ইবনে বতুতার ভ্রমণ আর জীবনের গল্প নিয়ে যে বই লেখা, তার নামে নাম বলটার- আল রিহলা। বাংলায় অর্থ দাঁড়ায় ভ্রমণ। কাতার বিশ্বকাপে মেসি-নেইমার-রোনালদো-এমবাপ্পেদের পায়ে যে ফুটবল কথা বলবে, সেই অফিশিয়াল বলটির উন্মোচন হয়ে গেছে।
সেই ১৯৭০ সাল থেকে ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাডিডাস’ বিশ্বকাপের বল তৈরি করে আসছে। ফিফার সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় ১৪তম বারের মতো বিশ্বকাপের আনুষ্ঠানিক বল উপহার দিচ্ছে তারা। প্রতিটি বলের পেছনে তো কোনো না কোনো ভাবনা ছিল, এবার কী আছে? ফিফার ওয়েবসাইটে লেখা, আরবি ভাষায় ভ্রমণ বোঝানো আল রিহলা নামের এই বল কাতারের সংস্কৃতি, স্থাপনা, ঐতিহ্যবাহী নৌকা ও পতাকা থেকে অনুপ্রাণিত।
এই বলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য কী, সেটিও তো প্রতি বিশ্বকাপের অফিশিয়াল বলকে ঘিরে একটা বড় জিজ্ঞাসার বিষয়। আল রিহলাকে নিয়ে ফিফার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বিশ্বকাপ ইতিহাসে বাতাসে সবচেয়ে দ্রুতগতির বল হবে এটি। ম্যাচে গতি আরও বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই বলটির নকশা এভাবে করা হয়েছে।
‘অ্যাডিডাসের কাছ থেকে দেখতে অসাধারণ, টেকসই, অনেক উঁচু মানসম্পন্ন একটা ম্যাচ বল এটি। কাতারে বিশ্ব শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে নিজেদের সেরা ছন্দে থাকা বিশ্বের সেরা তারকারা এই বলে খেলা উপভোগ করবেন। উপভোগ করবেন বিশ্বজুড়ে তৃণমূল পর্যায়ের খেলোয়াড়েরাও’- আল রিহলা নিয়ে আশাবাদী ফিফার বিপণন বিভাগের পরিচালক জঁ-ফ্রাঁসোয়া পাথি।
ফিফা জানাচ্ছে, তথ্যগত অনেক বিশ্লেষণের পর বানানো বলটাকে অ্যাডিডাসের পরীক্ষাগারে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। বাতাসের টানেলে ভাসিয়ে দেখা হয়েছে। মাঠে ফুটবলাররাও এই বলে এরই মধ্যে খেলে দেখেছেন। বলের ওপরের দিকের চামড়ার গুণগত মান ও প্যানেল আকৃতির কারণে খেলার দিক থেকে আল রিহলা পুরোপুরি নিখুঁত ও ভরসা করার মতো বলে জানাচ্ছে ফিফা।
বলের বৈশিষ্ট্য
সিআরটি কোর : ভেতরের ফাঁপা অংশটা, যেটা কিনা বলের আকৃতি ও ভেতরের বাতাস ধরে রাখার পাশাপাশি ধারাবাহিক গতি ও নিখুঁত ভ্রমণের নিশ্চয়তা দেবে। এতে ফুটবলটা অনেক গতিময় ও নিখুঁত হবে। বল কোথাও ধাক্কা খেয়ে ফেরত আসার ক্ষেত্রেও কখন কোথায় কীভাবে ফিরবে, সে হিসাবটাও নিখুঁত থাকবে।
স্পিডশেল : ২০টি অংশের প্যানেল আকৃতির মানসম্পন্ন চামড়া, যেটিতে ম্যাক্রো ও মাইক্রো টেক্সচারের কারণে বলের আকৃতি ও বাতাসের বলের গতিপথ ঠিক থাকবে।
‘খেলাটা দিন দিন আরও গতিময় হচ্ছে। আর গতি যত বাড়ছে, বলের নিখুঁত থাকা এবং বাতাসে ঠিক থাকা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। নতুন এই নকশার কারণে বলটা বাতাসে ভাসার সময় আগের চেয়ে বেশ গতিসম্পন্ন হবে’- এব্যাখ্যা বলের নকশা পরিচালক ফ্রাঞ্জিস্কা লোফেলমানের।
ফিফার ভাষ্য, আল রিহলার এই জ্বলজ্বলে রং আসলে বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ এবং দিন দিন বাড়তে থাকা খেলার গতিকে বোঝাতেই করা হয়েছে। ইকার ক্যাসিয়াস, কাকা, ফারাহ জেফরি ও নউফ আল আনজির মতো কিংবদন্তিরা প্রথম বলটিকে জনসমক্ষে নিয়ে আসবেন। এরপর আল রিহলা বিশ্বজুড়ে ১০টি শহরে ঘুরবে।