• শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:২০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ খবর
Irwin casino зеркало – Рабочие зеркало на сегодня Ирвин казино Играть слоты гараж бесплатно Ирвин Казино Основные понятия политики конфиденциальности в казино Аркада, требования к клиентам и условия идентификации. Играть бесплатно в Misery Mining на Аркада Казино Онлайн казино Аркада. Зеркало казино Arkada. Личный кабинет, регистрация, игровые автоматы Arkada casino зеркало – Рабочие зеркало на сегодня Аркада казино Банда казино рабочее зеркало Банда Казино – как начать играть? Banda casino официальный сайт: бонусы, игровые автоматы в казино Банда Как Вывести Деньги Драгон Мани? Казино Драгон Мани Зеркало Банда Казино – официальный сайт Банда казино онлайн Общий обзор Банда Казино Отзывы Банда Казино – Мнения и Отклики от Реальных Игроков Banda Casino Обзор популярных игр в Banda Casino: Зеркало Банда Казино | Halostar Marketing Kometa casino официальный сайт: бонусы, игровые автоматы в казино Комета Казино Комета официальный сайт онлайн. Зеркало казино Kometa. Личный кабинет, вход, регистрация Как получить бонусы в Комета Казино? Онлайн Казино Банда. Зеркало Казино Banda. Личный Кабинет, Регистрация, Игровые Автоматы Банда Казино Мобильная Версия Официальный Сайт Banda Casino Банда Казино Мобильная Версия Официальный Сайт Banda Casino Banda Casino Зеркало – Рабочие Зеркало На Сегодня Банда Казино Онлайн Казино Банда. Зеркало Казино Banda. Личный Кабинет, Регистрация, Игровые Автоматы Банда Казино – Вход На Сайт, Личный Кабинет, Бонусы За Регистрацию, Лучшие Слоты На Деньги И Бесплатно В Демо-Режиме Banda Casino Зеркало – Рабочие Зеркало На Сегодня Банда Казино Банда Казино Мобильная Версия Официальный Сайт Banda Casino Играй В Уникальном Стиле: Комета Казино Ждет Тебя! Комета Казино Мобильная Версия Официальный Сайт Kometa Casino Онлайн Казино Комета. Зеркало Казино Kometa. Личный Кабинет, Регистрация, Игровые Автоматы Kometa Casino Зеркало ᐈ Вход На Официальный Сайт Комета Казино Игровые автоматы бесплатно лягушка Комета Казино Slottica Zaloguj Się Best Online Casino Hungary Los excelentes aplicaciones de tragaperras por Casino 1xslot recursos positivo sobre 2024 Slottica Casino Avis Best Online Slots Casino How In Order To Win At The Online Casino With $20: 7 Ways To Produce A Profit Hierbei ganz Microgaming Spielautomaten 150 Chancen Ultra Hold And Spin für nüsse online zum besten geben! How In Order To Win At The Online Casino With $20: 7 Ways To Produce A Profit Steam Tower Slot Review 2024 Incl No Deposit Gratification 10 Greatest Online Casinos Throughout Canada For Actual Money In 2024 How Much Do On Line Casino Hosts Make? Earnings And Bonuses How To Open A Casino: Some Sort Of Detailed Six-steps Guide

