বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী বলেছেন, দেশীয় সিরামিক শিল্প রক্ষা ও প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে উদীয়মান এই শিল্পের বিকাশে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার।
গত ২ এপ্রিল রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হলে সিরামিক সেক্টরের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিসিএমইএ’র সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। তিনি বলেন, সিরামিক খাতটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় আমদানি-বিকল্প একটি শিল্পখাত। অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে উদ্যোক্তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় রপ্তানি ও আমদানি-বিকল্প পণ্য হিসেবে দেশে এরই মধ্যে ৭০টি সিরামিক (টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারি ওয়্যার) শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, এ শিল্পে দেশি ও বিদেশি মোট বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এছাড়া রপ্তানিখাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পরিমাণ বার্ষিক প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে প্রায় ৫ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা।
এই খাতের উদ্যোক্তাদের সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, ক্রমাগত গ্যাসের দাম বাড়ায় বিপাকে রয়েছে উদ্যোক্তারা। গ্যাসনির্ভর এই শিল্পে বিকল্প কোনো জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ নেই। গত ১০ বছরে শিল্পখাতে গ্যাসের মূল্য বেড়েছে প্রায় শতভাগ। সিরামিক শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের অন্যতম উপকরণ এই গ্যাস, যাতে পণ্যের মোট উৎপাদন ব্যয়ের ১১ থেকে ১২ শতাংশ খরচ হয়।
এ শিল্পে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি না করতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বিদেশি পণ্যের সঙ্গে মূল্য প্রতিযোগিতার কারণে দেশীয় তৈরি পণ্যের মূল্য ইচ্ছেমতো বাড়ানো যায় না। এতে করে উৎপাদককে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এমতাবস্থায়, সরকারের ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে অংশীদার হিসেবে জাতীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধনের লক্ষে সিরামিক (টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারি ওয়্যার) শিল্পে গ্যাসের দাম স্থিতিশীল রাখতে হবে।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, গত চার বছরে তিতাস গ্যাস কোম্পানি এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার অধিক মুনাফা করেছে। এরপরেও লোকসানের দাবি তুলে অবিবেচকের মতো আবারও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আদৌ যুক্তিসংগত বলে মনে করি না।
তিতাস কর্র্তৃপক্ষের সমালোচনা করে তারা বলেন, অতীতে দাম বাড়ানোর সময় তিতাস কর্তৃপক্ষ চাহিদামাফিক উপযুক্ত মাত্রায় উন্নত মানের গ্যাস নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তিতাস কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত সেই সক্ষমতা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। সেমিনারে অন্যাদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান দুলাল কৃষ্ণ সাহা, এফবিসিসিআই’র সভাপতি জসিম উদ্দিন, এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান, দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) প্রেসিডেন্ট মো. মামুনুর রশিদ, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন, বিসিএমইএ’র সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দিন ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মইনুল ইসলাম।