আব্রাহাম লিংকন
সেপ্টেম্বরের ১৭ থেকে মার্কিন মুল্লুকে ঘুরছি। এর প্রকৃতি মাটি ও মানুষকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছি। বাফেলোর চিত্তাগুয়ার সবুজ জমিনের স্নিগ্ধ সিমেট্রি এবং নায়েগ্রা প্রপাতের আছঁড়ে পড়া জলের বেপরোয়া মিস্টি শব্দের রেশ তখনো কাটেনি। জ্যাকসনহাইটে আশ্রয় পাওয়া অনুজ Monirul Huq Rahul ভাই ও কনা আপার অতিথিশালায় ঘুমিয়ে আছি হঠাৎ আধা অবসরে থাকা মুঠোফোনের টুংটাং শব্দে ঘুমের অবসান। খুলেই দেখি জাপান থেকে প্রকাশিত পরবাস পত্রিকার কর্ণধার অবহেলিত কুড়িগ্রামের কৃতীসন্তান অবিভক্ত ভারতের কংগ্রেস দলীয় আইনসভার সদস্য প্রয়াত কাজী ইমদাদুল হকের প্রবাসী পুত্র Kazi Ensanul Hoque ভাই ক্ষুদে বার্তা দিয়েছেন। লিখেছেন তোমার সাথে ভয়েজ অব আমেরিকার Akbar Haider Kiron কথা বলবেন। তিনি আমার নাম্বার ও ঠিকুজি তাঁকে দিয়েছেন। আমাকেও তার মুঠোফোন নাম্বার এসএমএস করেছেন।
VOA নামটি শুনতেই মনে পড়ে গেলো- “ভয়েজ অব আমেরিকা-সংবাদ পাঠ করছি সরকার কবির উদ্দিন”। বহুকাল ভোয়ার খবর শুনিনা। ভয়েজ অব আমেরিকা নামটিও মরিচিকা ধরার মতন। অথচ সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে আমাদের কৈশোর ও যৌবনের লড়াইয়ে বিবিসি এবং ভয়েজ অব আমেরিকা সত্য জানার ঠিকানা ছিলো। ভয়েজ অব আমেরিকার কথা শুনতেই আকাশ রাঙানো চমকিত বিলীর আলোয় তিন/সাড়ে তিন দশক আগের স্মৃতির গহব্বরে ফিরেছিলাম। সম্বিত ফিরে পেয়েই পাঠানো নাম্বারে কল করলাম- ওপার থেকে পরিশীলিত চয়নে ভরাট কণ্ঠের আওয়াজ যেনো দ্রুতলয়ে সংবাদ পঠিত হচ্ছে, আর আমি যেনো বিরাশি তিরাশি সালে মুদি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কাঙ্খিত খবরের প্রত্যাশায় অপেক্ষা করছি। যাহোক কথা হলো। তিনি বললেন বিকেলে জ্যাকসানহাইটেরই কোথাও মিলিত হবো।
এরপর আমি নদী জলে ঘুরে স্ট্যাচু অব লিবার্টি দর্শন শেষে ৯/১১ এর ক্ষত দেখতে গগনচুম্বি যমজ ইমারতে যাই। নব উদ্যমে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা যমজ ইমারতের নবতর সৌন্দর্য যে কাউকেই বিমোহিত করবে। হালের দুনিয়ায় ধ্বংসস্তুপের নীচ থেকে আবারো মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর অনবদ্য নজির হচ্ছে টু-ইন-টাওয়ার। টু-ইন- টাওয়ার ঘুরে দাঁড়িয়েছে, আবার আল-কায়দা/তালেবানরাও ফিরেছে বিনা বাধায়। ভবিষ্যতেই বলে দেবে তালেবানের ফেরা জয় না পরাজয়।
গগণচুম্বি যমজ ইমারতে অবগাহিত সৌন্দর্যের বিষ্ময়ের ঘোর না কাটতেই মনে হলো আলী হায়দার কিরন ভায়ের সাথে দেখা করার সময়ের কথা। পাতালরেলে চেপে দ্রুতই জ্যাকসানহাইটের মেট্টো স্টেশনের সামনে ইত্যাদি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সামনে আসা।
