• শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:৫৭ অপরাহ্ন

খলিল ফুড ফাউন্ডেশন মানবকল্যাণে নিবেদিত

এনামুল হক এনাম / ৮৮ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০২২

মানুষ সবাই, কিন্তু মানবিক গুণের মানুষ সবাই নন। তাদের সংখ্যা নিতান্তই কম। এই মানবিক গুণেরই একজন আলোকিত মানুষ বাংলাদেশি আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী খলিল বিরিয়ানি হাউজের স্বত্বাধিকারী শেফ খলিলুর রহমান। নিউ ইয়র্কের ব্যবসা-বাণিজ্য অঙ্গনের এই সফল ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব খলিলুর রহমান শুধু ব্যবসায়ী হিসেবেই সুপারিচিত নন, একজন সমাজ দরদি, মানুষের মঙ্গলাকাক্সক্ষী এবং সর্বোপরি একজন ‘মানবিক মানুষ’ হিসেবেও পরিচিতি অর্জন করেছেন। জনসেবামূলক কাজের জন্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘খলিল ফুড ফাউন্ডেশন’।
‘খলিল ফুড ফাউন্ডেশন’ আমেরিকায় বিশেষ করে নিউ ইয়র্কের বাংলদেশি বংশোদ্ভূতদের কাছে অতি পরিচিত একটি নাম। শেফ খলিলুর রহমান বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের ঘনিষ্ঠ একজন হিসেবে উপলব্ধি করতে পারেন অসহায়, দরিদ্র, ক্ষুধার্ত মানুষের ভেতর কি ক্রন্দনের রোল বিদ্যমান। তাই তিনি আর্থিকভাবে সম্পন্ন একজন হিসেবে এই অসহায় মানুষের দুর্ভোগ নিরসনে বরাবরই আন্তরিক। তার হৃদয়ে এসকল মানুষের জন্যে দরদের শেষ নেই। তার হৃদয় এসব অসহায় মানুষদের জন্যে কেঁদে ওঠে। এসব মানুষের সমস্যা সমাধানসহ তাদের সামাজিক উন্নয়নের একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান হিসেবে তিনি ‘খলিল ফুড ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেছেন।
দরদি মনের খলিলুর রহমান তার খলিল বিরিয়ানি হাউজের হট খাবার এবং হালাল খাবার দিয়েও অসহায় ক্ষুধার্ত, যাদের খাবার ক্রয়ের ক্ষমতা নেই তারা যদি কখনো তার রেস্টুরেন্টে উপস্থিত হয় তিনি নিজে তাদের যত্ন করে খাওয়ান। যদি তিনি নিজে না থাকেন তবে তার ৫০ জন কর্মকর্তা- কর্মচারীকেই বলা আছে কোনো অসচ্ছল ক্ষুধার্ত মানুষই যেন না খেয়ে বিদায় না নেয়। তার সকল স্টাফই এ ব্যাপারে নিবেদিতপ্রাণ।


একবার নিউ ইয়র্কে বেশ বন্যা হলো। মাটির নিচে যারা বসবাস করতেন হঠাৎ পানিতে তাদের অনেকেই অসহায়ভাবে মৃত্যুবরণ। যারা বেঁচে ছিলেন তাদের তখন তীব্র খাদ্য সঙ্কট ছিল। অনেকে অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতপাত করছিলেন। আবার অনেক মুসলমান যাদের জন্যে ‘হালাল’ খাবার প্রয়োজন তারাও হালাল খাবার না পেয়ে ক্ষুধাক্লিষ্ট ছিলেন। ওই বৈরী সময়ে অসহায়ের বন্ধু শেফ খলিলুর রহমানের মন তাদের জন্যে কেঁদে ওঠে। তিনি নিজে এবং তার হোটেলের কর্মচারীদের দিয়ে এসব অসহায় ক্ষুধার্তদের মাঝে প্রয়োজন অনুযায়ী হালাল ও হট খাবার পরিবেশন করেন এবং তা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এই হলেন শেফ খলিলুর রহমান।
কোভিড-১৯ এর মারাত্মক অভিঘাতের ফলে যখন অসহায় মানুষগুলো ক্ষুধার জ্বালায় দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন সেই সময়ে শেফ খলিলুর রহমান হয়ে ওঠেন তাদের ভরসার স্থল। শেফ খলিল তার স্টাফদের নিয়ে অসহায় ক্ষুধার্ত মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালাল ও হট খাবার পরিবেশন করেন। তার এই বদান্যতায় শুধু বাংলাদেশি আমেরিকানরাই নন, অনেক বিদেশিও উপকৃত হন। বন্যা দুর্যোগে, আগুন লাগলে যখন মানুষ দুর্ভোগের শিকার হয় তখনই তার দয়ার হাত তাদের দিকে প্রসারিত হয়। আগুন লাগলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে, ফলে অনেক বাড়িতেই রান্নার সুযোগ থাকে না। তখন শেফ খলিলুর রহমান সে এলাকায় খাবার পাঠিয়ে দেন। আবার কখনো কখনো নিজেও খাবার নিয়ে যান।
শুধু কি ক্ষুধার্ত মানুষের পাশেই দাঁড়ান! না তিনি নিজের মানব সেবার বিষয়টি এখনেই সীমাবদ্ধ রাখেননি। বাংলাদেশ থেকে যারা আমেরিকায় নতুন যান তাদের কাজ করার কোনো সুযোগ থাকে না। কারণ কোথাও কাজ পেতে হলে আইডি এবং ওয়ার্ক পারমিট লাগে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের তা থাকে না। এই দুঃসময়ে হাত বাড়িয়ে দিতে দেখা যায় শেফ খলিলুর রহমানকে। তিনি এসব অভিবাসন প্রত্যাশীকে প্রয়োজনে নিজের রেস্টুরেন্টেই কাজে লাগিয়ে দেন। এতে একদিকে যেমন তারা কাজ পায় অন্যদিকে তাদের ট্রেনিংও হয়। ট্রেনিং পাবার পর তাদের অন্যত্র কাজের ব্যবস্থাও করে দেন। এদের অনেকে তার বিরিয়ানি হাউজের রান্নাও শিখতে পারেন। এতে করে তার অন্যত্র চাকুরির সুযোগ বৃদ্ধি পায়। এই বিরিয়ানি রান্না যথেষ্ট সেনসিটিভ। কোনোভাবে কিছু মসলা বেশি বা কম হলে তা স্বাদের চেয়ে বিস্বাদ হয়ে পড়ে। কিন্তু শেফ খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে এই রেস্টুরেন্টের বিরিয়ানি রান্না অন্যরকম সুস্বাদে পরিপূর্ণ। স্বাভাবিকভাবে এখানে যারা কাজ বা প্রশিক্ষণ পায় তাদের হাতের রান্নাও বেশ ভালো হয়। রান্না হয় হাইজেনিক। তাতে করে এই বিরিয়ানি খেয়ে কারো পেটের পীড়া বা গ্যাস হয় না। শেফ খলিলের রান্না হচ্ছে বিজ্ঞানভিত্তিক এবং সুস্বাদু। তিনি জানেন কোন তাপমাত্রায় খাবারের কোন জিনিসকে রক্ষাণাবেক্ষণ করতে হবে যাতে খাবারের উপাদানের মান অক্ষন্ন্ন থাকে। তিনি প্রথমেই তার কর্মীদের বলেন, কাঁচা মাংস বা মাছ রান্না করা মাছ-মাংসের সাথে একই ফ্রিজে রাখা যাবে না। তিনি গবেষণা করে বিরিয়ানিতে যাতে বাড়তি তেল না থাকে কিংবা মাংসে যাতে অধিক চর্বি না থাকে তা যত্ন নিয়ে করে থাকেন।
শেফ খলিলুর রহমান গবেষণা করে তেল কম দিয়ে বিরিয়ানি রান্নার ব্যবস্থা করেছেন যা বেশ প্রশংসিত হচ্ছে। তিনি শীতে গরিবদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। তিনি কমিউনিটির মসজিদসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষদের মধ্যেও বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকেন। তিনি গত ৩ বছরে প্রায় দশ হাজার মানুষকে অর্থনৈতিক সহায়তাসহ শীতবস্ত্র দিয়েছেন।


তিনি আরও একটি কাজ করেন, তা হলো বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা ইউএসএ নতুন যাচ্ছেন তারা ভাষাগত সমস্যায় পড়েন। ফলে কাজ পেতে অসুবিধা হয়। বিষয়টি উপলব্ধি করেই নিজ মাতৃভূমির এসব মানুষের জন্য ভাষা শিক্ষার ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন খলিলু রহমান। দেখা যায়, ভাষার জন্যে ও একজন ভালো কাজ খুঁজে পাচ্ছে। তাদের স্থায়ী চাকরি হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ খলিলুর রহমান কর্মজীবী মানুষের কাছেও এক আলোকিত ব্যক্তিত্ব যিনি আমেরিকায় পিছিয়ে থাকা বিশেষ করে বাংলাদেশিদের প্রচুর সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। লক্ষণীয় বিষয় ‘যেখানেই অসহায় সেখানেই খলিল ফাউন্ডেশন’ পাশে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের গর্ব বাংলাদেশি আমেরিকান শেফ খলিলুর রহমান একদিকে যেমন সফল উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী তেমনই মানবতার সেবায় নিবেদিত এক মানবিক মানুষ আমেরিকার বাংলাদেশি কমিউনিটির কাছে তাদের সুখ-দুঃখের এক অনন্য ভাগীদার।
তার এই মানবিক গুণের কথা আমেরিকার সরকার এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও অবহিত। যা তার ‘লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ পেতে সহায়ক হয়েছে। শেফ খলিলুর রহমান তার কর্ম ও সেবার মাধ্যমে মানুষের প্রকৃত বন্ধু হয়ে উঠেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত খলিল ফুড ফাউন্ডেশন এখন এক আলোকিত অনন্য প্রতিষ্ঠান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category