এক সময় আমরা যখন খেলাধুলা করতাম, জীবনের সর্বস্ব উজাড় করে দিতাম। তখন ভাবতাম লেখাপড়ার পাশাপাশি জাতিকে কিছু দেবার বা জাতির জন্য কিছু করার। জাতীয় পর্যায়ে প্রথম হব, নুতন জাতীয় রেকর্ড করব।তার জন্য টারগেট ছিল অলিম্পিক রেকর্ড, বিশ্ব রেকর্ড, কমনওযেলথ, এশিয়ান,বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় রেকর্ড, বিশ্ব ইসলামীক গেমস রেকর্ড এবং অন্যান্য রেকর্ড। আন্তর্জাতিক কোন কোন খেলায় ভাল না করলেও আমরা চেষ্টা করতাম কাছাকাছি পৌছার। দেশে শটপুট ও ডিসকাস নিক্ষেপে বার বছর অপ্রতিদন্দী ছিলাম জাতীয় পর্যায়ে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বাদই দিলাম। নিজের রেকর্ড নিজেই আট বার ভেংগে গড়েছি নূতন জাতীয় রেকর্ড । আমার রেকর্ড ২৫ বছর পর ভেংগেছে কেউ হয়ত শুনেছি ।
আশির দশকে কুস্তি, হ্যান্ডবল, বডি বিল্ডিং এ ছিলাম চ্যাম্পিয়ন একাধিকবার এবং আন্তর্জাতিক পদক ও রয়েছে একাধিক । খেয়ে না খেয়ে জীবনের সিংহ ভাগ সময় ব্যয় করেছি খেলাধুলার মাঠে । আবার পড়াশুনা ও করতে হবে জীবন জীবিকার জন্য। আজকের মত তখন খেলাধুলার বা খেলোয়াড়দের পারিপার্শ্বিক অবস্থা অনুকূলে ছিল না বা কদর ও ছিল না। খেলোয়াড়দের দেখলে অনেকেই নাক ছিটকাতেন। কিন্তু জাতি এটা বুঝতে পারে নাই একটা অসুস্থ জাতিকে নিয়ে বেশি আগানো যায না। জাতিকে গড়তে হলে সুস্থ মানুষ দরকার। দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য বহুবার জাতীয় টিমে সিলেকশনে ছিলাম কিন্তু অলিম্পিকে নির্বাচিত হয়ে ও যেতে পারিনি জেনারেল ও স্বৈরাচার শাসকদের দুষ্টামির জন্য। কাউকে অভিযোগ করিনি কেন সিলেকশন করলেন বা কেন বাদ দিলেন। কর্মকর্তাদের সেই মেধা ও যোগ্যতা নেই একজন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় কে বুঝার। 84 লস এনজেলস অলিম্পিক যাওয়ার সমস্ত আয়োজন ছিল চারজনের জন্য রেডি ( তারা ছিলেন যথাক্রমে মোশাররফ হোসেন সাতারু, মুজিবুর রহমান মল্লিক এ্যথলেট, সাঈদ উর রব এ্যথলেট,ও সাইদুর রহমান ডন এ্যথলেট) । টিকিট, যাতায়াতের খরচ, থাকার ব্যবস্থা ইত্যাদি। বাংলাদেশের কোন অর্থ ব্যয় হত না।
অলিম্পিক অর্গানাইজেশন কমিটি সব ব্যয় বহন করত। আমি নিজে এ ব্যাপারে কিছুই জানতাম না। আমি জানলাম কি করে তখন আমাকে জানালেন বাংলাদেশ নেভীর ক্যাপ্টেন . সিদ্দিক আহমেদ সাহেব । তিনি ছিলেন তখন ডেপুটেশনে ডিজিডিপিতে মহাপরিচালক হিসেবে। আমার অফিস তখন ছিল তার কাছাকাছি। আমি বিমান বাহিনীর বেইস বাসারে বসতাম। আমাকে ডেকে বললেন তুমি সিলেকশন হয়েছ অলিম্পিক এর জন্য । গেট রেডি। বাসা থেকে হালুয়া এনেছিলেন শবেবরাতের পরের দিন, বললেন খাও। খবর শুনে আকাশ থেকে পরলাম। বিশ্বাস হল না। তারপর যখন সব কাগজপত্র দেখলাম, তখন যে কি আনন্দ লাগল তা কি ধরে রাখা যায়? পত্রিকায় খবর বের হল । প্রত্যেক খেলোয়াড় এর স্বপ্ন থাকে অলিম্পিক এ যাওয়ার জন্য কিন্ত বিধি বাম যাওয়া আর হয়নি। তার পর পরই খেলাধুলা ছেড়ে দিলাম। তখন ছিল জীবনের পিক টাইম কিছু করার। ক্যাপ্টেন সিদ্দিক সাহেব ছিলেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অর্গানাইজেশন এর সেক্রেটারি জেনারেল। চমৎকার ব্যক্তিত্ব।
যুব সমাজ যখন ব্যস্ত থাকত রাজনীতি, আড্ডা ইয়ারকি মারতে আমরা তখন ব্যস্ত থাকতাম কঠোর অনুশীলনে । জীবনে কত যে সময় ব্যয় করেছি খেলার মাঠে তার হিসেব নেই। একজন ভাল মানুষ হওয়ার জন্যে চেষ্টা ছিল অবিরত । চেষ্টা করেছি দেশকে বিদেশে প্রতিনিধিত্ব করার। কখনও ছিলাম দল নায়ক কখনও জাতিয় পতাকা বহন করার গৌরব অর্জন করেছি। জাতীয় পর্যায়ে খেলোয়াড়দের পক্ষে শপথ বাক্য পাঠ করানো, খেলার মাঠে মশাল নিয়ে দৌড়ানো, ইত্যাদি। একজন খেলোয়াড় হিসেবে এর চাইতে আর কি পাওয়ার আছে। দেশকে সব সময় সবার উপরে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তা দেশে হউক আর বিদেশে হউক বা কর্ম ক্ষেত্রে হউক। যে কথাটা বলতে গিয়ে ধান ভাংতে শীবের গীত গাইলাম এতক্ষণ তাহল আজকাল বাংলাদেশে এ্যথলেট দের মাপকাঠি হল ভারত । তারা ভারতের সাথে ও না তাদের কোন একটা অংগ রাজ্যের সাথে খেলতে যাওয়া দেখে বিদেশে বসে আক্ষেপ করা ছাড়া আর কিইবা করতে পারি।