এখানে দিনে রাতে বাঙালিরা আড্ডা দেয়, গল্পে মেতে ওঠে। রাজনীতি ও দেশ নিয়ে বাংলা পোস্টার লেখা দৃশ্যমান।এখানে কথা হয় বিরহ বেদনার নানা পর্বের। এ জায়গাটাতে এলে আপনার মনে হবে আপনি ঢাকা শহরের কৃষি মার্কেট বা সেগুনবাগিচা এলাকায় আছেন। জ্যাকসানহাইটে ইংরেজিকে দ্বিতীয় ভাষা বললে খুব একটা ভুল বলা হবে না। প্রবাসীদের কাজ কর্ম শেষে এখানে আসাটা শৈশবে বন্ধুদের সাথে শেষবিকেলে মিলিত হওয়ার মতন। এখানে আড্ডায় সমস্যা হচ্ছে চেয়ার। এখানে বসবার একটা চেয়ার সোনার হরিণসম।
জ্যাকসনহাইটে যাওয়ার পর আমায় একটা চেয়ার কোথা থেকে যোগাড় করে দিলেন উত্তরবঙ্গ পাটগ্রামের ছেলে সংস্কৃতি পাগল Mohor Khan। আমি বসেছিলাম এমন সময় একজন বাঙালি ভদ্রলোক বলে গেলেন আমরা গেলে যেনো চেয়ারটি তিনি পান। এমন সময় লোকেশন ট্রাক করে আমায় ধরে ফোলেন কিরণ ভাই। তিনি এলে আমি শ্রদ্ধা আর শিষ্টাচারের বিধি মেনে দাঁড়িয়ে যাই। তিন জন মানুষ একটি চেয়ার! সঙ্গত কারণে দাঁড়িয়ে থেকেই পরিচয় ও আলাপচারিতা। বুঝলাম মোহর খান তাঁর পূর্ব পরিচিত।আমরা কথা বলছি এমন সময় একজন চায়নিজ ভদ্রলোক কেউ বুঝে উঠবার আগেই গদিটি করায়ত্ব করে অদূরেই বসে পড়েন। এতে ভীষনভাবে রুষ্ট হন বাঙালি ভদ্রলোক। নিজের ব্যর্থতা না দেখে আমাদের ঝাড়ি মারছেন। যেনো চিনা সাফল্য গড়তে আমরাই অবদান রাখলাম। এখানে এসেও দেখলাম কেদারার মূল্য আর কেদারাকে কেন্দ্র করে পাওয়া না পাওয়ার ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া।
যাহোক আকবর হায়দার কিরন ভাই বললেন এখানে নয় চলুন পাশেই Kazi Shamsul Hoque ভায়ের ওখানে, আপনি আসছেন তাঁকে বলেছি। তাঁর সাথে আমার পরিচয় নেই, তবে তাঁর গুণাবলী ও কৃত কাজের কারণে প্রযুক্তির সুবাদে তিনি বহুদিনের পরিচিত। তাঁর ওখানে গিয়ে বুঝলাম এখানে গুনীজনদের নিত্যা আড্ডা হয়। পরিচিত হলাম মুদ্রিত সংবাদ মাধ্যমের গুরুত্বপূর্ন মানুষ প্রধান উপদেষ্টা চ্যানেল ২৬ এবং নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি এশিয়ান এজ Main Uddin Ahmed এঁর সাথে। তারা এখানেও মুদ্রিত ও তরঙ্গায়িত উভয় মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
অল্প সময়েই অনেক কথা, তাঁরা ফেলানি,ছিটমহল,উত্তরবঙ্গ জাদুঘরসহ নানা বিষয়ে জানতে চাইলেন। বললেন ওয়াশিংটন যেহেতু চাচ্ছি আমি যেন আব্রাহাম লিংকনের বাড়ী, গেটিসবার্গ এগুলো দেখি।
আমি পেনসিলভেনিয়া,ওয়াশিংটন ডিসি, ফ্লোরিডা ও লস এঞ্জেলস ঘুরে এলে আবার মিলিত হবো। তখন নাকি বড় কলেবরে আলোচনা ও সংস্কৃতি হবে।
ঘুরে এলে কথা হবে একজন ব্রাত্য আব্রাহাম লিংকন এর চোখে মহাকালের কিংবদন্তী Abraham Lincoln ও তাঁর দেশ নিয়ে।
কি দেখবো আর কি বুঝবো জানিনা। তবে বুঝতে পারছি- এ সুযোগে আবারো এই নিখাঁদ মানুষ গুলোর সান্নিধ্য আমায় জ্যোতির্ময় করবে।
ধন্যবাদ ইনসান ভাই- একজন ক্ষুদেকে বটবৃক্ষদের ছায়ার ঠিকানা দেয়ার জন্য।
ReplyForward
|