ভোক্তাদের জন্য পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবারের জোগান নিশ্চিতের লক্ষে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ‘ঢাকা ফুড সিস্টেম’ প্রকল্পের আওতায় ৬টি কৃষকের বাজার স্থাপিত হতে যাচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের পরামর্শে ৬টি ওয়ার্ডে অস্থায়ীভাবে কৃষকের বাজার স্থাপন করা হবে। যেখানে প্রতি সপ্তাহে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক যাচাইকৃত ১০ জন কৃষক তার উৎপাদিত নিরাপদ পণ্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করবেন।
গত ১৬ জুন রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে অ্যাম্বেসি অব দ্য কিংডম অব দ্য নেদারল্যান্ডস, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে এলাকাভিত্তিক কৃষকের বাজার স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের প্রারম্ভিক সভায় আয়োজকরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
আয়োজকরা বলেন, যথাযথ বাজার ব্যবস্থার অভাব এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাবে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে ভোক্তারাও সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কৃষকের বাজারের মাধ্যমে উভয়পক্ষই উপকৃত হবেন এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে এই উদ্যোগের মাধ্যমে।
সভায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ঢাকা মহানগরে ১৬টি কৃষকের বাজার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর আওতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে নতুন ৫টি (৬নং ওয়ার্ডসহ মোট ৬টি) কৃষকের বাজার স্থাপিত হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, সিভিল সোসাইটিসহ সব অংশীদারদের সহযোগিতা কামনা করছি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নিরাপদ খাদ্যপণ্য ক্রয়ে আমরা প্রত্যেকেই আগ্রহী। আমাদের ওয়ার্ডে কৃষকের বাজার স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় স্থান ও সুবিধাদি দেওয়া সম্ভব। এ বাজারে যেন কোনো ধরনের চাঁদাবাজি না হয় তা কাউন্সিলর অফিস থেকে নিশ্চিত করা হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান বলেন, আমাদের ফল উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার ১১ শতাংশের বেশি। উৎপাদনে এগিয়ে থাকলেও পরিবহন, বিপণন, সংরক্ষণে আমরা পিছিয়ে আছি বহুগুণে। সঠিক বাজার ব্যবস্থার অভাবে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কৃষকের বাজারের মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভোগীদের সরিয়ে কৃষকদের উপকৃত করা সম্ভব। এ উদ্যোগটি ছোট হলেও সুদূরপ্রসারী। ৬টি ওয়ার্ড থেকে উৎসাহিত হয়ে ৫৪টি ওয়ার্ডে উদ্যোগটি বিস্তৃত করা সম্ভব।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, করপোরেট কালচারের কারণে আমাদের কৃষি এবং খাদ্য গ্রহণের ধরন পরিবর্তন হয়ে গেছে। বাজার ব্যবস্থাপনায় অসৎ কার্যক্রম এবং শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনকে প্রাধান্য দেওয়ার কারণে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ১, ২, ১৯, ৩০, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে (৬ নম্বর ওয়ার্ডে ইতোমধ্যে বাজার আছে) কৃষকের বাজার স্থাপনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, ওয়ার্ড কাউন্সিলের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হবে। এ বাজারে নিরাপদ খাদ্যপণ্য নিশ্চিত করতে হবে এবং আমাদের পক্ষ থেকে মনিটরিং থাকবে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সাসটেইনেবেল এগ্রিকালচার স্পেশালিস্ট জাহাঙ্গীর হোসেন, ফ্রেশ মার্কেট ট্রেইনার এসকে মোহিবুল্লাহ, ঢাকা উত্তরের সিটি ফুড কোঅর্ডিনেটর নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম-সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক গোলাম হাসান মজুমদার, ঢাকা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিএ মোস্তফা কামাল, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমান, নাঈমা আকতার প্রমুখ। অর্থকণ্ঠ প্রতিবেদক