নিউইয়র্ক-বাংলা ডেস্ক রিপোর্ট:
১৬ এপ্রিল শেনচৌ-১৩ মহাকাশযান সফলতার সঙ্গে ভূমিতে অবতরণ করেছে, যা চীনের স্পেস স্টেশনের নির্ণায়ক প্রযুক্তির পরীক্ষার সফলতার প্রতিফলন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, চলতি বছর চীন তার স্পেস স্টেশনের নির্মাণ সম্পন্ন করবে। তাই পরবর্তীতে আরো ছয়বার নভোচারী প্রেরণের পরিকল্পনা করেছে চীন। শেনচৌ-১৪ ও শেনচৌ-১৫ মহাকাশযানের নভোচারী ইতোমধ্যে নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
চীনের মানুষ্যবাহী মহাকাশ প্রকল্প কার্যালয়ের মহাপরিচালক রেন হাও ছুন জানিয়েছেন, ২০২০ সাল থেকে চীন পর পর লংমার্চ-৫ বি রকেট, স্পেস স্টেশনের থিয়ান হ্য কোর ক্যাবিন, শেন চৌ-১২, শেনচৌ-১৩ মহাকাশযান, থিয়ান চৌ-২ ও থিয়ান চৌ-৩ মালবাহী মহাকাশযান উতক্ষেপণ করেছে। সকল উতক্ষেপণ সফল হয়েছে। পাশাপাশি, স্পেস স্টেশনের নির্ণায়ক প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক কর্তব্যও সম্পন্ন করেছে, যা স্পেস স্টেশনের নির্মাণ সম্পন্ন করার জন্য দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, “স্পেস স্টেশনের নির্ণায়ক প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক কর্তব্যের মাধ্যমে আমরা সার্বিকভাবে স্পেস স্টেশন নির্মাণের নির্ণায়ক প্রযুক্তি আয়ত্ত করেছি। সে প্রকল্পের পরবর্তী বিভিন্ন কার্যক্রমের কার্যকরিতা ও ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয় ও পরিপূর্ণতার প্রমাণও পাওয়া গেছে। তাছাড়া, একটা সমৃদ্ধ পরিচালনার অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে, যা স্পেস স্টেশনের নির্মাণকাজের জন্য দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেছে”।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২২ সালে চীন স্পেস স্টেশনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করবে এবং ছয়বার উতক্ষেপণের কাজ শেষ করবে। সেগুলো হলো: মে মাসে থিয়ান চৌ-৪ মালবাহী মহাকাশযান, জুন মাসে শেনচৌ-১৪ মহাকাশযান, জুলাই মাসে স্পেস স্টেশনের ‘ওয়েন থিয়ান’ নামক পরীক্ষাগার ক্যাবিন এবং অক্টোবর মাসে স্পেস স্টেশনের ‘মেং থিয়ান’ নামক পরীক্ষাগার ক্যাবিন উতক্ষেপণ করা হবে। পরে থিয়ান চৌ-৫ মালবাহী মহাকাশযান ও শেনচৌ-১৫ মানুষ্যবাহী মহাকাশযান উতক্ষেপণ করা হবে।
জানা গেছে, শেনচৌ-১৪ ও শেনচৌ-১৫ মহাকাশযানের নভোচারীরা কক্ষপথে ৬ মাস থাকবেন এবং প্রথম বারের মতো কক্ষপথে নভোচারীরা তাদের যান পরিবর্তন করবেন। ছয়জন নভোচারী একসাথে কক্ষপথে ৫-১০ দিন সেখানে থাকবেন। চীনের মনুষ্যবাহী মহাকাশ প্রকল্পের নভোচারী ব্যবস্থার প্রধান নকশাকারক এবং নভোচারী বিজ্ঞান-গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক হুয়াং ওয়েই ফেং জানিয়েছেন, শেনচৌ-১৪ ও শেনচৌ-১৫ মহাকাশযানের নভোচারীদের ইতোমধ্যেই নির্বাচন করা হয়েছে। তাদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা খুব ভাল। তাদের সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
হুয়াং ওয়েই ফেং বলেন, “স্পেস স্টেশন নির্মাণের উড্ডয়নের জন্য নভোচারীদের ৮টি ধারার ২০০টিরও বেশি প্রশক্ষিণ দেওয়া হবে, যাতে নভোচারীরা তাদের চিন্তা, শরীর ও কৌশলসহ নানা ক্ষেত্রে এ উড্ডয়নের কাজ সম্পন্ন করতে পারেন”।
স্পেস স্টেশন নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর ‘মেং থিয়ান’ ও ‘ওয়েন থিয়ান’ নামক দুটি পরীক্ষাগার ক্যাবিন নভোচারীদের মূল কর্মস্থলে পরিণত হবে। চীনের মনুষ্যবাহী মহাকাশ প্রকল্পের স্পেস স্টেশন ব্যবস্থার প্রধান নকশাকারক এবং চীনের স্পেস স্টেশনের প্রযুক্তি একাডেমির গবেষক ইয়াং হোং বলেন, ভূমিতে বর্তমানে ওয়েন থিয়ান ও মেং থিয়ান নামক পরীক্ষাগার ক্যাবিনের নির্মাণ ও গবেষণা কাজ সুষ্ঠুভাবে চলছে। তিনি বলেন, “এরই মধ্যে ওয়েন থিয়ান পরীক্ষাগার ক্যাবিন থিয়ান চিনে ফিক্স করা হয়েছে ও পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। মেং থিয়ান নামক ক্যাবিনও থিয়ান চিনে ফিক্স করা হয়েছে। বর্তমানে ভূমিতে পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। পরবর্তীতে পুরো ক্যাবিনের তাপ পরীক্ষা ও ফেরানোর পরীক্ষা চালানো হবে। সব কাজ পরিকল্পিতভাবে চলছে”।
চীনের মনুষ্যবাহী মহাকাশ প্রকল্পের কার্যালয়ের মহাপরিচালক রেন হাও ছুন জানিয়েছেন, চলতি বছর স্পেস স্টেশন নির্মাণ সম্পন্ন করার পর মহাকাশ প্রকল্প ১০ বছরের বেশি সময়ে প্রয়োগ ও উন্নয়নের পর্যায়ে উন্নীত হবে। পরবর্তীতে এব্যাপারে চীন শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, সমতাসম্পন্ন কল্যাণ এবং অভিন্ন উন্নয়নের ভিত্তিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করবে।