সুদূরে ভালো থাকুন রিয়াজ ভাই

রিপোর্টারের নাম : / ৬৮ ভিউ
আপডেট সময়: মঙ্গলবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১

 

 

সৈয়দ আবদাল আহমেদ

রিয়াজ ভাই নেই, তিনি প্রেস ক্লাবে আর আসবেন না একথা ভাবতে খুব কষ্ট হচ্ছে। অথচ এটাই সত্য তিনি আমাদের ছেড়ে চিরদিনের জন্যে চলে গেছেন। রোববার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে শোক বিধূর পরিবেশে আমরা সাংবাদিক সহকর্মীরা, বিভিন্ন পেশা ও স্তরের মানুষেরা তাঁকে জানিয়েছি শেষ শ্রদ্ধা। জানাযা শেষে কফিনে ফুল দিয়ে জানিয়েছি ভালোবাসা। বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরে এখন তিনি শায়িত।
রিয়াজ ভাইয়ের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতা জগতের সর্বশেষ স্তম্ভটি যেনো ধসে পড়লো। পঞ্চাশ-ষাটের দশকে যে সকল কৃতী সাংবাদিকের উজ্জ্বল দ্যুতিতে এদেশের সাংবাদিকতার অঙ্গন আলোকিত হয়েছিল তাদের মধ্যে ছিলেন, মওলানা আকরম খাঁ, আবুল কালাম শামসুদ্দিন, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, আবদুস সালাম, জহুর হোসেন চৌধুরী, সিরাজুদ্দিন হোসেন, ফয়েজ আহমেদ, এবিএম মূসা, শহীদুল্লাহ কায়সার, আহমেদ হুমায়ূন, আনোয়ার জাহিদ, এসএম আলী, এনায়েতুল্লাহ খান, নির্মল সেন, গিয়াস কামাল চৌধুরী ও আতাউস সামাদ। আমাদের সাংবাদিকতার ভুবনে এরা ছিলেন মহীরুহ। একে একে সবাই চলে গেছেন। শেষ বাতিঘর হিসেবে ছিলেন রিয়াজ ভাই। সাংবাদিকতার প্রতিষ্ঠান, আমাদের অভিভাবক এবং আশ্রয়স্থল হিসেবেই তাঁকে আমরা দেখে এসেছি। তিনিও চলে গেলেন।
দেশবরেণ্য একজন সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি ৫৩ বছরেরও বেশি সময় সাংবাদিকতা পেশায় নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৮ সালে ইংরেজি ‘দৈনিক পাকিস্তান অবজারভার’ এ যোগদানের মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেছিলেন। মৃত্যুর পূর্বে ফিনান্সিয়াল হেরাল্ড পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে তিনি বাংলাদেশ অবজারভারের চীফ রিপোর্টার, স্পেশাল করসপন্ডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ছিলেন দ্য ফিনান্সিয়্যাল এক্সেপ্রেসের প্রধান সম্পাদক, দ্যা টেলিগ্রাফের সম্পাদক, দ্য ডেইলী স্টারের উপ-সম্পাদক এবং নিউজ টুডের সম্পাদক। লন্ডনের দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকার বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন। ১৯৬৩ সালে তিনি নরসিংদী কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চের পর মুক্তিযুদ্ধের সাংগঠনিক কাজেও যুক্ত হন তিনি। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অখন্ড বিএফইউজের সভাপতি হিসেবে তিনি মূল নেতৃত্ব প্রদান করেন। সাংবাদিকতা পেশায় আসার আগে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজ ও কাপাসিয়া কলেজে অর্থনীতি বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স ও এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন। অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময়ের সাংবাদিকতা জীবনে রিয়াজউদ্দিন আহমেদ অবিভক্ত বিএফইউজে ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের ১৪ বছর সভাপতি ছিলেন। পেশা এবং পেশা সংক্রান্ত বিভিন্ন সংগঠনের সফল নেতৃত্ব দিয়েছেন। টেলিগ্রাফ, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস ও নিউজটুডের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ২৪ বছর। তাঁর রিপোর্ট ও নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল হেরান্ড ব্রিটিউন, লন্ডনের ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, এমিরেটস নিউজসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পত্রিকা ও জার্নালে। রিপোর্টার ও সম্পাদক হিসেবে তিনি বিশ্বের বহু গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলী কভার করেছেন। সার্ক দেশ সমূহের সাংবাদিকদের সংগঠন সাউথ এশিয়ান ফ্রি মিডিয়া এসোসিয়েশন সাফমার সভাপতিও ছিলেন তিনি। সাংবাদিকতা পেশায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি রাষ্ট্রীয় একুশে পদকসহ বহু পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন।
প্রেস ক্লাব তাঁর কাছে ‘গনতন্ত্রের দ্বীপ’
প্রেস ক্লাবে জানাযার আগে রিয়াজ ভাইয়ের ছেলে মাসরুর বাবা সম্পর্কে অনুভূতি জানান। তিনি বলেন, “আমার বাবার কাছে দু’টি পরিবার ছিল। একটি ছিলাম আমরা রক্তের সম্পর্কের পরিবার এবং অন্যটি এর বাইরে তাঁর বড় পরিবার ছিল সাংবাদিক সমাজ তথা প্রেসক্লাব পরিবার। তিনি প্রেস ফ্রিডম এবং সাংবাদিকদের অধিকারের জন্য কাজ করেছেন নিরন্তর।”
মাসরুর ঠিকই বলেছেন। জাতীয় প্রেস ক্লাব ছিল রিয়াজ ভাইয়ের প্রাণ। দুই মেয়াদে সভাপতি হিসেবে তিনি আট বছর এই ক্লাবের নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রেস ক্লাব সাংবাদিকদের দ্বিতীয় গৃহ এ কথাটি তাঁর মুখেই বার বার উচ্চারিত হতো। প্রেস ক্লাব নিয়ে তাঁর বিখ্যাত উক্তি — ‘প্রেস ক্লাব ইজ দ্য আইল্যান্ড অব ডেমোক্রেসি ইন দ্য ওশেন অব অটোক্রসি’। অর্থাৎ “স্বৈরাচারের মহাসমুদ্রে প্রেস ক্লাব আমাদের গনতন্ত্রের একখ- দ্বীপ।’ তিনি বলতেন গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে আমি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য। এ ক্লাব আমাদের গর্ব, ঐতিহ্য এবং অহংকার। সংগ্রামে, স্বাধীনতা আর গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রেস ক্লাবের অর্জন অনেক। আমরা এ ক্লাবের সদস্য হিসেবে গর্বিত। এই ক্লাব শুধু ইট-কাঠের একটি দালান মাত্র নয়। এটি একটি গনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। সবার কথা বলার, নিজেকে প্রকাশ করার শেষ জায়গা জাতীয় প্রেসক্লাব। তিনি লন্ডনের হাইড পার্কের সঙ্গে একে তুলনা করে বলতেন, হাইড পার্ক আর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কথা বলতে অনুমতি লাগে না। অনেকটা গণতন্ত্র স্কয়ারের মতো। ১৯৯০ সালের গনঅভ্যুত্থানের সময় প্রেসক্লাবের সত্যিই গণতন্ত্র স্কয়ারে পরিণত হয়েছিল। ক্লাব পরিবারের সদস্যদের আনন্দ-ফূর্তি, খেলাধূলা, খাওয়া-দাওয়া তো আছেই। তবে প্রেস ক্লাবের মূল বৈশিষ্ট এর গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য। তিনি