক প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। অত্যন্ত সুষ্ঠুভোটের মাধ্যমে বিজয়ী হয়েছে ‘গিয়াস-তারেক’ পরিষদ। এই পরিষদের নবনির্বাচিত সভাপতি গিয়াস আহমেদ একজন গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশি আমেরিকান। তিনি আমেরিকা বাংলাদেশ চেম্বা অব কমার্সের সভাপতি এবং উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের অতি পরিচিত মুখ ও মূলধারার রাজনীতিবিদ। তিনি বরাবরই বলে থাকেন, ‘রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও জাতীয় স্বার্থে আমরা ঐক্যবদ্ধ’। চিন্তা-চেতনায় অগ্রসরমান এই উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী তাঁর চেম্বারের মাধ্যমে বাংলাদেশি আমেরিকান উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসেন। তিনি বিশ্বাস করেন, প্রবাসে বাংলাদেশিদের ঐক্য একটা বড়ো শক্তি, বড়ো সাহস। নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে তিনি জানিয়েছিলেন, গিয়াস-তারেক পরিষদের মূল পরিচিতি হচ্ছে- ‘চেতনায় বাংলাদেশ, হৃদয়ে জ্যাকসন হাইটস’। তার এই দর্শন-কেন্দ্রিক পরিচিতি ভোটারদের মনে বেশ দাগ কাটে। তারা এই পরিষদকেই বেছে নিয়েছেন- এ সুবাদে নির্বাচিত হয়েছে গিয়াস আহমেদের প্যানেল।
গত ৯ জানুয়ারি Jackson Heights Bangladesh Association of NY (Jbba) এর নির্বাচন ২০২২-এ নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট গিয়াস আহমেদ জানিয়েছেন, তারা তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার যথাযথভাবে পূরণে সচেষ্ট হবেন। ‘চেতনায় বাংলাদেশ, হৃদয়ে জ্যাকসন হাইটস’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে তিনি নির্বাচনী মাঠে নেমেছিলেন। ভোটাররা তাঁর উদ্যমী মনোভাব এবং সাংগঠনিক দক্ষতার কথা জেনেই গিয়াস-তারেক প্যানেলকে বিপুলভোটে জয়ী করেছেন।
উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন যাবত জ্যাকসন হাইটস বিজনেস এসোসিয়েশনের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছিল; ফলে ব্যবসায়ীরা তাদের নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতার অভাবসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন। এছাড়াও হোমলেসদের উৎপাতসহ বিভিন্ন দুষ্কৃতকারীর আক্রমণে ব্যবসায়ীরা বিভিন্নভাবে লাঞ্চনার শিকার হয়ে আসছেন। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট গিয়াস আহমেদ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন- এসব সমস্যার সমাধানে তিনি দ্রুতই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। লক্ষণীয় বিষয়-এই কমিটির ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও সম্পূর্ণ নিরাপদ জ্যাকসন হাইটস গঠনের লক্ষ্যে দুইজন নিরাপত্তাকর্মী ও একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ প্রদান। জ্যাকসন হাইটসের কোনো জেবিবিএ সদস্যকে পুলিশি হয়রানি থেকে রক্ষার জন্যে দাপ্তরিক লিয়াজোঁ রক্ষা করে ব্যবসায়িক সুবিধা নিশ্চিত করা।
উল্লেখ্য, জেবিবিএ’র কোনো সদস্যকে গ্রেফতারের পূর্বে অবশ্যই এসংগঠনের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারিকে জানাতে হবে। জেবিবিএ’র সাথে লোকাল কংগ্রেস অফিস, সিটি কাউন্সিল এবং সিনেট অফিসের সাথে লিয়াজোঁ রক্ষা করার মধ্যদিয়ে সদস্যদের ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা, সকল ব্যবসায়ীকে নিয়ে একটি শক্তিশালী জেবিবিএ প্রতিষ্ঠা করে সংগঠনের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা এবং সদস্যদের মেম্বারশিপ আইডি ও ডিসকাউন্ট কার্ড প্রদান করা। বছরে শুধু একটি নয়- বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা বাড়ানোর লক্ষে একাধিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা। জেবিবিএ’র একটি নির্দিষ্ট অফিস প্রতিষ্ঠা করা যা সংগঠনের সদস্যদের অনেক দিনের স্বপ্ন। সিটি স্যানিটেশন ডিপার্টমেন্টের সাথে যোগাযোগ করে গার্বেজ ক্যান স্থাপনের মাধ্যমে বর্জ্য নিরসন নিশ্চিত করা। যে কোনো কারণে জেবিবিএ সদস্যদেরকে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারির অগোচরে গ্রেপ্তার এবং হয়রানি না করার জন্যে পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সাথে সমন্বয় করা। জুমআর নামাজের সময় গাড়ির ডাবল পার্কিংয়ের জন্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ঈদের নামাজের জন্যে ‘জামাত’ অনুষ্ঠানের সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। জেবিবিএ’র কোনো সদস্যের মৃত্যুতে তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করা। জেবিবিএকে আমেরিকা বাংলাদেশ চেম্বারসহ বিভিন্ন চেম্বার ও সংস্থার সাথে সম্পৃক্ত করে সদস্যদের বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত করা। জ্যাকসন হাইটসে প্রতিবছর কয়েকটি পথ মেলা ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান হতো, যা স্থবির হয়ে পড়েছে- তা আবার চালুর উদ্যোগ নেয়া।
