বিশ্বজুড়ে জেঁকে বসেছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। বেড়ে গেছে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর সংকট প্রকট হয়। এরপর রাশিয়ার ওপর আসে পশ্চিমাদের একের পর এক কঠোর নিষেধাজ্ঞা। ফলে সংকট আরও বেড়ে যায়। এদিকে পশ্চিমা কিছু গণমাধ্যমে দেখানো হয়েছে চীনের কঠোর করোনা বিধিনিষেধের কারণে বিশ্বজুড়ে পণ্যের দাম বেড়েছে।
সম্প্রতি ভয়েস অব আমেরিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের চলমান লকডাউনের ফলে আমদানিকারকদের চাহিদা কমেছে। এতে বিভিন্ন দেশে পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী।
তবে এটা সত্য যে, বৈশ্বিক অর্থনীতি উচ্চ মূল্যস্ফীতির যুগে প্রবেশ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের শ্র্রম বিভাগ জানিয়েছে মার্চে দেশটির মূল্যস্ফীতি বেড়ে আট দশমিক পাঁচ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ১৯৮১ সালের পর সর্বোচ্চ। যুক্তরাজ্যে একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় সাত শতাংশে, যা গত তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে এই হার ছিল ছয় দশমিক দুই শতাংশ। যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান বিভাগ এ তথ্য জানায়।
এদিকে ইউরোজোনে মার্চে মূল্যস্ফীতি বেড়ে সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ হয়েছে, যা ইউরোজোন প্রতিষ্ঠার পর সর্বোচ্চ। ৮ এপ্রিল সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগে রাশিয়ার মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ দশমিক ৪৯ শতাংশে, ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারির পর সর্বোচ্চ।
বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির এমন উচ্চ হারের কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয়কে দেখা হচ্ছে। তবে করোনা মহামারি হচ্ছে এর মধ্যে অন্যতম কারণ। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তাছাড়া মস্কোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা সংকটকে ত্বরান্বিত করেছে।
অন্যদিকে কঠোর বিধিনিষেধ ও করোনা প্রতিরোধে জিরো কোভিড নীতি অবলম্বন করা সত্ত্বেও সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে চীন। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি দেখছে দেশটি। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের বাণিজ্য বেড়েছে ১০ দশমিক সাত শতাংশ।
এমন পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবিলায় নিজেদের ব্যর্থতা ও রাশিয়ার ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে তৈরি হওয়া সংকট ঢাকতে চীনের নীতির সমালোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র ।
করোনা মহামারির পর সরবরাহ সংকট পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠার আগেই ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর আসে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা, যা সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলে। জ্বালানি, কাঁচামাল ও খাবার সরবরাহের ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে ঘাটতি দেখা যায়।
রাশিয়ার অর্থনীতিকে শাস্তি দিতেই ধারাবাহিকভাবে মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট। তবে বাস্তবতা হলো এ নিষেধাজ্ঞা মূল্যস্ফীতিতে জর্জরিত উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। শ্রীলঙ্কার মতো অনেক উন্নয়নশীল দেশ এরই মধ্যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। -গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে। অর্থকণ্ঠ ডেস্ক