মিনহাজ আহমেদ
একেবার ছোট, প্রকৃতিময় একটি স্থান। বসে বসে দেখা যায় অঙ্কুরোদগম থেকে গাছেদের শাখা-পত্র-পল্লবের বিবর্তন। জল-টলমল ঝিলের জল, হাঁসেরা ছাড়া কেউ ঢেউও তোলেনা। এখানে জলের আয়নায় শহরের প্রতিবিম্ব সাতরানো হাঁসের তোলা নরম ঢেউয়ে একটা গতি পায়। আলো, ছায়া, হাওয়া, বৃষ্টি, শীত, কিংবা তাপ- কোনো কিছু নিয়েই কোথাও নেই কোনো প্রশ্ন। নেই কোনো রাগ-বিদ্বেষ, অভাব-অভিযোগ!
ক্ষুধা-তৃষ্ণা নেই, তবে চাইলেই কেউ অমৃত সেবন করতে পারে। সাঁকো থাকবে, পারাপারের বিধিনিষেধ থাকবে না। চাইলেই হেঁটে বা দৌড়ে পার হওয়া যাবে, এমন কী শিশুরাও। এখানকার সব মানুষের জন্ম ভিন্ন ভিন্ন দিনক্ষণে হলেও, তারা সবাই-ই শিশু, কিংবা শিশুর মতো!
প্রকৃতিময় এই স্থানটিতে হট্টকোলাহল থাকবেনা, তবে মানুষের ভীড় থাকবে, কেননা- মানুষেরাইতো এক ধরনের ফুলের সৌন্দর্য্য। তারা ঘাসের চাদরে মোড়া উঁচু-নীচু ভূমিতে পাখিদের ও কাঠবেড়ালীদের সাথে মনের আনন্দে ঘুরে ঘুরে নেচে নেচে বেড়াবে। পরস্পরকে স্পর্শ করবে, জড়িয়ে ধরবে, কিন্তু কোথাও ছন্দপতন হবে না। একটু জিরিয়ে নিতে তারা শরীর এলিয়ে দেবে ঝিলের পাড়ে, ঘাসগালিচায়! বাতাস হয়ে একে অপরের চুলে বিলি কেটে দেবে। ঘুম পাড়িয়ে দেবে হয়তো!
ঝিঁঝিঁ পোকারা তানপুরা বাজাবে, ঘাসফড়িং বাজাবে পারকাশন, আর কোনো মোহনীয় মুরতিময় এক নারী বেহালায় একটানা তুলবেন সঙ্গীতের সুরমুর্চ্ছনা। কখনও বাজাবেন কোনো এক ওস্তাদ স্যাক্সোফোন বাদক! চিত্রকর কিংবা ভাস্করেরা গাছের ছায়ায় মুক্ত আকাশের নিচে গ্যালারি পাতিয়ে বসবেন, আর সেটা দেখে দেখে মন-দৃষ্টি-দেহ আনন্দের নেশায় মাধ্যাকর্ষণকে অস্বীকার করে শূন্যে ভাসতে থাকবে অনন্তকাল… …
কিন্তু খবরদার! আমি সাবধান করে দিচ্ছি- ছোট, প্রকৃতিময় এই স্থানটিতে কেউ বেহেশত-দোযখ, পাপ-পূণ্যের কথা তুলবেন না। কেউ এখানে আল্লা-খুদা, রাম-যিশু, ইসা-মুসাকে ডাকবেন না, খৎনা, পৈতা, ধর্ম কিংবা রাজনীতি চর্চা করবেন না। কেউ এমপি-চেয়ারম্যান, ভোট-পার্লামেন্টের নাম নেবেন না। এখানে কোনো ব্যবসা কিংবা মন্দির-মসজিদ-প্যাগোডা নিয়ে আসবেন না।
আমার সাবধানবাণী পড়ার পর কেউ যদি আমার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে, তাহলে আমি তাকে ক্লীব, নপুংসক, খোজা, বাঁজা, নির্বীজ, নির্বীর্য, প্রেমহীন, ভালবাসাহীন করে দেবো!
(ছবিগুলো গত রবিবার নিউ ইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কে তোলা!)