আরো বলতেন, প্রেস ক্লাব শুধু খবর জানানোর জায়গাই নয়, এখানে প্রতিনিয়ত খবর তৈরিও হয়। খবরের অনেক উৎস প্রেসক্লাব। দৃষ্টি আকর্ষনের জন্যে অনেক সংগঠন আসে প্রেস ক্লাবে অথবা এর সামনের চত্ত্বরে। কেউ সভা করেন, কেউ মিছিল করেন, কেউ বা অনশন ধর্মঘট করেন প্রতিবাদ জানানোর জন্য। এমন ঘটনাও ঘটেছে আমরণ অনশন দীর্ঘ প্রায় এক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছে। কিন্তু সকলেই আবার সহিসালামতে ঘরে ফিরে গেছেন। এদেশের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময়, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলনসহ নানা লড়াই-সংগ্রামে মানুষ যখন কোথাও কথা বলতে পারতো না, তারা জাতীয় প্রেস ক্লাবে এসে আশ্রয় নিতো। প্রেস ক্লাব কেন্দ্রিক আন্দোলন গড়ে উঠতো। যে প্রেস ক্লাবে সবাই আসতে পারতো, কথা বলতে পারতো, সব রকমের মত প্রকাশ করতে পারতো দুঃখজনক হলেও সত্য সেই প্রেস ক্লাব হারিয়ে গেছে।
মুক্ত সাংবাদিকতা ও রিয়াজ ভাই
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ব্যাপারে সোচ্চার ছিলেন রিয়াজ ভাই। মুক্ত সাংবাদিকতা ছিল তাঁর স্বপ্ন। আর এজন্যে পেশাগত জীবনের প্রায় পুরোটা সময়ই তিনি মুক্ত সাংবাদিকতার পক্ষে কথা বলে গেছেন। সাংবাদিক নেতা, সংবাদকর্মী এবং একজন সম্পাদক প্রতিটি অবস্থান থেকেই তিনি এ নিয়ে আওয়াজ তুলেছেন। গণমাধ্যম বিরোধী প্রতিটি কালাকানুনের বিরুদ্ধেই ছিল তাঁর প্রতিবাদ।
সাংবাদিকতা জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন’ শিরোনামে তিনি একটি বই লিখেছেন। এই বইটিও তিনি উৎসর্গ করেছেন ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য যারা সংগ্রাম করেছেন তাদেরকে। এ বইয়ের উপসংহারে তিনি লিখেছেন “সাংবাদিকতা পেশাকে স্বাধীন বাংলাদেশে সংগঠিত করার ব্যাপারে চেষ্টা করেছি। আপ্রান চেয়েছি দেশে কালাকানুনমুক্ত একটি মিডিয়া বান্ধব পরিবেশ তৈরি হোক। আমার খুব আশা দেশে একটা রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করুক। যে পরিবেশে সবাই মুক্ত সাংবাদিকতা করতে পারবে, মানুষ মুক্ত মনে কথা বলতে পারবে।” কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আশাহত হয়েছেন তিনি। মৃত্যুর আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি দুঃখ করে বলেছেন, আমরা গনতন্ত্রকে হারিয়ে ফেলেছি। রাজনীতিবিদদের অপরিনামদর্শিতার কারণে রাজনীতির ওপর তাদের নিয়ন্ত্রন নেই। ফলে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। স্বাধীনতার স্বপ্ন অপূর্ন থেকে গেলো। আর গনতন্ত্র না থাকায় স্বাধীন সাংবাদিকতার পথও এখন রুদ্ধ।
সরকারের সর্বশেষ জারি করা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-এর কঠোর সমালোচনা করে গেছেন রিয়াজ ভাই। সাংবাদিকতার ওপর চাপ এবং সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন, মামলা-হামলার প্রতিবাদ করে বলেছেন, সাংবাদিকতা নতুনভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়েছে। যদিও চাপের মধ্যেই সব সময়ই সাংবাদিকদের কাজ করতে হয়েছে, তবুও বর্তমান অবস্থা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। সাংবাদিকতা কুসুমাস্তীর্ণ কোনো