আমি যেসব অভ্যাস আমার মায়ের কাছ থেকে পেয়েছি তার একটি হলো , এমনকি প্রচণ্ড গরমেও আমি খালি গায়ে ঘুমুতে পারি না, একটা পাতলা চাদর বা বাড়িতে সেলাই করা কাঁথা গায়ের ওপর দিতে হয়। সেটা সরে গেলে ঘুম ভেঙ্গে যায়। ছোটবেলা থেকে সেটা লক্ষ করে মা বলতেন, ‘তোমার এই অভ্যাসটা একেবারে অবিকল আমার মতো।’ প্রথম যেবার ঢাকায় স্কুলে পড়তে যাই মা চামড়ার সুটকেসের মধ্যে একটা পাতলা কাঁথা সঙ্গে দিয়েছিলেন। সেটা নিজেই ধুইতাম আমি। এরপর প্রায় তিন চার বছর পর পর পুরনো শাড়ি দিয়ে নিজে সেলাই করে কাঁথা আমাকে দিতেন।
সেরকম একটি কাঁথা আমি আমেরিকায় নিয়ে এসেছিলাম আসার সময়। এরপর কেউ এলে মা কাঁথা দিতেন প্রথম দশ বছর, সেই দশ বছর নিউ ইয়র্ক থেকে আমি বাড়ি যেতে পারিনি ছাত্রজীবনে। বহন করা একটু কঠিন তবুও আমার এক বন্ধু দুবার আমার জন্য কাঁথা এনেছিলেন মায়ের দেয়া। প্রতিদিনই রাতে ঘুমুতে যাওয়ার সময় কাঁথাটা টেনে গায়ে দিতে গেলেই আমি কেন জানি না ভাবতাম এতে মায়ের শরীরের গন্ধ মিশে আছে। শেষ কাঁথাটি দিয়েছেন মা ২০১৮ সালে যখন যাই। সেটা হালকা গোলাপি রঙয়ের মায়ের ব্যবহার করা পাতলা মিলের সূতি শাড়ি দিয়ে মা নিজ হাতে সেলাই করেছেন। আগের কয়েকটা কাঁথা ছিঁড়ে গিয়েছিল বলে ফেলে দিয়েছি, বুঝিনি! কিন্তু মায়ের চলে যাওয়ার পর একমাত্র কাঁথাটি আমি ধুয়ে তুলে রাখলাম, আর ব্যবহার করিনি।
গতকাল কেন জানি কাঁথাটি সুটকেস খুলে বের করতে ইচ্ছে হলো। কাঁথাটি ধরে টেবিলে রাখার পর আমার কী যে হলো, আমি আর সারাদিন কোন কাজ করতে পারলাম না। সারাটা দিন শুয়ে শুয়ে বিষণ্ণ কাটালাম! মায়ের শরীরের গন্ধটা বার বার স্মরণ করার চেষ্টা করলাম। চোখ ঝাপসা হয়ে রইলো প্রায়-সারাদিন!