কাজী আসমা আজমেরী
বাংলাদেশী পাসপোর্টে বিদেশ ভ্রমন করা অতটা সহজ স্বপ্ন নয়, পয়লা মার্চ Botswana এর kasane জোহানেসবার্গে আসি করে জর্ডানের উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য। দুপুর দুইটা এপ্লাই করে চারটার সময় এসে পৌঁছায় জোহান্সবার্গের এয়ারপোর্টে, সে রাত ৯ টায় ফ্লাইট ছিল ইজিপ্ট এয়ার লাইন্সে আম্মান, জোহান্সবার্গে এসে প্রিটোরিয়া থেকে হোটেল থেকে বড় লাগেজটা উঠিয়ে ছটার সময় এয়ারপোর্টে এসে বসেছিলাম কখন চেকিং ওপেন হবে বলে। ইজিপ্ট এয়ারলাইন্সের বিশাল লাইন ধরে চেকিংয়ে গেলাম, কিন্তু আমার বাংলাদেশী পাসপোর্ট দেখে আমাকে চেকিংয়ে দাঁড়িয়ে করে রাখল, প্রথমে আমার ভিসা জটিলতার কথা বলল যে আমার ভিসা নেই তারপর আমি আমার ভিসা দেখালাম ১ ঘন্টা পরে আমাকে ভিসা ভেরিফিকেশন কনফার্ম করলো।
তারপর বলছে আমার করণা তেস্ট হাতের লেখা কেন, Botswana ইমিগ্রেশনের থেকে এটা করেছে, করেছে কেন আমি তো বলতে পারব না? আর এক ঘন্টা আমাকে কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে করিয়ে রাখলে কি করছে বলল দাড়িয়ে থাকো রাত আটটা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকার পরে আমাকে বলে তোমাকে ফ্লাই করতে দেয়া যাবে না তোমার করোনা টেস্ট সঠিক নয়।
আমি বললাম পাশে করোনা টেস্ট করছে আমি ওখান থেকে করে আসি বলে করা যাবে না তুমি একদিন ট্রাই করো তো আমি ওদেরকে বললাম যে আমার non-refundable টিকেট এটা কখনোই সম্ভব নয়, কিন্তু সাদা সাউথ আফ্রিকান কোনভাবেই আমাকে সাহায্য করলেন না এবং আমার সাথে খুবই বাজে ব্যবহার করলেন। নটা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকে আমাকে ফ্লাই করতেও দিল না।
ছিল জর্ডানে যাব এবং পেট্রা দেখব অনেক কষ্টে জর্ডানের ভিসা পেয়েছিলাম এবং আজ নারী দিবসে জর্ডানের রানী রানিয়া’র কাছ থেকে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট পেয়েছিলাম। নারী দিবসের প্রোগ্রাম এ জয়েন করতে না পেরে আমার মন অনেক খারাপ ছিল। ভিসার মেয়াদ তিন তারিখে শেষ হয় তাদের আর কোন ফ্লাইট ছিলনা ২ তারিখে। আমার ১২২ তম দেশ জর্ডানে যে সম্পূর্ণ করে হলো না।
বাংলাদেশি জন্মগ্রহণ করে একটা জিনিস শিখেছে সব সময় কিভাবে প্রকৃতি এবং সবকিছুর সাথে সংগ্রাম করে চলতে হয় এবং এই সংগ্রাম করতে করতেই আজকে ১২২ তম দেশ নামিবিয়ায় পৌঁছে গেলাম গত ৫ তারিখে চলে আসছি নামিবিয়ার Walivs bay শহরে জোহান্সবার্গ থেকে ফ্লাই করে। এই শহরে ফ্ল্যামিংগো জন্য বিখ্যাত রয়েছে, একদিন ঐ শহরে থেকে চলে এসেছি Swakopmund জার্মানদের একটি ছোট্ট শহরে যেখানে খুবই সুন্দর সাজানো-গোছানো সমুদ্রের পাড় আর তারই পাশে লাল লাল বালি মরুভূমি রয়েছে।
আজ বিশ্ব নারী দিবস ৪ মার্চ এই দিবসে বিশ্বের সমস্ত নারীদেরকে তাদের কাজের জন্য প্রশংসিত করা হয়। যখন আসতো আমি খুব অহংকার এর সাথে বসে থাকতাম দেখার জন্য কি হচ্ছে এবং নিউজপেপারে বসে বসে দেখতাম আর গুগলের। এমন একটি সময় এসেছে যে বিদেশের দুটি সংস্থা আমাকে মনোনীত করেছে আমার কাজের জন্য জেন্ডার বেড়িয়ে থেকে বেরিয়ে এসে কিভাবে কাজ করেছে বিশ্ব ভ্রমণ করেছে এবং তারসাথে আমি আমার সময় দিয়েছি ৪২ হাজার ছেলেমেয়েকে পৃথিবীর আমার ভ্রমণের গল্প শুনিয়ে উদ্বুদ্ধ করেছে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার এবং তাঁরা কেন তাঁদের নিজস্ব স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে পারে। শ্রুতিতে আজকে আমাকে ভারতীয় দুটো সংস্থা সম্মানিত করে Best travel influencer হয়েছে যা Crazy Tales দিল্লী বেস্ট একটি সংস্থা যেখানে গতবছর আমি অনলাইনে আবেদন করি। সারা ইন্ডিয়া ও বিভিন্ন দেশ থেকে সাউথ এশিয়া প্রায় ১০০ জন মহিলার মধ্যে থেকে আমাকে বেছে নেয়া হয়।
ভাবতে অবাক লাগে ঘুরতে ঘুরতে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে ১২২ তম দেশ ভ্রমণ করেছে আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে কনিষ্ঠতম নারী হিসেবে।
প্রথম বাঙালি মেয়ে হিসেবে ১২২ তম দেশ ভ্রমণে যার জন্য কলকাতার বিখ্যাত গ্রন্থ গ্রান্ড কুইন্স গ্লোবাল লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড Peace traveler যোগ্যতা অর্জন করলাম খুবই ভালো লাগছে , ১৬০ জন ইন্ডিয়ার বিভিন্ন জায়গার মেয়েদের ভিতরে থেকে আমাকে বেছে নেয়া হয়েছে। সত্যিই এটা গৌরবের ব্যাপার একজন বাংলাদেশী হিসেবে।
দুটো অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে কিন্তু নামিবিয়া দেশে থাকায় দুটো উপস্থিত হয়ে নিতে পারলাম না।
আজকে অশেষ ধন্যবাদ সবাইকে যারা আমাকে এইসব ওয়ার্ডগুলোতে মনোনীত করেছেন।
দোয়া করবেন যাতে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের সম্মানকে পৌঁছে দিতে পারি এবং বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বাংলাদেশী পাসপোর্ট এর মান উন্নয়নের কাজে সহায়তা করতে পারি। বাংলাদেশি পাসপোর্টে বিশ্বভ্রমণ যাতে করা যায় সেই প্রত্যাশায় আজকের নারী দিবসে সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।