• রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:১৫ অপরাহ্ন

আলমগীর কবিরঃ প্রতিকূলের এক যাত্রী

Reporter Name / ৮১ Time View
Update : রবিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১

 

 

কাওসার চৌধুরী

 

আলমগীর কবির।
একটি নাম। একটি দ্রোহ। প্রতিকূলে লড়ে যাওয়া সময়ের এক সাহসী সন্তান। তিনি আমাদের চলচ্চিত্র গুরু। তিনিই আমাদের ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দিয়েছিলেন আশির দশকের শুরুতে। চলচ্চিত্র নামের সেই নদী থেকে কূলে উঠবার জন্য আজো সাঁতার কেটে চলেছি আমরা- তাঁর শিষ্যরা। কোনদিন তীরে পৌঁছুতে পারবো কী না কে জানে!

১৯৩৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর আলমগীর কবির জন্ম নিয়েছিলেন রাঙ্গামাটিতে। বাবার চাকরীতে বদলীর কারনে বাবার সাথে ঘুরেছেন বহু জায়গায়। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে উচ্চ বিদ্যালয় সমাপ্ত করে ঢাকা কলেজে পড়াশোনা। ওখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তারপরে কবির পাড়ি দেন বিলেতে।

ওখানে গিয়ে বিজ্ঞান ছেড়ে কবির জড়িয়ে পড়েন চলচ্চিত্রে। সাথে বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনীতি। থাকতেন ‘ইস্ট পাকিস্তান হাউজ’ নামের একটি হোস্টেলে। স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য সেই সময়ে তিনি গেরিলা ট্রেনিং নিয়েছেন কিউবায়। দেশে ফিরে আসেন ’৬৬ সালে। এসেই পাকিস্তান সরকারের হাতে বন্দী হয়ে কারাবাস।

মুক্তি পেয়ে পুরোদমে শুরু করেন সাংবাদিকতা। সেই সময়ে ‘পাকিস্তান অবজারভার’ এবং ‘হলি ডে’ হয়ে নিজেরাই একটি ট্যাবলয়েড সাইজের পত্রিকা বার করেন- ‘দ্য এক্সপ্রেস’ নামে। এরপরের পত্রিকা ‘সিকোয়েন্স’।

একাত্তরে ঝাঁপিয়ে পড়েন মহান মুক্তিযুদ্ধে। স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রে তিনি ছিলেন ইংরেজী বিভাগের প্রধান আয়োজক। ওখানে- নাট্যজন আলী যাকের কবিরের তত্বাবধানেই কাজ করেছেন ‘ওয়ার রিপোর্টার’ হিসেবে।

দেশ স্বাধীন হলে পুরো মনযোগ দিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন একের পর এক। ‘ধীরে বহে মেঘনা’ ‘সূর্য কন্যা’ ‘রূপালী সৈকতে’ ‘সীমানা পেরিয়ে’সহ আরো ক’টা চলচ্চিত্র নির্মাণ করে প্রশংসিত হয়েছেন আলমগীর কবির। অর্জন করেছেন একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারসহ বিভিন্ন সংগঠনের সম্মানজনক পুরষ্কার।

 

একাশি সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ফিল্ম ইনস্টিটিউট’ জাতীয় চলচ্চিত্র আর্কাইভের সহযোগিতায়। সেই ইন্সটিটিউটেই চলচ্চিত্র বিষয়ে আমাদের হাতেখড়ি। ১৯৮৯ সালের ২০ জানুয়ারি- বগুড়া থেকে গাড়িয়ে চালিয়ে ঢাকায় ফেরার পথে পাবনা নগরবাড়ি ঘাটে একটি চলন্ত ট্রাক তাঁর গাড়িটি ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দিলে ওখানেই কবিরের জীবনাবসান হয়।

কবির ভাইয়ের জীবন এবং কর্ম নিয়ে আমি একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিলাম ’৯২ সালে। ওটার শিরোণাম ছিল- ‘প্রতিকূলের যাত্রী’। সেই প্রামাণ্যচিত্রে তাঁর পরিবারের সদস্য থেকে তাঁর বন্ধুবান্ধব, সহযাত্রী প্রায়  সকলে কথা বলেছেন ক্যামেরার সামনে। কবিরের শাশুড়ি ড. নীলিমা ইব্রাহীম, সৈয়দ শামসুল হক, সাইদ আহমেদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, আলী যাকের, সৈয়দ সালাউদ্দীন জাকী, শফিক রেহমান, গাজী শামসুর রহমান, বুলবুল আহমেদ, তানভীর মোকাম্মেল, মানযারে হাসিন মুরাদ, মোরশেদুল ইসলাম, তারেক মাসুদ, জুনায়েদ হালিম, মুনিরা মোরশেদ মুন্নি, কবিরের সন্তান লেনিনসহ আরো কয়েকজন কথা বলেছেন আমার ক্যামেরার সামনে।

 

হাতে সময় থাকলে প্রামাণ্যচিত্রটিতে একবার চোখ বুলাতে পারেন। ভালোই লাগবে হয়তো। নিচে প্রামাণ্যচিত্রটির ভিডিও’র লিংক দিয়েছি।

‘প্রতিকূলের যাত্রী’র লিংকঃ
https://www.youtube.com/watch?v=duRceDenIjo

যেখানেই থাকুন, অনেক ভালো থাকুন কবির ভাই। আপনারই প্রেরণায় আজো লড়াই করে যাচ্ছি আপনারই প্রদর্শিত ধারায়। অনেক মিস করি কবির ভাই আপনাকে। অনেক মিস করি!
——————————
ছবিগুলো গুগোল থেকে নিয়েছি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category