• শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:২৪ অপরাহ্ন

যুক্তরাজ্যের কারি শিল্পের আধুনিকতার জনক এনাম আলী বেঁচে থাকবেন তাঁর কর্মে

Reporter Name / ৪১৬ Time View
Update : বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২২

যুক্তরাজ্যের বিশিষ্ট ব্রিটিশ এশীয় ব্যক্তিত্ব যিনি জন্মসূত্রে বাংলাদেশের কৃতী সন্তান এনাম আলী এমবিই, এফআইএইচ গত ১৭ জুলাই ইন্তেকাল করেন। তিনি ছিলেন যুক্তরাজ্যের হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রি বিশেষ করে কারি সাম্রাজ্যের মুকুটহীন সম্রাট। তিনি এক্ষেত্রে আধুনিকায়নের জনক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন, যিনি ব্রিটেনের নাগরিকদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে সেখানকার মানুষের হৃদয় জয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
তাঁর কৃতিত্বের স্বাক্ষর বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ¦ল করেছে। এনাম আলীর নেতৃত্বে যুক্তরাজ্যের কারি শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে, যেখানে অনেক ব্রিটিশ বাংলাদেশি উদ্যোক্তাসহ অসংখ্য মানুষ কাজের সুযোগ লাভ করেছেন।
মানুষ মরণশীল। কিন্তু যাপিত জীবনের কর্ম কৃতী ও গুণী মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে যুগ যুগ। ব্রিটেনের এনাম আলী এমবিইও জাগরুক থাকবেন অনাদিকাল মানুষের মাঝে। কারি শিল্প জগতে তিনি এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে, তাঁকে প্রায়শই দেখা যেতো যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বব্যাপী প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদ শিরোনামে। আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যম সিএনএন, স্কাই নিউজ, বিবিসি, আলজাজিরা টিভি ইত্যাদিতে তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন আবার কখনো কখনো তাঁকে এশিয়ান ব্যবসায়িক খাতের মুখপাত্র হিসেবে বক্তব্য দিতে দেখা যেতো। এটি একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের মনে দারুণ রেখাপাত করতো, গর্ব হতো।
এনাম আলী গত শতকের ৯০ দশকে যুক্তরাজ্যে বেশকিছু ব্যবসায়িক সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯৯৮ সালে শিল্প-বাণিজ্য বিষয়ক প্রকাশনা ‘স্পাইস বিজনেস’ ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন। পরবর্তীকালে তাঁর নেতৃত্বেই ২০০৫ সালে ইয়ারলি ব্রিটিশ কারি পুরস্কার প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি কারি ইন্ডাস্ট্রিকে অধিক গতিশীল করে। ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ড’স হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রি ক্যালেন্ডারের সবচেয়ে বড় ইভেন্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এবং কারি অস্কার হিসেবে বিবেচিত। ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডের বার্ষিক অনুষ্ঠান ও নৈশভোজে মন্ত্রী, হাইকমিশনার, কূটনীতিক এবং এমপিসহ ১৭০০টিরও বেশি রেস্তোরাঁ, শিল্প ব্যক্তিত্ব, শেফ, সেলিব্রিটি এবং অতিথিরা অংশগ্রহণ করে থাকেন। এটি ব্রিটিশ বিজনেস সেক্টরের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ একটি ইভেন্ট যা প্রতিষ্ঠা করেছেন এনাম আলী এমবিই। এই অ্যাওয়ার্ড কারি শিল্পকে অনন্য এক মাত্রা এনে দিয়েছে, দিয়েছে মর্যাদার এক বড় অবস্থান।
একসময় খাদ্যশিল্পের সাথে সম্পৃক্ত শেফরা সমাজে ততোটা সম্মানিত ছিলেন না, কিন্তু কারি অ্যাওয়ার্ড তাদেরকে সামাজিক ক্ষেত্রে বিশেষ সম্মান এনে দিয়েছে। অনেক শিক্ষিত তরুণ এখন ভালো শেফ হবার আশায় যত্নবান হয়ে থাকেন। এ প্রসঙ্গে কারি সাম্রাজ্যের মেধাবী ও আত্মপ্রত্যয়ী এনাম আলী বলতেন, ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডের উদ্দেশ্য হলো পরবর্তী প্রজন্মকে তাদের কর্মজীবনে উৎসাহিত করা, তাদের কর্মের মান উন্নয়নের ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলা, সারা বিশ্ব জুড়ে ব্রিটিশ কারি রেস্তোরাঁর মান বাড়ানো এবং প্রোফাইল বৃদ্ধি করা। আতিথেয়তা শিল্পের সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্মগুলোর একটি যা রেস্তোরাঁ, টেকওয়ে এবং সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের প্রভাবিত করে এমন একটি অনুষ্ঠান যা আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন টেলিভিশন ও প্রচার মাধ্যমে সম্প্রচারিত হয়।
উদ্যোক্তা এনাম আলী প্রতি বছরই ইংল্যান্ডের মহামান্য রানির সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করতেন এবং রানিও সদয়ভাবে প্রতিবছর সমর্থনের বার্তা পাঠাতেন। ব্রিটেনের বিভিন্ন সময়ের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য বৃন্দ, রাষ্ট্রের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ, দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, মিডিয়ার নেতৃবৃন্দ সহ অনেক মানুষ এতে উপস্থিত হয়ে থাকেন।
এনাম আলী নিজেও ব্রিটেনের এপসম, সারে-এ অনেক পুরস্কার বিজয়ী রেস্তোরাঁ ‘মিশেলিন রেটেড লে রাজ’ এর প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর সুদূঢ় নেতৃত্বে এই শিল্প যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে ৪.৩ বিলিয়ন পাউন্ড অবদান রেখে প্রমাণ করে দিয়েছে এই শিল্পের গুরুত্ব অনেক।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এনাম আলী যুক্তরাজ্য সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অনেক দায়িত্ব পালন করে গেছেন। এর মধ্যে তিনি উচ্চ আদালত এবং ক্রাউন কোর্টের জুরি সদস্য হিসেবে চারবার দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিভিন্ন টিভি প্রোগ্রামে বিচারকের দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি ছিলেন ভারতীয় খাবারের উন্নত প্রক্রিয়ার একজন বিশেষ ব্যক্তিত্ব এবং রন্ধন সম্পর্কীয় স্থপতি। তাঁর একটি বহুল প্রচারিত কথা ছিল- ‘কারির জন্ম ভারতে কিন্তু ব্রিটেনে এর বিকাশ ঘটেছে’। তিনি বলতেন, ‘ব্রিটেন বিশ্বকে যে কারি ডিশ দিয়েছে চিকেন টিক্কা মসলা এটিই মূলত বিশ্বব্যাপী এই শিল্পকে প্রতিষ্ঠা এনে দিয়েছে।’
কারি শিল্পের আধুনিকায়নের জনক এনাম আলীকে নিয়ে ‘অর্থকণ্ঠ’ এবং ‘বিজনেস আমেরিকা’ ম্যাগাজিন একাধিকবার তাঁর বিশেষ সাক্ষাৎকারসহ প্রতিবেদন করে এই মহান ব্যক্তিত্বকে সম্মানিত করেছে।
আমরা বিশ্বাস করি, কারি শিল্পের এই স্থপতি তাঁর বিভিন্ন কর্মদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্বের মানুষের কাছে যুগে যুগে আলোচিত হবেন।
আমরা তাঁর আত্মার বিদেহী শান্তি কামনা করি।৩
এনামুল হক এনাম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, অর্থকণ্ঠ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category