মশিউর আনন্দ, ঢাকা
চলতি বছরের মধ্যে চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে, বলেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিবহন মাস্টারপ্ল্যানসহ মেট্রোরেলের সমীক্ষার প্রিলিমিনারি সার্ভে সংক্রান্ত’ মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, আগামী বছরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাতে চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারেন, সেজন্য সম্ভাব্যতা যাচাই এ বছরেই শেষ করার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মন্ত্রী হাছান বলেন, প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে মেট্রোরেল স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন এবং সেটি বাস্তবায়নের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়ন তিনি নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন এবং সেটি শুধু ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। আজকে চট্টগ্রামকে ঘিরে যেভাবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হচ্ছে, মেট্রোরেল স্থাপনের জন্য যে ঘোষণা দিয়েছেন, তাতে এটি স্পষ্ট যে, আমরা অনেক কিছু দেখতে পাই না, যা ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেখতে পান।
এসময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রতিষ্ঠার জন্য তিনিও শুরু থেকেই উদ্যোগী ছিলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, পুরনো চট্টগ্রাম শহরের সদরঘাট, চকবাজার, বহদ্দারহাট ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে মেট্রোরেল আন্ডারগ্রাউন্ডে করা যেতে পারে। অন্য এলাকায় ওপর দিয়ে তা করা যেতে পারে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কর্ণফুলীর দক্ষিণ পার, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরকে মেট্রোরেলের সঙ্গে সংযুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়ার উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা কোইকা চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করবে।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, বে টার্মিনালসহ বিভিন্ন চলমান উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন হলে আগামী ১০ বছরে চট্টগ্রামে মানুষ দ্বিগুণ হবে বলে সভায় জানান চট্টগ্রাম-৭ আসনের সংসদ সদস্য ড. হাছান।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ মেট্রোরেল মাটির নিচ দিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেন। নির্মাণকাজ চলাকালে জনগণের ভোগান্তি সহনীয় পর্যায়ে রাখার দিকে নজর দেবার অনুরোধ জানান তারা।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং চট্টগ্রাম জেলার ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সঞ্চালনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতার, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল আলম, চিাটগাং চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুল আলম, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল মালেক, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়াল এডমিরাল এম শাহজাহান, কোইকা’র ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর ইয়ং কিন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর প্রমুখ সভায় বক্তব্য রাখেন।
এর পরপরই মন্ত্রী হাছান মাহমুদ চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন। বক্তৃতায় সমসাময়িক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরকার একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু তারা( বিএনপি) তো সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছেন, কোনো নির্বাচনে যাবেন না। এভাবে না বলতে বলতে তারা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় -সেটি আমার প্রশ্ন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে রাজনৈতিক দল একটি গণসংগঠন সেই দল নির্বাচন ছাড়া টিকে থাকতে পারে না। তারা সেই সত্যটা উপলব্ধি করতে পারছেন না। যারা গণরায়ে বিশ্বাস করে সেই রাজনৈতিক দল নির্বাচন ছাড়া টিকে থাকতে পারে না। বিএনপি যে ভুল করছে তা আত্মহননের মতো।’
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাষ চন্দ বাদল, সদস্য কলিম সরওয়ার, বিএফইউজে’র সহ সভাপতি শহিদুল আলম, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ম. সামশুল ইসলাম, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদসহ চট্টগ্রামের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে ৪১ জন সাংবাদিককে ৩৯ লাখ টাকা কল্যাণ অনুদান ও ১৪ জনকে ১লাখ ৪০ হাজার টাকার করোনাকালীন আর্থিক সহায়তা চেক প্রদান করা হয়।