এছাড়া কোভিড মহামারির কারণে এখানকার বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শিকার হলেও সংগঠনের যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার কর্তৃক প্রদত্ত প্রণোদনা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা বঞ্চিত হয়েনে।
এ ব্যাপারে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট গিয়াস আহমেদ স্পষ্ট বলেছেন, এটা আমাদের প্রাপ্য। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই প্রণোদনা সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেবিবিএ অলাভজনক একটি সংগঠন। এই সংগঠন ফেডারেল ও স্টেট থেকে বিভিন্ন বরাদ্দ পাওয়ার অধিকার রাখে। কিন্তু শক্তিশালী কমিটি না থাকায় তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেবিবিএ। তিনি বলেন, এই অধিকার আদায়ে বর্তমান কমিটি যথাযোগ্য ভূমিকা রাখবে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছেন।
উল্লেখ্য, গিয়াস আহমেদ ২০০২ সালে প্রথম নিউ ইয়র্ক থেকে সিনেটর হিসেবে নির্বাচন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশ কংগ্রেশনাল ফোরাম- ককাসের অন্যতম উদ্যোক্তা। এই ফোরামে ৪০ জন কংগ্রেসম্যান আছেন যারা কংগ্রেসে বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলেন। এই ফোরামের মাধ্যমে এবং কংগ্রেসম্যান জোসেফ ক্রাউলীর প্রচেষ্টায় তিনি বাংলাদেশের চট্টগ্রামে Asian Women’s University প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন। বাংলাদেশে Amcan প্রতিষ্ঠারও প্রধান উদ্যোক্তা তিনি। তিনি একাধিকবার বাংলাদেশে কংগ্রেশনাল প্রতিনিধি হিসেবে তার মাতৃভূমি বাংলাদেশ ভ্রমণ এবং এখানকার গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো কংগ্রেসম্যানদের সামনে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছেন।
বাংলাদেশে আমেরিকান ভিসার বিভিন্ন হয়রানি বন্ধে তিনি কংগ্রেস-ককাসের মাধ্যমে অনেক বাংলাদেশির ভিসা জটিলতা সমাধান করেছেন। আমেরিকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তিনি বাংলা ভাষায় কথা বলে নিজ দেশের ভাষার মাহাত্ম্য তুলে ধরেন। ঈদ আনন্দের দিন তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যেসব বাংলাদেশি কাজ করেন তাদের জন্যে উৎসব বোনাস প্রাপ্তির বিল পাস করার ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়ে থাকেন।
গিয়াস আহমেদ আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিবিদদের সাথে বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করে চলেছেন। এ সকল কারণে নিউ ইয়র্কে এই রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশি নেতৃবৃন্দ এবং কমিউনিটির মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।
উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের গতিশীল নেতা ও জেবিবিএ’র নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট গিয়াস আহমেদ অর্থকন্ঠের সাথে আলাপকালে বলেন, আমরা বাংলাদেশি আমেরিকান উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা এদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছি। এদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখার ক্ষেত্রে আমাদের অবদান অনেক। সে হিসেবে আমেরিকান সরকার কর্তৃক প্রদত্ত প্রণোদনা প্রাপ্তি আমাদের অধিকার। কিন্তু আমাদের সংগঠনের নেতৃত্ব সেভাবে শক্তিশালী না হওয়ায় এবং তারা যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়ায় তা থেকে আমাদের ব্যবসায়ীরা বঞ্চিত হয়েছেন। তিনি বলেন, আমি আমার সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবো। তিনি আরও বলেন, মূলধারার আমেরিকান রাজনীতিবিদদের সাথে আমাদের সম্পর্ক যতো জোরদার হবে, ততোই আমরা অধিক লাভবান হবো।
গিয়াস আহমেদ বলেন, এখানে আমাদের একটাই পরিচিতি তা হচ্ছে- আমরা বাংলাদেশি আমেরিকান। আমরা ভিন্ন ভিন্ন দল করতে পারি, সমর্থন করতে পারি; কিন্তু নিজেদের একতা ধরে রাখা এবং জাতীয় স্বার্থে আমরা সবাই এক। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারেও আমাদের অংশগ্রহণ রয়েছে। অনেক বাংলাদেশি বর্তমানে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে ভূমিকা রাখছেন। মেধাবী সন্তানেরা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকারি কার্যক্রমেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান নিশ্চিত করে চলেছেন। সুতরাং এখন আমরা আর উপেক্ষিত নই। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমরা নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে দেয়া প্রতিটি অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করবো ইনশাআল্লাহ।