• শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:৩৬ অপরাহ্ন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়াই আমাদের মূল কাজ

সাক্ষাৎকার গ্রহণ : এনামুল হক এনাম ও শাহরিয়ার ইফতেখার ফেরদৌস / ১১১ Time View
Update : বুধবার, ৬ জুলাই, ২০২২


ড. যশোদা জীবন দেবনাথ, সিআইপি
ম্যানেজিং ডিরেক্টর, টেকনোমিডিয়া লিমিটেড
পরিচালক, এফবিসিসিআই
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : এনামুল হক এনাম ও শাহরিয়ার ইফতেখার ফেরদৌস
এ সময়ের এক মেধাবী ও সৃজনশীল মানুষের নাম ড. যশোদা জীবন দেবনাথ। মানবকল্যাণে নিবেদিত এই ব্যক্তিত্ব ইতোমধ্যেই ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছেন। ব্যাংকিং খাতের আধুনিকায়নে উদ্যোক্তা ব্যক্তিত্ব ড. যশোদা জীবন দেবনাথ টেকনোমিডিয়া লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। টেকনোমিডিয়া লিমিটেড দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় এটিএম সিস্টেম স্থাপন করে এই খাতকে অনন্য এক মাত্রায় তুলে এনেছে। ড. যশোদা জীবন দেবনাথ একই সাথে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যংক লিমিটেড ও বেঙ্গল ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের পরিচালক। এই উদ্যমী মানুষটি পাম্পাস রেস্টুরেন্ট বিডি লিমিটেডের পরিচালক এবং বিনিময় সিকিউরিটিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান। তিনি দেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত। তিনি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক, এফবিসিসিআই’র পরিচালক, বিসিসিআই কমনওয়েলথ’র ইনডিপেন্ডেন্ট স্টেট-এর পরিচালক, ভারত বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং দৈনিক ভোরের সময়-এর উপদেষ্টা সম্পাদক। ড. যশোদা জীবন দেবনাথ সত্যদর্শী রাজনীতিবিদ হিসেবেও সমধিক পরিচিত। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য হিসেবে শুধু কেন্দ্রীয় রাজনীতিতেই নন, নিজ এলাকা ফরিদপুরের উনয়নেও নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিত্ব। তিনি সরকারি শ্যামপুর সুগার মিলস লিমিটেডের পরিচালক এবং অডিট কমিটির চেয়ারম্যান। তিনি প্রটেকশন ওয়ান প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং ধানমন্ডি ক্লাব লিমিটেডের নির্বাহী সদস্য। ড. যশোদা জীবন দেবনাথ টেকনো কনফিডেন্স সিকিউরিটিস লিমিটেডের চেয়ারম্যান, মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী।
ড. যশোদা জীবন দেবনাথ শিক্ষা জীবনে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন এবং ডক্টর অব ফিলোসফি অর্জন করেন। তিনি একজন মানবপ্রেমী। তিনি দেশের উন্নয়নে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশিত কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। তিনি নিজ এলাকার দরিদ্র ও অসহায় মানুষের বন্ধু হিসেবে পরিচিত। একজন লেখক হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বই লিখেছেন তিনি। তার লেখা বই দু’টির নাম ‘মহানায়কের ইতিকথা’ ও ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন’ পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেছে। জাতীয় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তার লেখা প্রবন্ধ ও নিবন্ধ গুরুত্বসহকারে ছাপা হয়।
ড. যশোদা জীবন দেবনাথ সম্প্রতি অর্থকণ্ঠকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে যা বলেন এখানে তা উপস্থাপন করা হলো-

অর্থকণ্ঠ : গত বছর আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করেছি। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ কতটুকু এগিয়েছে- আপনার কাছ থেকে জানতে চাইছি।
ড. যশোদা জীবন দেবনাথ : আমরা সত্যই সৌভাগ্যবান যে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং এ দেশের মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী একই সাথে উদযাপন করেছি। স্বাভাবিকভাবে এটি ছিল এদেশের মানুষের জন্যে একটি আলোকিত ও গৌরবময় বছর।
আপনারা জানেন, এদেশের জন্ম হয়েছে রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। বাঙালির অবিসংবাদিত মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে এদেশের মানুষ পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। যার যা কিছুু ছিল তা নিয়েই যুদ্ধ করেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধারা ’৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর দেশকে শত্রুমুক্ত করেছেন। স্বাধীনতার জন্যে ৩০ লাখ মানুষ রক্ত দিয়েছেন, দু’লক্ষাধিক মা-বোনকে সম্ভ্রম বিসর্জন দিতে হয়েছে। আমরা আমাদের কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ অর্জন করেছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি স্বাধীন সার্বভৌম, শোষণমুক্ত ও ধর্মনিরপেক্ষ সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ তিনি শুরু করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা বাধাগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে তাঁর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী ও বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মানবিক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ তাঁর আকাক্সিক্ষত পথে হাঁটতে শুরু করেছে।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমরা হয়তো কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জন করতে পারিনি, তবে বাংলাদেশ এখন বিশ্ববুকে গৌরবময় জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছে। স্বাধীনতার প্রাক্কালে দেশে অসচ্ছল ও হতদরিদ্রের হার ছিল ৮০% এর উপরে এখন তা নেমে ২৪% এর নিচে এসেছে। শিক্ষার হার ছিল ১৭% এখন তা ৭৮% এর উপরে, গড় আয়ু ছিল ৪২ বছর এখন তা ৭৪ বছরের উপরে, মাথাপিছু আয় ছিল ১২৯ ইউএস ডলার এখন তা ২৫০০ ডলারেরও বেশি। ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ২৯৭ মিলিয়ন ডলার, ২০২০ সালে তা ৪৩ বিলিয়ন ডলারের উপরে এবং আমদানির পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন ডলার। ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে জিডিপির আকার ছিল ৭৫৭৫ কোটি টাকা, এখন এর পরিমাণ প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ডলার, রেমিট্যান্স ২১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ।


দেশে ছোট-বড়ো অসংখ্য শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। ১৯৭৩ সালে প্রতি হাজারে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৫৩, ২০১৮ সালে তা ২৫ এর নিচে নেমে এসেছে। মাতৃমৃত্যুর হার ১৯৯৯ সালে ছিল ৪.৭৮ শতাংশ, এখন তা ১.৬৯ শতাংশে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বিশাল স্থাপনা নির্মাণ করে বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছে। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে বিশ্ব অবাক হয়েছে। যে আমেরিকানরা বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র দেশ বলে তাচ্ছিল্য করেছিল সেই দেশেরই সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা অন্যান্য অনুন্নত রাষ্ট্রকে উন্নয়নের জন্যে বাংলাদেশকে অনুসরণ ও অনুকরণের কথা বলেছেন। এটি আমাদের জন্যে সত্যিই গর্বের বিষয়।
আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি, বাংলাদেশের কোনো মানুষ এখন আর ক্ষুধায় মৃত্যুবরণ করে না। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুত অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে।
সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশ বর্তমানে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। আশা করা যায়, ২০৪০ সালের মধ্যে এটি মধ্যম আয়ের অবস্থান অতিক্রম করে উন্নত দেশে পরিণত হতে সক্ষম হবে।
এই উন্নয়নের পেছনে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্ব প্রধান ভূমিকা পালন করছে বলে আমি মনে করি।
অর্থকণ্ঠ : আপনি আপনার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বের অন্যতম মানবিক নেত্রী হিসেবে উল্লেখ করেছেন, কোন বিষয়টি মূল্যায়ন করে?
ড. যশোদা জীবন দেবনাথ : দেখুন, আমাদের সফল জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন এনে দিয়েছেন- দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের জান্তা সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বিশ্বের বুক থেকে মুছে দিতে চেয়েছিল- মানবিক নেত্রী শেখ হাসিনা তাদের প্রায় ১১ লাখ মানুষকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের বুকে মানবিকতার অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। বিশ্ব আজ তাঁকে ‘মানবিক নেত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। তিনি তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধুর মতোই সাহসী একজন বিশ্ব নেতা- যিনি বিশ্বের সকল নির্যাতিত মানুষের কণ্ঠস্বর। এদেশের মানুষ তাঁকে নিয়ে গর্বিত।
অর্থকণ্ঠ : আপনি টেকনোমিডিয়া লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আপনার এই প্রতিষ্ঠান কতটুকু ভূমিকা রাখছে?


ড. যশোদা জীবন দেবনাথ : একথা আজ চরম সত্য যে, বাংলাদেশ উন্নত দেশের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া একটি রাষ্ট্র। এটি সম্ভব হচ্ছে উন্নত মানের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় হচ্ছেন বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরের অন্যতম নায়ক। তিনি তার মেধা ও প্রজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অনন্য এক উঁচু মাত্রায় তুলে এনেছেন। তাঁর স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশকে কার্যকর করার লক্ষ্যেই ২০০১ সালে আমি প্রতিষ্ঠা করেছি টেকনো মিডিয়া লিমিটেড। এটি আইসিটি বিষয়ক সমস্যা সমাধানের পথ প্রদর্শক। এটি একটি ব্যাপক ব্যাংকিং সলিউশন কোম্পানি, এটি ব্যাংকের এনকোডেড চেক প্রসেসিং, এটিএম পরিষেবা, পেমেন্টের মতো অগণিত ব্যাংকিং পরিষেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সিস্টেম সলিউশন, ক্রেডিট এবং ডেবিট কার্ড ম্যানেজমেন্ট এবং ব্যাংক থেকে গ্রাহকদের টাকা লেনদেন সংক্রান্ত পরিষেবা প্রদান করছে টেকনোমিডিয়া লিমিটেড। ব্যাংকিং খাতের এই ডিজিটালাইজেশনের ফলে দেশের উন্নয়ন দ্রুততর হবার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
অর্থকণ্ঠ : ব্যাংকিং খাতের ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে টেকনোমিডিয়া লিমিটেড কতটুকু ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে?
ড. যশোদা জীবন দেবনাথ : এক্ষেত্রে আমাদের অবদান অনেক। দেশে বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথের সংখ্যা ১৪৫০০। এর মধ্যে টেকনোমিডিয়ার বসানো মোট এটিএম বুথের সংখ্যা ৫ হাজারের মতো। আগেই বলেছি, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অংশ। কারণ দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে পশ্চাদপদ রেখে দেশকে উন্নত করা যায় না। সেই কাজটিই আমরা করছি।


অর্থকণ্ঠ : এটিএম মেশিন আমদানি করতে হয় এবং এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়ে যায়- আপনার চিন্তাভাবনা কি?
ড. যশোদা জীবন দেবনাথ : আপনি ঠিকই বলেছেন। এগুলো আমদানি করতে প্রতি বছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়ে যায়। এ বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা টেকনোমিডিয়ার পক্ষ থেকে ঢাকার অদূরে কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কে এটিএম মেশিন অ্যাসেম্বলিং প্ল্যান্ট বসানোর উদ্যোগ নিয়েছি।
আশা করছি, দ্রুত এর কাজ শুরু হবে। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। তা ছাড়া বিদেশেও রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ জন্যে আমরা সরকারের নীতি সহায়তা চাই।
অর্থকণ্ঠ : আপনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে আপনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে সরকারের কার্যক্রমকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
ড. যশোদা জীবন দেবনাথ : বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর পরবর্তী সরকারগুলো স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম-নিশানা মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল। আমাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা ২০ হাজার টাকা, যাতায়াত ভাড়া ফ্রি, তাদের আবাসন, বিনা সুদে ব্যাংক ঋণসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি জাতীয় দিবসসমূহে শহীদ পরিবার ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষভাবে সম্মান দিয়ে থাকে।
আমি বিশ্বাস করি, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম সাহসিকতার জন্যেই আমরা বাংলাদেশ অর্জন করতে পেরেছি।

অর্থকণ্ঠ : আপনি ব্যবসায়ী হয়েও ফরিদপুর-৩ সংসদীয় এলাকার রাজনীতিতে ব্যাপকভাবে সক্রিয়। এলাকার উন্নয়নে আপনি কি কি উদ্যোগ নিচ্ছেন?
ড. যশোদা জীবন দেবনাথ : আমি দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সক্রিয়। নিজ এলাকা ফরিদপুর-৩ আসনের গণমানুষের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান, রাস্তাঘাট উন্নয়ন, তৃণমূল মানুষদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করছি। একটি বিষয় সত্য যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন করলেও তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কাছে সেই চিত্র সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি বা হয় না।
আমি শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন বার্তা নিয়ে শহর থেকে গ্রামে ছুটে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে নির্ঘুম কাজ করছি। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং জীবন মান উন্নয়নেও কাজ করছি। আমি মনে করি, কর্মীরাই পার্টির শক্তি। ঈদ এবং পূজায় দরিদ্র মানুষদের ঈদ সামগ্রী, পূজার সামগ্রী, শীতে শীতবস্ত্র প্রদান করি। করোনা দুর্যোগ চলাকালে মানুষের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিয়েছি।
পুলিশের কল্যাণে ফরিদপুর জেলা পুলিশকে ৫০ শতাংশ জায়গা লিখে দিয়েছি। তাদের ব্যবহারের জন্যে ডাবল কেবিন পিকআপ ভ্যান দিয়েছি। এলাকার মেধাবী ও দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ করে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাঝে বই, খাতা, কলমসহ বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করে থাকি।
এছাড়াও সরকারি বরাদ্দ ছাড়া নিজ উদ্যোগে রাস্তা মেরামত, সাঁকো, পুল ও মাটির রাস্তা নির্মাণ করে দিচ্ছি। স্থানীয় পর্যায়ে স্কুল, মাদ্রাসা নির্মাণ এবং অসচ্ছল ছাত্রদের এককালীন অর্র্থ দিয়ে থাকি।


অর্থকণ্ঠ : বর্তমানে দেখা যায়, কোনো রাজনৈতিক নেতা যদি ভালো কাজ করেন দলের মধ্যেই তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেন- আপনার মন্তব্য কি?
ড. যশোদা জীবন দেবনাথ : আমি সব সময়ই ব্যক্তির চেয়ে দল এবং দলের চেয়ে দেশকে প্রাধান্য দিই। এটা ঠিক যে, বড় দলে নেতৃত্বের গ্রুপিং থাকে। আমি বিশ্বাস করি, সঠিক প্রতিযোগিতা হলে দল ও জনগণ নেতাদের থেকে অধিক সেবা পায়। কিন্তু অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, কাউকে ভালো কাজ করতে দেখে অনেকেই প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে। এরা আসলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের লোক হতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু চাইতেন দলে নেতৃত্বের বিকাশ হোক- যে বেশি ভালো কাজ করবে দল তাকে বেছে নেবে।
অর্থকণ্ঠ : সাম্প্রতিক সময়ে দেশে অনিয়ম ও দুর্নীতি অনেক বেড়েছে যা সরকারের সুনামকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে আপনার প্রস্তাবনা কি?
ড. যশোদা জীবন দেবনাথ : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা দিয়েছেন। আমি মনে করি, উন্নয়নশীল একটি দেশে দুর্নীতির অনেক সুযোগ থাকে। বিএনপি সরকারের আমলে দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল- আমরা তা কমিয়ে আনতে পেরেছি। তবে, বাস্তব বিষয় হচ্ছে, দেশ যত ডিজিটালইজড হবে দুর্নীতিও কমে আসবে। একই সাথে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। অবশ্য এটাও দেখার বিষয় যে, বর্তমান সরকার দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপারে দলীয় লোকদেরও ছাড় দেয়নি।
অর্থকণ্ঠ : আপনি একজন বিশিষ্ট ব্যাংক উদ্যোক্তা এবং বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালক। দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আধুনিকায়ন কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?
ড. যশোদা জীবন দেবনাথ : ব্যাংকিং ব্যবস্থা হচ্ছে দেশের অর্থনীতির প্রাণ। প্রাণ যদি সচল থাকে তবে সবকিছুই গতিময় হয়। যে কোনো দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্যে চাই আধুনিক ব্যাংকিং।
আপনার হয়তো স্মরণ আছে, কয়েক বছর আগে বিএনপির হরতাল-আন্দোলনে দেশ স্থবির হয়ে পড়েছিল। কিন্তু ব্যাংকিং ব্যবস্থা আধুনিক হওয়ায় অর্থনীতি স্থবির হয়নি। এখন ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে ব্যাংকে যেতে হয় না। এটিএম বুথ থেকে তোলা যায়। মাইকার চেক হওয়ায় ঢাকার অ্যাকাউন্টের টাকা দিনাজপুরের শাখা থেকে তোলা যায়। পণ্য কেনার জন্যে বাজারে টাকা নেয়ার প্রয়োজন হয় না।
এভাবেই দেশের অর্থনীতি এখন অনেক সচল। একই সাথে আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় দুর্নীতি, অনিয়ম বন্ধ এবং সময়ের অপচয় রোধ হয়।
অর্থকণ্ঠ : আমরা জেনেছি, মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনাদের পরিবার যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; সে সময়ের কোনো স্মৃতি?
ড. যশোদা জীবন দেবনাথ : ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই এলাকার কিছু স্বাধীনতাবিরোধী চক্র আমার পিতামহসহ পরিবারের সাতজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আমাদের বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। আমার বাবা-মা আমাদের সঙ্গে নিয়ে দীর্ঘ সাত দিন পায়ে হেঁটে ভারতের নদীয়াতে যান এবং আমরা সেখানে শরণার্থী শিবিরে নয় মাস কাটিয়েছিলাম।
অর্থকণ্ঠ : আপনি রাজনীতিতে আসার কারণে অনেকেই আপনার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে- আপনার বক্তব্য কি?
ড. যশোদা জীবন দেবনাথ : এদেশের কতিপয় মানুষ বরাবরই ঈর্ষাকাতর। তারা কেউ কিছু ভালো করলে তা সহ্য করতে পারে না। আমি একটা বিষয় বলি- তা হচ্ছে অন্যের প্রশংসা করতে মনের সততা লাগে। মনের সততাই তার যোগ্যতা তৈরি করে দেয়।
যোগ্যতাহীন লোকেরা নিন্দা করবে এটাই স্বাভাবিক। হিংসা তাদের সহজাত প্রবৃত্তি। আরেকটি বিষয় যোগ মেলালেই দেখা যায়, কোকিল বছরে একবারই আসে সৌভাগ্য বা বসন্ত নিয়ে। আর কাক সব সময়ই থাকে দুর্ভাগ্য নিয়ে। আমি রাজনীতিতে এসেছি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে।
রাজনীতিতে নেমেছি দেশমাতৃকার প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে- নিজে লাভবান হবার জন্যে নয়। মানুষ জানে, রাজনীতি করে আমার অর্থবান হতে হবে না। আমি মানুষের সেবা করার জন্যেই রাজনীতি করি।
অর্থকণ্ঠ : বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয়হীন-ঘরহীন মানুষদের বাড়ি তৈরি করে দেয়ার কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। ইতোমধ্যে অসংখ্য বাড়ি আশ্রয়হীনদের মাঝে বিতরণও করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার কারণে অনেক বাড়ি ইতোমধ্যেই ধসে পড়ছে- আপনার বক্তব্য কি?
ড. যশোদা জীবন দেবনাথ : বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এদেশের মানুষের মঙ্গল নেত্রী। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে শুধু লালনই করেন না, সেটি বাস্তবায়নেও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু গৃহহীন মানুষদের জন্যে গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর মৃত্যুর পর এই কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় পর জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেই সেই কার্যক্রম পুনরায় শুরু করেছেন। কিন্তু দুঃখজনক যে, এক শ্রেণির লোভী সুবিধাবাদী নেতা ও সরকারি কর্মচারীদের কারণে আশ্রয়হীনদের জন্যে নির্মিত ঘর নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আমি দাবি করছি, অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হোক।
অর্থকণ্ঠ : পেশাজীবনে আপনি একজন সফল উদ্যোক্তা এবং ন্যায়নিষ্ঠ রাজনীতিবিদ। আপনার জীবনের কোন স্বপ্নটি আপনাকে ঘুমোতে দেয় না?
ড. যশোদা জীবন দেবনাথ : আমি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের একজন নগণ্য আদর্শিক সৈনিক। আমি মনে করি, এই মহামানবের জন্ম না হলে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হবার সুযোগ পেতাম না। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তিনি তাঁর নীতি, আদর্শ ও স্বপ্নকে আমাদের মাঝে রেখে গেছেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি স্পষ্ট বলেছিলেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি সত্য, কিন্তু বঙ্গবন্ধু যে মুক্তির সংগ্রামের কথা বলেছিলেন তা অব্যাহত আছে। আমি সেই মুক্তি সংগ্রামকে এগিয়ে নেয়ার একজন সৈনিক। আমি বিশ্বাস করি, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা মুক্তি অর্জন করবোই। বাংলাদেশ পরিণত হবে শোষণমুক্ত স্বনির্ভর সোনার বাংলায়। বঙ্গবন্ধুর সেই উদাত্ত আহ্বান অর্থাৎ তাঁর সেই স্বপ্ন আমাকে ঘুমোতে দেয় না। আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়াই আমাদের মূল কাজ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category