বজলুর রায়হান
প্রমত্তা পদ্মার বুকে নান্দনিক স্থাপনা গড়েছে বাংলাদেশ। আর্থিক, প্রকৌশল এবং রাজনৈতিকসহ বিভিন্নমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দীর্ঘতম সেতুটি উদ্বোধন করার মধ্য দিয়ে বহুদিনের স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা পূরণ হলো বাংলাদেশের। এমন একটি সোনালি ভোরের জন্য বহুকাল অপেক্ষায় ছিল ‘কীর্তিনাশা’ বলে খ্যাত পদ্মা নদীর দুই পাড়ের মানুষ। ২৫ জুন ২০২২ আসে অনন্য সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। কাক্সিক্ষত পদ্মা সেতুর বর্ণাঢ্য উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যোগাযোগের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় শুরু হলো। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং অন্যান্য অংশের সঙ্গে সংযোগকারী খরস্রোতা এবং জলপ্রবাহ, দৈর্র্ঘ্য ও আকারের দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী বিবেচিত পদ্মা নদীর উপর এ সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তর-পশ্চিম এবং অন্যান্য অঞ্চলের সংযোগকারী যমুনা নদীর উপর ১৯৯৮ সালে এ যাবতকালের দীর্ঘতম বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু চালুর ২৫ বছর পরে জাতির পিতার যোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও দীর্ঘতম পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করলেন।
তবে, দেশের নিজস্ব অর্থের ওপর নির্ভর করে সেতু তৈরির ব্যাপারে অনেক অর্থনৈতিক বিশ্লেষকের সন্দেহকে বাতিল করে সম্পূর্ণরূপে অভ্যন্তরীণ অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু অতিরিক্ত তাৎপর্য বহন করে। নির্মাণের শুরু থেকে পদ্মা সেতু প্রকল্প বিভিন্ন প্রকৌশল বিস্ময়ের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ প্রত্যক্ষ করেছে, শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য একটি বিস্ময়কর কাঠামো হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে; যেখানে রাষ্ট্রীয় শিল্প ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিবেচনায় সেতুটি নির্মাণে বৈদেশিক অর্থায়ন বন্ধ করে কার্যত এ উদ্যোগ বাতিল করার সূক্ষ্ম প্রচারণার মধ্যে এ প্রকল্প বিভিন্ন বাধার সম্মুুখীন হয়েছিল। অনেক রাজনৈতিক এবং কূূটনৈতিক বিশ্লেষক এমনকি কিছু বিদেশি অংশীদারদেরও অনুমান ছিল যে প্রকল্পটি ব্যর্থ হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, শক্তিশালী পদ্মা বিজিত হয় এবং উভয় তীরের মানুষ এখন আর অসহায় থাকবে না, কারণ তারা উভয় পাড়ের সঙ্গে সংযোগ পেয়েছে।
এখন থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ ফেরিঘাটের ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন ছেড়ে মাত্র ৬-৭ মিনিটে পদ্মা সেতু পার হবেন। অল্প সময়ের মধ্যে তারা সড়কপথে সরাসরি ঢাকায় যাবেন।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু শুধু রাজধানী ঢাকা এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগই স্থাপনই করেনি; এটি এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সংযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বর্ণ দুয়ার খুলে দিবে।
পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরুর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্মোচন হলো নতুন দিগন্তের। নিজের শক্তিতে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে অদম্য বাংলাদেশের ২১ জেলার মানুষের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বহুমুখী অর্থনৈতিক দ্বার উন্মোচন হলো। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার উন্নয়ন অভিযাত্রায় বীর বাঙালির পথ হলো সুগম এবং মসৃণ।৩