পেশা নয়, কন্টকাকীর্ণ একটি পেশা। আইয়ূব খানের প্রিন্টিং প্রেসেস এন্ড পাবলিকেশন্স অর্ডিন্যান্স, বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং এখনকার ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সব কটিতেই একই ধারায় সাংবাদিকতার স্বাধীনতা বিরোধী বিধান প্রণয়ন করা হয়েছে। স্বাধীন সাংবাদিকতাকেই স্তব্ধ করে দেয়ার জন্যে এসব কালাকানুন করা হয়েছে। নতুন করে আমরা বাংলাদেশে দেখেছি, একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ব্যবহার করা হয়েছে। এই আইনের প্রয়োগ বাংলাদেশে এই প্রথম। সম্প্রতি এ আইন মিয়ানমারে রয়টার্সের দু’জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয় এটি। আইনটি বৃটিশ ভারতে ১৯২৩ সালে প্রণীত হয়। সত্য গোপন করে দুর্নীতি করা ও স্বাধীনতার আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার জন্যেই বৃটিশকরা এটি করেছিল। শত বছর পর সেই আইনটি বাংলাদেশে একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হলো। আমি এতে মর্মাহত এবং যন্ত্রনায় দগ্ধ। তিনি দুঃখ করে আরো বলেছেন, আইয়ূব খানের প্রিন্টিং প্রেসেস অ্যাক্টে সাংবাদিকদের কলম এবং পত্রিকা বন্ধ করার জন্য যেসব ধারা ছিল, পরে সেগুলো বিশেষ ক্ষমতা আইনের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। আমাদের আন্দোলনের ফলে ১৯৯১ সালে এসব কালাকানুন বাতিল হয়েছিল। এখন আবার সেগুলো আরও ভয়াবহ আকারে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। তেমনি আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করে তা বাতিলে আন্দোলন করেছি। এটি বাতিল করা হলেও আবার তা কঠোরভাবে এলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। এ আইনের নানা অপপ্রয়োগ এখন চলছে। সাংবাদিকতার স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় গ্যারান্টি শক্তিশালী সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান। সেটিও এখন দুর্বল। তিনি সাংবাদিকদের দ্বিধা বিভক্তিকে বেদনাদায়ক উল্লেখ করে বলেছেন, বৃহত্তর স্বার্থেই সাংবাদিকদের ঐক্য দরকার। আন্দোলন করেই সাংবাদিকদেরকে স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ উন্মুক্ত করতে হবে।
কিছু কথা কিছু স্মৃতি
রিয়াজ ভাইয়ের শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। আজ তাঁর সম্পর্কে অনেক কিছুই মনে পড়ছে। একজন মানুষ যাকে সবাই পছন্দ করতো, ভালোবাসতো। প্রেসক্লাবে এলে পুরো ক্লাবটাই যেনো আনন্দে ভরে উঠতো। একজন উদারমনা ও গ্রহনযোগ্য মানুষ ছিলেন তিনি। সবাইকেই কেমন আছেন বলে কুশল জিজ্ঞাসা করতেন। লাউঞ্চে দেখা যেতো তিনি আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁকে ঘিরে জমে উঠেছে জমজমাট আড্ডা। সেই আড্ডার মধ্যমণি হতেন তিনি। প্রেস ক্লাব লাইঞ্জে চা ছাড়া অন্য খাবার পরিবেশনের নিয়ম নেই। তিনি চায়ের সঙ্গে টোস্ট বিস্কিট খেতে পছন্দ করতেন। তাই পরিবেশনকারীদের বলতেন টিস্যুতে পেছিয়ে একটি টোস্ট বিস্কিট আনতে। ‘আইড় মাছ’ তাঁর খুব পছন্দের। আমরা তাঁকে নিয়ে কোনো খাবারের আয়োজন করলে আইড় মাছই থাকতো মূল মেনোতে।
