বাংলা আর বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের মাহেন্দ্রক্ষণে আয়োজিত এবং অনুষ্ঠিত ফোবানার ৩৫তম সম্মেলন ২০২১ এর পুরোটা মুহুর্ত ছিল বঙ্গবন্ধুময়।
বঙ্গবন্ধুর মহাকাব্যিক জীবন, কর্ম ও রাজনৈতিক দর্শন এবং মুক্তিযুদ্ধের বীরগাঁথা বর্ণনাই ছিল পুরো সম্মেলন জুড়ে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শানিত লালিত বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক মেট্রো ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগ সহ সভাপতি ৩৫তম ফোবানা সম্মেলনের কনভেনার জি আই রাসেল এবং মেট্রো ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি এবং ৩৫তম ফোবানা সম্মেলনের সদস্য সচিব কথাসাহিত্যিক সাংবাদিক শিব্বীর আহমেদ এর সার্বিক পরিচালনায় এবং নেতৃত্বে বৃহত্তর ওয়াশিংটনের সাত তারকা খচিত গেলর্ড ন্যাশনাল রিসোর্ট এন্ড কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত গত নভেম্বরের ২৬, ২৭ ও ২৮ শুক্র শনি ও রোববার তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় ৩৫তম ফোবানা সম্মেলন ২০২১। সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন ছিল ওয়াশিংটনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আমেরিকান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ সোসাইটি (এবিএফএস)।
২০১৯ সালে ড্রামা সার্কেলের আয়োজনে নিউইয়র্কের নাসাউ কলসিয়ামে অনুষ্ঠিত ৩৩তম ফোবানা সম্মেলনে নির্বাচনে ৩৫তম ফোবানা সম্মেলন আয়োজক হিসাবে জয়লাভ করার পরপরই কনভেনার জি আই রাসেল ও সদস্য সচিব শিব্বীর আহমেদ এর নেতৃত্বে সম্মেলনে আয়োজনে নেমে পড়ে স্বাগতিক কমিটির নেতৃবৃন্দ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে অনুষ্ঠানকে মাথায় রেখে পরিকল্পনা গ্রহন করা হয় পুরো সম্মেলনের। পরিকল্পনা মধ্যে ছিল জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী কেক কাটা, বঙ্গবন্ধুর মহাকাব্যিক জীবন, কর্ম ও রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে সেমিনার, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মাননা এবং বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সাজানো।
পরিকল্পনা অনুসারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গান ’শ্রেষ্ঠ সন্তান’ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে রচনা করা হয় গান ’বজ্রকন্ঠে স্বাধীনতা’। গান দুটির কথা রচনা করেন সম্মেলনের সদস্য সচিব মেট্রা ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি কথাসাহিত্যিক শিব্বীর আহমেদ। শ্রেষ্ঠ সন্তান গানটির সুর করেন ইমতিয়াজ মজুমদার বিবেক ও ইরফানা তুষি। গানটিতে কন্ঠ দেন ইমতিয়াজ মজুমদার বিবেক, ইরফানা তুষি, তুহিন আসাদ, শাহনাজ খান, টুম্পা খান ও শুভেন্দু দাষ শুভ। গানটির পরিচলানায় ছিলেন ইমতিয়াজ মজুমদার বিবেক এবং গানটির অ্যানিমেশন তৈরি করেন জেফরি খান।
অন্যদিকে ’বজ্রকন্ঠে স্বাধীনতা’ গানটির সুর করেছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী শফিক তুহিন। গানটিতে কন্ঠ দিয়েছেন শফিক তুহিন, ক্লোজআপ তারকা শিল্পী কিশোর দাস ও চ্যানেল আই সেরাকন্ঠের শিল্পী রুমানা আকতার ইতি। এছাড়া গানটির কোরাসে কন্ঠ দিয়েছেন শিল্পী, স্বরলিপি, সাজিদ, রাফি, রুকু, ইমরান, লুনা ও অয়ন। গানটিতে গীটার বাজিয়েছেন কেডী এবং পুরো গানটির মিউজিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন মানাম আহমেদ। অনুষ্ঠানের মুলমেঞ্চর স্ত্রীনেই তিনদিনব্যাপী গানগুলো চলছিল দিনরাত। ক্ষনে ক্ষনেই বেজে উঠেছিল বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠ ’ এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”, জয় বাংলা।
কনেভনার জি আই রাসেল ও সদস্য সচিব শিব্বীর আহমেদ এর সার্বিক নির্দেশনায় সাজানো হয় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ধ্রুপদের আয়োজনে ও হিরন চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয় ’অদম্য বাংলাদেশ অবাক বিশ্ব’। কথাসাহিত্যিক শিব্বীর আহমেদের থীমেটিক ভাবনায় অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহন করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় নৃত্যশিল্পী ওয়ার্দা রিহ্যাব ও তার দল।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাজানো হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ’সবুজ জমিনে লালবৃত্ত’। শফিকুল ইসলামের গ্রন্থনা ও উপস্থপনায় এ অনুষ্ঠানে অংশনেয় বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় নৃত্যশিল্পী সাদিয়া ইসলাম মৌ ও ওয়াশিংটনের একঝাঁক নতুন প্রজন্মের শিল্পী। বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক্ বাই এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধের বীরশ্রেষ্ঠদেরকে নিয়ে ’বীরগাঁথা’। ওয়াশিংটনের বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী রোকেয়া হাসি ও তার দল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে পরিবেশন করে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ’তুমি জন্মেছ বলেই জন্মেছে বাংলাদেশ’। সম্মেলন উপলক্ষ্যে প্রকাশিত ম্যাগাজিনে জাতির পিতা ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বিশেষ লেখা ও সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এমপি, বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, জর্জিয়া ষ্টেট সিনেটর শেখ রহমান সহ আরো অনেকে।
৩৫তম ফোবানা সম্মেলনের পুরো তিনটি দিনই ছিল বঙ্গবন্ধুময় এক ফোবানা সম্মেলন। সম্মেলনের মূলমঞ্চের বিশাল এলইডি স্ক্রীনে তিনদিনই ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সগৌরব উপস্থিতি যা ফোবানার ইতিহাসে এই প্রথম। এমনকি বর্হিবিশে^ জাতির পিতার প্রতি এই সম্মাননা ছিল সবচাইতে বড় ও বিশাল।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে কেককাটা, মুক্তিযোদ্ধারে ’স্বাধীনতা পদক” দেয়া সবই ছিল ফোবানার ৩৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম। এজন্য ৩৫তম ফোবানা সম্মেলনকে মূল্য দিতে হয়েছে অনেক। ৩৫তম ফোবানা সম্মেলনকে ঘিরে চলেছিল ষড়যন্ত্র যা ফোবানার শেষদিন পর্যন্ত হয়েছে। স্পন্সর বাতিল, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করা, সম্মেলনের অতিথিকে সম্মেলনে অংশগ্রহন থেকে বিরত রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, সম্মেলন কেড়ে নেয়ার হুমকি সব চেষ্টাই করেছে ষড়যন্ত্রকারীরা। কিন্তু কনভেনার জি আই রাসেল ও সদস্য সচিব শিব্বীর আহমেদ এর দক্ষ নেতৃত্ব ও পরিচালনায় এবং মহান রাব্বুল আলামীনের অশেষ কৃপায় সকল ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করে ৩৫তম ফোবানা সম্মেলন ২০২১ সফল ভাবে সম্পন্ন হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও জাতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে যা ফোবানার ইতিহাসে এই প্রথম।
কথাসাহিত্যিক-সাংবাদিক, ঢাকা