যুবরাজ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি
এমপিওভুক্ত প্রভাষকের পদোন্নতির সূচক নির্ধারণ আট বছর সন্তোষজনক চাকরির পূর্তিতে নয়টি মানদণ্ড নির্ধারণ। প্রভাষকদের অর্ধেককে জ্যৈষ্ঠ প্রভাষক/সহকারি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। চাকরির বয়স ১৬ হলে সকল প্রভাষক পদোন্নতি পাবেন। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রভাষকদের পদোন্নতির দীর্ঘদিনের কালো বিধিমালা বাতিল করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ অনুযায়ী আট বছর সন্তোষজনক চাকরির পূর্তিতে প্রভাষকদের অর্ধেককে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। এমপিও নীতিমালায় ১০০ নম্বরের ৯ টি সূচক নির্ধারণ করা হলেও নম্বর বণ্টন করা হয়নি। গত মঙ্গলবার সর্বশেষ সভা করে প্রতিটি সূচকের বিপরীতে নম্বর বণ্টন করে পদোন্নতির নীতিমালা প্রায় চূড়ান্ত করেছে মন্ত্রণালয়। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ( মাউশি ) ৯ টি অঞ্চলের পরিচালকের নেতৃত্বে মানদণ্ড যাচাই-বাছাই করে পদোন্নতি দেওয়া হবে। নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ( মাধ্যমিক -২ ) ফৌজিয়া জাফরীন বলেন, এমপিও নীতিমালার আলোকে প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির নীতিমালা প্রণয়ন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। নীতিমালা চূড়ান্ত হলেই পদন্নতির কার্যক্রম শুরু হবে। প্রভাষকদের সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে অধ্যক্ষদের স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ থাকবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষার সনদ, জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধ প্রকাশসহ বিভিন্ন বিষয়ে পদোন্নতির ক্ষেত্রে নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলোর প্রমাণপত্রের ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া হবে সৃজনশীল বিষয় কর্মকাণ্ডের নম্বর নির্ধারণের ক্ষেত্রে ম্যানেজিং কমিটির অনুমোদন নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে অধ্যক্ষদের পছন্দমত নম্বর দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। গত ২৮ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ জারি করেছে। নীতিমালার অনুচ্ছেদ ১১.৬ অনুযায়ী আট বছর সন্তোষজনক চাকরির পূর্তিতে নয়টি মানদণ্ডের ভিত্তিতে প্রভাষক হতে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কর্মরত প্রভাষকদের অর্ধেককে উচ্চমাধ্যমিক কলেজে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ও ডিগ্রি কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। তবে চাকরির বয়স ১৬ বছর হলে সকল প্রভাষক পদোন্নতি পাবেন। এ নীতিমালা জারির আগে উভয় স্তরের কলেজে মোট কর্মরত প্রভাষকদের অনুপাত প্রথার ভিত্তিতে অর্থাৎ ৫:২ সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হতো। অনুপাত প্রথার কারণে অনেক শিক্ষক পদোন্নতি না পেয়েই অবসরে চলে যেতেন। অনেক প্রভাষক পুরাতন কলেজে চাকরি করায় পদোন্নতি বঞ্চিত হতেন। তাদের পরে চাকরিতে যোগদান করেও নতুন কলেজের প্রভাষকরা সহকারী অধ্যাপক হতেন। অনেক প্রভাষকের শিক্ষার্থী পদোন্নতি পেয়ে সহকারী অধ্যাপক হয়েছেন । অনুপাত প্রথা বাতিলের দাবিতে যুগের পর যুগ শিক্ষকরা আন্দোলন করে আসছেন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই নতুন এমপিও নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। জ্যেষ্ঠ প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে মোট ১০০ নম্বরের মূল্যায়নে সূচকগুলো হলো – এমপিওভুক্তির জ্যেষ্ঠতা ১৫ নম্বর, একাডেমিক পরীক্ষার ফলাফলে ১৫ নম্বর, ক্লাসে মোট উপস্থিতির জন্য ২০ নম্বর, এমপিওভুক্তির পর থেকে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য/বিরূপ রেকর্ড না থাকলে ১০ নম্বর, বিভাগীয় মামলা না থাকলে ৫ নম্বর, প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর থেকে অনুকরণীয়/সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের জন্য ১০ নম্বর, ভার্চুয়াল ক্লাস নেওয়ার দক্ষতার ওপর ১০ নম্বর, উচ্চতর ডিগ্রির (এমফিল, পিএইচডি) জন্য ৫ নম্বর, গবেষণা কর্ম বা স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধের জন্য ১০ নম্বর। মূল্যায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ কর্তৃক একটি কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি সূচকগুলো মূল্যায়ন করে পদোন্নতি দিবেন। কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা থাকলে পদোন্নতি দেওয়া হবে না। ১০০ নম্বরের নয়টি সূচকের নম্বর কিভাবে নির্ধারণ করা হবে তা পদোন্নতির নীতিমালা কমিটি প্রায় চূড়ান্ত করেছে। গত মঙ্গলবার কমিটির সভায় অংশ নেওয়া একধিক সদস্য জানান, এমপিও প্রাপ্তি থেকে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের জন্য আটটি উপসূচক নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ এমপিওভুক্তির আট বছর পূর্ণ হলে ৮ নম্বর, নয় বছর পূর্ণ হলে ৯ নম্বর, দশ বছর পূর্ণ হলে ১০ নম্বর, এগারো বছর পূর্ণ হলে ১১ নম্বর, বার বছর হলে ১২ নম্বর, তেরো বছর পূর্তিতে ১৩ নম্বর, চৌদ্দ বছর পূর্ণ হলে ১৪ নম্বর, পনের বছর পূর্ণ হলে ১৫ নম্বর। শিক্ষাগত যোগ্যতার ফলাফলের নম্বর বিভাজনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে- এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার জন্য তিন নম্বর। এ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ বা সিজিপিএ-৩ প্রাপ্তরা তিন নম্বর , দ্বিতীয় বিভাগ বা সিজিপিএ-২ প্রাপ্তরা দুই নম্বর , তৃতীয় বিভাগ বা সিজিপিএ-১ প্রাপ্তরা এক নম্বর পাবেন। এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় পাসের জন্য তিন নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রথম বিভাগ বা সিজিপিএ-৩ প্রাপ্তরা পাবেন তিন নম্বর, দ্বিতীয় বিভাগ বা সিজিপিএ-২ প্রাপ্তরা দুই নম্বর, তৃতীয় বিভাগ বা সিজিপিএ-১ প্রাপ্তরা এক নম্বর পাবেন। ডিগ্রি পাস/স্নাতক (পাস) বা সমমান পরীক্ষায় পাসের জন্য ছয় নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। এ স্তরে প্রথম শ্রেণি বা সিজিপিএ-৬ প্রাপ্তরা পাবেন ছয় নম্বর , দ্বিতীয় শ্রেণি বা সিজিপিএ-৫ প্রাপ্তরা পাঁচ নম্বর, তৃতীয় শ্রেণি বা সিজিপিএ-৪ প্রাপ্তরা চার নম্বর। অনার্স বা সমমান ( চার বছরের কোর্স ) পাস সনদের জন্য আট নম্বর। এ স্তরে প্রথম শ্রেণি বা সিজিপিএ-৮ প্রাপ্তরা পাবেন আট নম্বর, দ্বিতীয় শ্রেণি বা সিজিপিএ-৭ প্রাপ্তদের সাত নম্বর, তৃতীয় শ্রেণি বা সিজিপিএ-৫ প্রাপ্তদের পাঁচ নম্বর। ডিগ্রি (পাস) বা তিন বছরের অনার্সসহ মাস্টার্সের ক্ষেত্রে তিন নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। এ স্তরে প্রথম শ্রেণি বা সিজিপিএ-৩ প্রাপ্তির জন্য তিন নম্বর,