রিয়াজ ভাই বছরে একবার তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর নারান্দীতে আমাদের নিয়ে যেতেন। সেখানে গ্রাম্য মেলা, খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। আয়োজন থাকতো শীতের পিঠার। চাইশী নামে ঢাকায় চীনের একজন রাষ্ট্রদূত ছিলেন তাঁর বন্ধু। তিনি তাঁকেও সেখানে নিয়ে গেছেন। চীনা দূতাবাসের উদ্যোগে গ্রামের মানুষদের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ ও বিনোদনের জন্য একটি মাল্টিপারপাস সেন্টার সেখানে করা হয়েছে। চাইশির উপস্থিতিতে একবার এক অনুষ্ঠানে আমার পুত্র-কন্যাও গিয়েছিল। গান গেয়ে সবাইকে মাতিয়েছিলো। চীনা রাষ্ট্রদূত চাইশি অনুরোধ করলেন ‘একবার যেতে দেনা আমার ছোট্ট সোনার গা’ গানটি গাইতে। ওরা সেটাও গাইলো।
রিয়াজ ভাইয়ের সঙ্গে ভ্রমনও খুব আনন্দের। চীনে দু’বার তিনি প্রেস ক্লাবের সাংবাদিক প্রতিনিধি দল নিয়ে গেছেন। একটি দলে আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। মনে হয়েছে সেটাই ছিল আমার জীবনের সেরা ভ্রমন, খুব উপভোগ করেছি। এক রেস্তোরায় ‘বেইজিং ডাক’ ও চালের রুটি খেয়েছিলাম খুব মজা করে। বাবুর্চিকে ডেকে চীনা অনুবাদকারীর সহযোগিতায় প্রস্তুত প্রণালী রিয়াজ ভাই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। খাবারটি সেভাবেই তৈরি হয়। এখনও ‘বেইজিং-ডাক’-এর স্বাদ জিভে লেগে আছে। সার্ক শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে সাফমার অনুষ্ঠানে রিয়াজ ভাইয়ের সঙ্গে দিল্লী গিয়েছিলাম। অশোকা হোটেলে ছিলাম। সেখানকার ‘গোলাপ জাম’ মিষ্টি স্পেশাল এক খাবার। রিয়াজ ভাই আমাদের বললেন, এ হোটেলের গোলাপ জাম খেতে যেনো আমরা ভুলে না যাই। আসলেই অসাধারণ স্বাদের সেই মিষ্টি। রিয়াজ ভাইকে নিয়ে সেখানে প্যালেস্টাইনের বেলে ড্যান্স আমরা উপভোগ করেছিলাম।
করোনা মহামারী সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব ইত্যাদি কারণে দেড় বছরেরও বেশি সময় পর রিয়াজ ভাইকে আমরা ক্লাবে দেখতে পাই। আগের মতোই আমরা আড্ডায় মেতে উঠি। গিয়াস কামাল চৌধুরী ভাইয়ের স্মরণ সভায় তিনি ছিলেন প্রধান অতিথি। অনুষ্ঠানে গিয়াস ভাইয়ের সঙ্গে তার সারা জীবনের বন্ধুত্বের মজাদার সব ঘটনা এক এক করে বললেন। অনুষ্ঠানটি খুবই উপভোগ্য ছিল। অনুষ্ঠান শেষে সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খানের কক্ষে আমরা দুপুরের খাবার খাই। মিষ্টিও ছিল। রিয়াজ ভাইকে দেখলাম তিন চারটি মিস্টি খেয়ে ফেললেন। বললেন, অনেক দিন ধরে মিস্টি খেতে পাই না, ভালোই লাগছে। ইলিয়াস খানকে তিনি বললেন, ঢাকার বাইরে একটি ভ্রমন আয়োজন করতে। কারণ হিসেবে বললেন, “অনেকদিন ধরে ঘরে বন্দী। ভালো লাগছে না। চলুন কোথাও বেড়াই।” নদীপথে বরিশাল যাওয়ার কথা হচ্ছিল। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনা সেটা আর হতে দিলো না। করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের আইসিইউতে চলে গেলেন রিয়াজ ভাই। সেখানেই তাঁর জীবন প্রদীপ নিভে যায়। নির্মম নিষ্ঠুর করোনাভাইরাসের আক্রমণে রিয়াজ ভাইয়ের মতো এই পৃথিবীর কত মানুষের কত প্রিয়জন হারিয়ে গেছে!
নয়াদিগন্ত, ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, abdal62@gmail.com


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর