• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৯:৪৬ অপরাহ্ন

৫ কারণে ডিজিটাল লেনদেনে অনাগ্রহী ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতারা

রিপোর্টারের নাম : / ৭৩ ভিউ
আপডেট সময়: বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২২

করোনাভাইরাসের প্রকোপকালে দেশে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (ডিফিএস) ব্যবহার বেড়েছে। তবে প্রয়োজনীয় কাগজ না থাকা, অজ্ঞতা, অ্যাপ ব্যবহারের জটিলতা, বেশি চার্জ ও ভুল নম্বরে টাকা চলে যাওয়ার শঙ্কায় ডিফিএস ব্যবহার করে ঋণ পরিশোধ করতে চাইছেন না ঋণ গ্রহীতারা। ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক এনজিওদের নেটওয়ার্ক ইনাফি বাংলাদেশের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘বাংলাদেশের গ্রাহকদের ওপর করোনার প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ইনাফি বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার তাসনুভা ফারহিম।
নয়টি জেলার ৪৪২ জন ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতা ও ২২টি ক্ষুদ্রঋণ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এ গবেষণাটি তৈরি করা হয়েছে। ২০২১ সালে ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ৪৪২ জন ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতার মধ্যে ১৪০ জন মাইক্রো ফাইন্যান্স, ১৪৬ জন মাইক্রো ইকোনমিকসের গ্রাহক। আর ১৫৬ জন ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাকে ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে। ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতার মধ্যে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ ও ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ নারী।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, করোনার কারণে মাইক্রো ফাইন্যান্সের ঋণ গ্রহীতার এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা ও মাইক্রো ইকোনমিকস ঋণ গ্রহীতার তিন লাখ ৮৮ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
৮৩ দশমিক ৯০ শতাংশ ঋণ গ্রহীতা জানিয়েছেন, করোনায় তাদের আয় কমেছে, ২৮ শতাংশ চাকরি হারিয়েছেন, ২১ শতাংশ কিস্তির টাকা দিতে পারেননি। এছাড়া সাড়ে ৫ শতাংশ জানিয়েছেন চাহিদামাফিক ঋণ তারা পাননি।
ঋণ গ্রহীতাদের ৫০ শতাংশ জানিয়েছেন, করোনায় তারা সঞ্চয় ভেঙে জীবন ধারণ করেছেন। ৫৩ দশমিক ২৩ শতাংশ ঋণ নিয়ে, ৪৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ খরচ কমিয়ে ও ২১ দশমিক ৭৭ শতাংশ সম্পদ বন্ধক রেখে করোনার সময় পার করেছেন।
অন্যদিকে, ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭১ দশমিক ৪ শতাংশ জানিয়েছে, নানা সমস্যার কারণে কিস্তির টাকা সংগ্রহ করতে যেতে পারেনি, একই সংখ্যক জানিয়েছে প্রতিষ্ঠান চালাতে তাদের নানাবিধ সমস্যা হয়েছে। ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, করোনাকালে ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (ডিফিএস) ব্যবহার করে ঋণ পরিশোধের ব্যবহার বেড়েছে। ঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করোনার আগে ডিফিএস ব্যবহার করলেও ২০২০ সালের পর তা ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে।
২৮ দশমিক ৮ শতাংশ নারী ও ৭৪ শতাংশ পুরুষ নিজ নামে ডিজিটাল ওয়ালেট ব্যবহার করেন। তবে ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ জানেন না কীভাবে ডিজিটাল ওয়ালেট ব্যবহার করতে হয়। ৩১ দশমিক ৪ শতাংশ মনে করেন, অতিরিক্ত চার্জ নেওয়া হয় ডিফিএসগুলোতে। ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ অ্যাপ জটিলতা, ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ ভুল নম্বরে টাকা পাঠানোর ভয়ে ও ৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকার কারণে ডিজিটাল ওয়ালেট ব্যবহার করতে চাইছেন না।
অনুষ্ঠানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ কখনই হেরে যাবে না। হারার কোনো কারণ নেই। এখন পর্যন্ত কোনো লক্ষণ নেই। ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে মানুষের উন্নয়নে কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্রঋণ কে, কীভাবে খরচ করছে সেটা খতিয়ে দেখতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। রপ্তানির বৈচিত্র্যকরণ সুযোগ আমাদের কাজে লাগাতে হবে। সেই ক্ষেত্রে ঋণ ব্যবহার করে মানুষ যেন রপ্তানির নতুন নতুন ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারে। সেই বিষয়ে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে মনোযোগী হতে হবে।
করোনায় মানুষের আয় কমেছে তারা সঞ্চয় থেকে সাহায্য নিয়ে জীবন ধারণ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু আমরা দেখেছি কোভিডের সময় ঋণ আদায়ের হার ছিল ৯৫ শতাংশ, এখন যেটা ৯৮ শতাংশ। করোনায় সরকারি প্রণোদনা কীভাবে মানুষকে সাহায্য করেছে সেটা নিয়েও পর্যাপ্ত গবেষণা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন এনজিও প্রতিষ্ঠান অন্তরের ফাউন্ডার মো. ইমরানুল হক চৌধুরী। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাইক্রো ফাইন্যান্স রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান মো. ফসিউল্লাহ। এতে বক্তব্য রাখেন ইনাফির চেয়ারপারসন এস এন কৈরি, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মাহবুবা হক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ফেলো ও অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর সাকিব মাহমুদ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর