মুজিব বর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে নিউইয়র্কস্থ কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরীতে ’বাংলা কর্ণার’-এর উদ্বোধন করলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ.কে. আব্দুল মোমেন
’মুজিব বর্ষ’ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল, নিউইয়র্ক এর উদ্যোগে এবং কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরী’র সহযোগিতায় নিউইয়র্কস্থ কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরীতে ‘বাংলা কর্নার’ স্থাপন করা হয়েছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশন উপলক্ষে বর্তমানে নিউইয়র্ক সফররত পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ.কে. আব্দুল মোমেন,এমপি ‘বাংলা কর্নার’ স্থাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কর্নারটির শুভ উদ্বোধন করেন। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন সি. ল্যু, কুইন্স বোরো প্রেসিডেন্ট ডোনাভান রিচার্ডস এবং কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরীর প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেনিস এম. ওয়ালকট। এছাড়াও, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটির সদস্য এবং সাংবাদিকবৃন্দ এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী কম্যুনিটির সর্ববৃহৎ আবাসস্থল নিউইয়র্কস্থ কুইন্স বোরো যেখানে ইংরেজী, স্প্যানিশ ও চাইনিজ ভাষার পরেই বাংলা চতুর্থ বৃহৎ ভাষা হিসেবে ব্যবহ্নত হয়। সেকারণে উক্ত বোরোতে অবস্থিত কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরীতে ’বাংলা কর্ণার’ উদ্বোধন বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। ’বাংলা কর্ণার’ টির সর্বমোট ৩০৯টি বই বাংলাদেশ কনস্যুলেটের পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়েছে। বইগুলো বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিষয়ে বাংলাদেশের প্রথিতযশা লেখক ও সাহিত্যিকদের লেখা। এছাড়াও, বাংলাদেশের উপন্যাস, গল্পসমগ্রসহ শিশু-কিশোর উপজীব্য বইসমূহ এ কর্ণারে স্থান পেয়েছে।
২০১৯ হতে ২০২১ সাল পর্যন্ত পরপর তিন বছর কুইন্সের মূলধারাকে সম্পৃক্ত করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন ব্যাপকভাবে সাড়া জাগিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কুইন্সে ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশী-আমেরিকানদের জন্য কনস্যুলেট যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরীতে ‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষ্যে ’বাংলা কর্ণার’ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। ২০২০ সালে এই ’বাংলা কর্ণার’ বিপুল পরিসরে উদ্বোধনের কথা থাকলেও কোভিড মহামারীর কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে এ বছর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলাকালীন সীমিত পরিসরে কোভিড সংক্রান্ত নিয়মাবলী অনুসরণ করে আজ ‘বাংলা কর্ণার’টির উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ.কে. আব্দুল মোমেন,এমপি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ.কে. আব্দুল মোমেন,এমপি বলেন ২০২১ সাল বিভিন্ন দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এ বছর আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং আজ জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্ম দিন। তিনি বলেন, এছাড়াও এ বছর বাংলাদেশের আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি হলো বাংলাদেশ এবছরই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা হতে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবার সকল সূচকে সফলভাবে উর্ত্তীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন, সে কারণে এ বছরের এ দিনে ‘বাংলা কর্ণার’ এর শুভ উদ্বোধন বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। তিনি এ সময় কুইন্স লাইব্রেরীকে ঘিরে তাঁর অতীত স্মৃতিচারণ করেন। তিনি আরো বলেন আমরাই একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি। তিনি আশা প্রকাশ করেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মদের নিয়ে এই ’বাংলা কর্ণার’-এ আসবেন এবং বই পড়বেন। তিনি এই বিশেষ দিনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ৩২টি ভাষণের সংকলণ ও বিশ্লেষণ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে ৭৫জন বিশিষ্ট ব্যক্তির লেখনি সম্বলিত বিশেষ সংকলন কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরীকে উপহার দেন
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন তাঁর বক্তব্যে বলেন যে মুজিব বর্ষে স্থাপিত এই ’বাংলা কর্ণার’টি আমাদের বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটির জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি আশা প্রকাশ করেন কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরী সহ অন্যান্য মূলধারার প্রতিষ্ঠানের সাথে কনস্যুলেটের যোগাযোগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ও ব্রাজিলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (মনোনিত) সাদিয়া ফয়জুননেসা এবং কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরীর প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেনিস এম. ওয়ালকট অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক জাতিসংঘে প্রথম বাংলায় ভাষণ প্রদান এবং
ঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক বাংলা ভাষণকে ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতির কথা উল্লেখ করে বলেন বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে এক অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি এ প্রসঙ্গে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধুর বারংবার কারাবরণের সময়কাল উল্লেখ করে বলেন মুজিব বর্ষে এই ’বাংলা কর্ণার’ স্থাপন যথার্থ প্রতীকী এবং গুরুত্ব বহন করে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন সি. ল্যু, এবং কুইন্স বোরো প্রেসিডেন্ট ডোনাভান রিচার্ডস এবং সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস। প্রত্যেকেই বাংলা ভাষাকে নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশী-আমেরিকানদের কাছে তুলে ধরার এ উদ্যোগের প্রশংসা করেন। এর মাধ্যমে বাংলা ভাষাভাষি সকলের বিশেষ করে শিশু কিশোরদের মধ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা তৈরী হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।
বক্তব্য শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রী তাঁর নিজের লেখা বেশ কয়েকটি বই কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরীর প্রেসিডেন্ট ডেনিস ওয়ালকট এর হাতে তুলে দেন। এছাড়াও, Secret Documents of Intelligence Branch on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman’ Volume:1-9 এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভিত্তিক আলোকচিত্র নিয়ে প্রকাশিত “Lighting the Fire of Freedom: Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman” বইসমূহ লাইব্রেরীকে উপহার দেন। কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরীর প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেনিস এম. ওয়ালকট কমিউনিটিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পররাষ্ট্র মন্ত্রীর হাতে একটি Presentation of Honour স্মারক প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিকবৃন্দ এবং কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরীর কর্মকর্তাবৃন্দের উপস্থিতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ফিতা কেটে ’বাংলা কর্ণার’ এর শুভ উদ্বোধন করেন।উল্লেখ্য, এই বইসমুহ কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরীর প্রধান শাখায় ৬ মাস প্রদর্শিত হবে এবং পরবর্তীতে উক্ত লাইব্রেরীর বিভিন্ন শাখায় এই বইগুলি সংগৃহীত থাকবে।