২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করে শেয়ারবাজারে ফ্রেশ ফান্ড (নতুন অর্থ) বিনিয়োগের জন্য দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম সই করা এ সংক্রান্ত চিঠি গত ২৩ মার্চ সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বরাবর পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে দেশের শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো প্রয়োজন উল্লেখ করে বলা হয়েছে, দেশের শেয়ারবাজারে ৮০ শতাংশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো উচিত।
এতে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য প্রতিটি ব্যাংকে ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়। যা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে ব্যাংকের এক্সপোজারের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
আইনানুযায়ী ব্যাংক মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। অনেক ব্যাংকের বিনিয়োগ এ সীমার নিচে রয়েছে। এসব তথ্য তুলে ধরে চিঠিতে, ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন এবং পুঁজিবাজারে নতুন অর্থ বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। তারল্য সংকট ও আস্থাহীনতার কারণে শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক দরপতন দেখা দিলে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোর কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল চায়।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতামত জানতে চাইলে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়। অর্থ মন্ত্রণালয় শেয়ারবাজারে তারল্য সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয়। এরপর ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বিশেষ তহবিল গঠন এবং বিনিয়োগের নীতিমালা বিষয়ে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত যেকোনো তফসিলি ব্যাংক রেপোর মাধ্যমে এ সুবিধা নিতে পারবে।
তহবিল গঠনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়, আর্থিকখাতের প্রধান মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পুঁজিবাজারে তফসিলি ব্যাংকগুলোর নির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগের আইন রয়েছে। দেশের পুঁজিবাজার ও মুদ্রা বাজারের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনকারী হিসেবে তফসিলি ব্যাংকগুলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য। পুঁঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে ক্রমাগত তারল্য প্রবাহ বজায় রাখার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান (মার্চেন্ট ব্যাংক ও ডিলার লাইসেন্সধারী ব্রোকারেজ হাউজ) এবং অন্যান্য মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজকে শুধু পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় এ তহবিল সরবরাহ করা হবে।
তফসিলি ব্যাংকগুলো চাইলে নিজস্ব উৎস থেকে তহবিল যোগান দিতে পারে। এছাড়া ধারণকৃত ট্রেজারি বিল বা বন্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করতে পারবে।
এছাড়া প্রথমে নিজ উৎস থেকে তহবিল গঠন করে পরে ট্রেজারি বিল বা বন্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সমপরিমাণ অর্থ নেওয়া যাবে। এ তহবিল থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ২৬ ক ধারায় বর্ণিত বিনিয়োগসীমা অতিরিক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।
ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য থেকে ট্রেজারি বন্ড বা বিলের মাধ্যমে এ সুবিধা নিতে হবে। ট্রেজারি বন্ড বা বিলের রেপো মূল্যের ৫ শতাংশ মার্জিন হিসেবে রেখে তারল্য সুবিধা দেওয়া হবে। নগদ রেপোর অর্থ পরিশোধে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণের দিনে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজের বাজার মূল্য আদায়যোগ্য অর্থ অপেক্ষা কম হলে তা আগে গৃহীত মার্জিন থেকে সমন্বয় করা হবে। সমন্বয়ের জন্য অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন হলে ব্যাংক তা দিতে বাধ্য থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৯০ দিন মেয়াদি রেপো দেওয়া হবে। রেপোতে বর্ণিত সময়সীমা ২০২৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে পুনর্নবায়নের সুবিধা থাকবে। তবে, এক্ষেত্রে তহবিল ব্যবহারের সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচ্য হবে।
তারল্য সুবিধা পেতে ব্যাংকগুলোকে যেসব শর্ত পরিপালন করতে হবে, সেগুলো হলো :
এ তারল্য সুবিধা পেতে অর্থের কাক্সিক্ষত পরিমাণ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশনের মহাব্যবস্থাপক বরাবর আবেদন করতে হবে।
মেয়াদোত্তীর্ণ রেপো নবায়নের প্রয়োজন হলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পাঁচদিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের একই বিভাগে আবেদন করতে হবে।
আবেদনের সময় সম্পাদিত বিনিয়োগের প্রমাণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাব ও বিও হিসাবের বিবরণ দাখিল করতে হবে।
এসব বিষয়ে বাংলাদেশে প্রচলিত সংশ্লিষ্ট আইন এবং সময়ে সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারি করা অন্যান্য নির্দেশনা পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।