• শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ খবর
Банда казино рабочее зеркало Банда Казино – как начать играть? Banda casino официальный сайт: бонусы, игровые автоматы в казино Банда Как Вывести Деньги Драгон Мани? Казино Драгон Мани Зеркало Банда Казино – официальный сайт Банда казино онлайн Общий обзор Банда Казино Отзывы Банда Казино – Мнения и Отклики от Реальных Игроков Banda Casino Обзор популярных игр в Banda Casino: Зеркало Банда Казино | Halostar Marketing Kometa casino официальный сайт: бонусы, игровые автоматы в казино Комета Казино Комета официальный сайт онлайн. Зеркало казино Kometa. Личный кабинет, вход, регистрация Как получить бонусы в Комета Казино? Онлайн Казино Банда. Зеркало Казино Banda. Личный Кабинет, Регистрация, Игровые Автоматы Банда Казино Мобильная Версия Официальный Сайт Banda Casino Банда Казино Мобильная Версия Официальный Сайт Banda Casino Banda Casino Зеркало – Рабочие Зеркало На Сегодня Банда Казино Онлайн Казино Банда. Зеркало Казино Banda. Личный Кабинет, Регистрация, Игровые Автоматы Банда Казино – Вход На Сайт, Личный Кабинет, Бонусы За Регистрацию, Лучшие Слоты На Деньги И Бесплатно В Демо-Режиме Banda Casino Зеркало – Рабочие Зеркало На Сегодня Банда Казино Банда Казино Мобильная Версия Официальный Сайт Banda Casino Играй В Уникальном Стиле: Комета Казино Ждет Тебя! Комета Казино Мобильная Версия Официальный Сайт Kometa Casino Онлайн Казино Комета. Зеркало Казино Kometa. Личный Кабинет, Регистрация, Игровые Автоматы Kometa Casino Зеркало ᐈ Вход На Официальный Сайт Комета Казино Игровые автоматы бесплатно лягушка Комета Казино Tilslutte Casino inden for Danmark Bedste Danske Online Casinoer inden for 2024 Uefa Uncovers Mostbet As Winners League Sponsor” 2024 25 Uefa Countries League: All You Need To Know Uefa Nations League Mostbet Brazil Spotlight: Perspectives And Even Challenges Of The Particular Brazilian Market Noticias Igaming” Withdrawal Actions Casino Withdrawal Alternatives On the web Bisca Non Aams, I Migliori Ancora Con l’aggiunta di Sicuri Casa da gioco Online Stranieri Kings Jester Slot Geben Eltern jetzt jenes Erreichbar-Runde kostenfrei Gambling establishment Deposit Possibilities Local casino Banking Tips Australian continent GameTwist unsrige Erfahrungen via unserem Social Spielbank JackpotPiraten Free Spins, 2 Aktionen and 50 Freispiele

বিগত শতকের পলাতক আলোছায়া : আমাদের জীবন গিয়েছে চার দশক

রিপোর্টারের নাম : / ৪৮ ভিউ
আপডেট সময়: বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১

মিথুন আহমেদ

জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুড়ি কুড়ি বছরের পার—
তখন হঠাৎ যদি মেঠো পথে
পাই আমি তোমারে আবার !

স্মৃতি এক চঞ্চল গতিসম্পন্ন যান। কারো কারো জীবন তার চেয়েও চঞ্চল গতিতে ধেয়ে বেড়ায়। আমার সকল অস্থিরতা দিয়ে আমি নিশ্চিত জানি আমিও গোছাতে পারিনি অথবা সবার মত করে গোছাতে চাইনি এ জীবন সংসার ও  যাপনকে। তবে আমি ভালো আছি। ভালোবসেছি যেমন অকাতরে–তার চেয়েও ভালোবাসা পেয়েছি ততোধিক–অকারণে। ভালোবসেছি নারী, বিপ্লব, দ্রোহ, কাব্যের ভুবন, শিল্প ও সংস্কৃতির আবাসন।

আমার  স্কুল শিক্ষক মা চাইতেন আমি তাঁর মতো করে রবীন্দ্রনাথের গান শিখি। আমার মা তাঁর বিদ্যালয়  জীবন থেকেই ছিলেন অধ্যাপক ড. সনজীদা খাতুনের ছাত্রী। নিলুফার ইয়াসমিন আর রওশন আরা মোস্তাফিজ এর সহপাঠী এবং একই সংগীতগুরু ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগুরুর সতীর্থ। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের একাট্টা ত্রিভুজ বন্ধুত্ব।  মা আর নিলুফার খালা চাইতেন আমি গান শিখি। আমাকে ‘ছায়ানট’ এ ভর্তি করালেন। আমার মন নেই তাতে। এসব কথা আজ থাক। ছন্নছাড়া জীবনই আমার কাছে শ্রেয়তর।

আমার মনযোগ পাঠ্যপুস্তকের বাইরে। এই ছোট্ট পরিসরে একটা স্মৃতির বয়ান লিখতে গেলে যা হয় আর কি ? চতুর্রপাশ  থেকে স্মৃতির নির্বাকতাগুলোও হুরমুড়িয়ে কথা বলাবলি শুরু করে। কি করে এড়াই তাকে ?

এরকম পরিস্থিতিতে অনেকের কথা মনে আসে। এলোমেলো ছায়াঘোর। গুছিয়ে বলা হয়না কখনোই।  প্রথমেই মনে এলো একজনের কথা। অথচ তার সাথে অনেকের মুখ। শুধুই লিখবো বলে আজ বসেছিলাম একজনকে নিয়ে। তা কি আর হয় ?  আমি কি লেখক না কি?  এই অজুহাত বালাই ষাট!  তাই তো রক্ষে !

এমনকি একথাও আজ বলতে গৌরব বোধ করি আমার প্রানপ্রিয় শিক্ষক অধ্যাপক ড. রাজীব হুমায়ূন আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার সকল অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন। তখন খুবই খামখেয়ালি স্বভাবী মানুষ আমি। প্রথাগত আর প্রাতিষ্ঠানিক  শিক্ষাকে তুচ্ছ মনে হয় তখন আমার কাছে।

আমার  জীবনের শৈশবের এই দুই বন্ধু–একজন শিশুবেলা থেকে একসাথে বেড়ে ওঠা বন্ধু শামীম আনোয়ার আর সেই কিশোরকাল থেকে আজো অকৃত্রিম বন্ধনে আবদ্ধ– নিকটতর বন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। ওদের মত  হিতাকাঙ্ক্ষী সুহৃদ  যদি না থাকতো তাহলে হয়তো  ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াটা  কোনোদিনই হতোনা আমার ।

‘ঘ’ ইউনিটে  ভর্তি ফরম তোলার শেষ দিন। আমার তাতে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। শামীম আমাকে না জানিয়ে আমার মা’র কাছ থেকে আমার মার্কশীট নিয়ে অ্যাটাস্টেড কপি জমা দিয়ে নিজের পকেটের টাকা দিয়ে ফরম কিনে তিতুমীরের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলো। তিতুমীর সেটা নিজ হাতে পূরণ করে শুধু আমার স্বাক্ষর নিয়ে রেজিস্টার বিল্ডিংএ জমা দিয়ে আসে। আমি কোনোদিনও শামীম আর তিতুমীরের সেই ঋণ পরিশোধ করিনি কিংবা করতেও চাইনি। ওদের কারোরি হয়তো সেই কথাগুলো আজ আর মনে নেই। ওদের কাছেও সেই কৃতজ্ঞতার কথাও কখনো আমার আজো জানান দেয়া হয়নি। দোস্ত তোরা ছিলি বলে এখনো ভালোবাসা শব্দটি এতো অর্থবহ !

এক বিকেলের গল্পে অনেক নস্টালজিয়া :
আহমাদ মাযহার ভাইকে চিনি সম্ভবত ১৯৮২/৮৩ সাল থেকে। প্রথম সংযোগটা ঘটিয়েছিলেন টুলু ভাই, অর্থাৎ শিশুসাহিত্যিক-ছড়াকার আমীরুল ইসলাম। আমাদের বিচরণ বকশিবাজার আর আজিমপুর, নবকুমার স্কুল থেকে ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুল। রেডক্রস, বিজ্ঞান মেলা, ব্রিটিশ কাউন্সিল আর বিশ্ববিদ্যালয় টিচার্স কোয়ার্টার শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. মোর্তজার ১৪ ফুলার রোডের বাড়িতে–তাঁর স্ত্রী পলা আপা অর্থাৎ  নীলিম ও দ্রুতি অরণীর মা আমাদের ‘অভিযাত্রিক’ নাট্যদলের অভিভাবক।

আমরা তখন দেয়াল পত্রিকা করি। স্বৈরাচার বিরোধী ছড়া কবিতার লিফলেট আর একুশে ফেব্রুয়ারির সংকলন বের করি। শেখ সাহেব বাজারের মানিক ভাইয়ের প্যারাডাইস প্রিন্টার্স থেকে সেসব ছাপা হতো। সে এক অন্য ইতিহাস। টুলু ভাইয়ের কথা বলতে গেলে বিশাল এক অধ্যায়,–এনিয়ে সময় করে নিশ্চই একদিন লিখবো।

আজ আহমাদ  মাযহার কে নিয়ে লিখবো বলে ভেবে দেখি একগুচ্ছ নাম যারা আমার জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তাদের কথাও মনে এলো। তাদের নিয়ে হয়তো কোনোদিনও আমার আর লেখা হবেনা। প্রায় চার দশক আগেকার একটি দিনকে ভেবে নাহয় তাদের কথা এলো মনে !   মন্দ কি ?

মাযহার ভাই সেই সময় প্রায় সবকিছু নিয়েই খুব হন্তদন্ত থাকতেন। সবসময়ই বেশ ছুটোছুটি করা একটা ভাব লক্ষ্য করতাম। ছড়াকার আহমাদ উল্লাহ, টুলু ভাই আর আমার দীর্ঘদিনে সহযাত্রী-শুভাকাঙ্ক্ষী অগ্রজ বন্ধু ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু এবং আমাদের অতি শ্রদ্ধেয় অগ্রণী অগ্রজ– সাহসের অগ্নীস্ফুলিঙ্গ তৎকালিক তুখোড় ছাত্রনেতা ও বিপ্লবী কবি মোহন রায়হান–আশির দশকের শুরুতে আমরা যখন লাগামহীন আড্ডা আর আন্দোলনে দিনরাত্রি মত্ত। তখন মাযহার ভাইয়ের সাথে সহসা আমার দেখা হতো না। এর অন্যতম কারণ তখন আমাদের প্রায় সকল সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ছিল সরাসরি রাজনীতি কেন্দ্রীক ও জীবন-ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ এবং যে কোনো মুহূর্তেই অ্যাকশন নির্ভর।

মাযহার ভাইয়ের সাথে নিয়মিত দেখা হওয়া শুরু হয় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে যাতায়াতের মধ্য দিয়ে। ১৯৮৩ সালের শেষ দিকে কিংবা ১৯৮৪ শুরুতে। ইতিহাস বিশ্লেষক ও নাট্যতাত্ত্বিক অধ্যাপক ড. রাহমান চৌধুরী আমাকে নিয়মিত কেন্দ্রে নিয়ে যাবার অভ্যাস তৈরী করান। তরুণ শিক্ষক  অধ্যাপক আলী রীয়াজ তখন  আমাদের মেন্টর। আমার মা  এক বিকেলে নটর ডেম কলেজ থেকে প্রায়শই ঠিক সময়মত বাড়ি না ফেরার বিচার নিয়ে যান  রীয়াজ ভাইয়ের কাছে।  রীয়াজ ভাই আমার মা’কে আশ্বস্ত করেছিলেন  এই  বলে যে আমি ঠিক যায়গাতেই আছি। রীয়াজ  ভাইয়ের  বক্তৃতা শুনি বিতর্ক শুনি। মারুফ চিনুর কাছে চে গুয়েভারার গল্প শুনি।  অভিনেতা চারুশিল্পী  আফজাল হোসেনের এডভার্টাইজিং  ফার্ম ‘মাত্রা’য় গিয়ে বসে থাকি অকারণে। শাহবাগের ‘মৌলি’ রেস্টুরেন্টের সামনে গিয়ে উঁকিঝুঁকি দেই।  ‘সিনোরিটা’র সামনে দিয়ে দাঁড়াই। ভেতরে  ড. আবেদীন কাদেন, রাজা ভাই, দিশু ভাই, ড্যানি ভাই তাঁদের খিস্তি শুনি  আর আবেদীন ভাইয়ের পাণ্ডিত্যপূর্ণ আলোচনা শুনে মুগ্ধ হতে থাকি। অধ্যাপক মিশুক মুনীর এর সাথে  ঘন্টার পর ঘন্টা হেতুহীন আড্ডা। সামনে  রাগীব আহসানের ‘রেখায়ন’ এর সামনে থেকে হাবীব আহসান কোহিনূর  ভাইয়ের  হেরে গলায় স্নেহের ডাক–আহমদ ছফা’র পিছু ছুটি। জার্মান  কালচারাল সেন্টারের দিকে যাই। সুলতানের আদম সুরত ছবি আঁকা দেখি। মুহম্মদ খসরু ভাইয়ের সাথে করে নিয়ে যায়  হরদোয়া  গ্লাস ফ্যাক্টরির পেছনে।  সাথে সব আজকের বরেণ্য চলচ্চিত্রকারেরা জাহিদুর রহিম অঞ্জন, এনায়েত করিম বাবুল,তারেক শাহরিয়ার, জোনায়েত হামিম। আমি ওঁদের কথাবলাবলির গোগ্রাসী শ্রোতা। গল্পকার সেলিম মোরশেদ আর কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র সাথে চলে যাই বলাকা সিনেমা হলের পেছনে  বাকুশা মার্কেটে চোলাই চর্চায় কিংবা ‘সাকুরা’র পানশালায়।  স্থপতি এনামুল করিমের নির্ঝর এর ছোট্ট টিন সেড দেয়া ঘরে সারা দুপুটা কাটিয়ে আসি। খন্দকার তাজুদ্দিন, তামান্না আপা, মুস্তাফা খালিদ পলাশ ভাইদের সাথে বুয়েটের স্থাপত্য অনুষদের সিঁড়িতে কড়া রোদের মধ্যে বসে থাকি। তাজুদ্দিন ভাইয়ের কবিতা শুনি। কখনো কখনো শাহনেওয়াজ হলের গণরুমে বা মিল্কী ভাই আর ধ্রব এষের ৩ নাম্বার রুমে গিয়ে ওদের খাটে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকি। আমার তখন এই সব করে বেড়াতেই বেশী ভালো লাগে।

অধ্যাপক অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক–তাঁরা তখন রমনা পার্কের ভেতরে একটা পাঠচক্র করতেন। মেসবাহ ভাইকে চিনতাম আরো ছেলেবেলা থেকেই–রাহমান মামার [ ড.রাহমান চৌধুরী] বন্ধু হিসেবে। মেজবাহ ভাই যখন বিয়ে করেন তখন আমি নবম শ্রেণীর ছাত্র। আমাদের বকশিবাজারের মোড়ে মেজবাহ ভাইয়ের জন্য একটা বাসা খুঁজে দেবার দায়িত্ব দিয়েছিলেন রাহমান মামা। আমার কৈশোর জীবনের এই শ্রদ্ধেয় অগ্রজ বন্ধুরা পরবর্তীতে অনেকেই আমার ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবনের শ্রেণীকক্ষের প্রিয় শিক্ষক ছিলেন।

মেজবাহ ভাই খুব করে তাগিদ দিতেন উৎসাহ দিতেন–আর বোঝাতেন সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য প্রচুর সিরিয়াস বই পড়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলে বলে।

তখন থেকেই একরকম সিরিয়াস বই পড়বার নেশা চেপে বসে। পাবলিক লাইব্রেরিতে গিয়ে আমি আর প্রামাণ্যচিত্রী চলচ্চিত্রকার কবি সাইফুল ওয়াদুদ হেলাল ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে বই পড়ি। বই নাড়াচাড়া করি। আড্ডা দেই।

আমার এখনো মনে আছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে বই পড়ার শুরুতে আমার তখন কেন্দ্রের লাইব্রেরি কার্ড নেই, মাযহার ভাই নিজে খুঁজে খুঁজে বুকসেল্ফ থেকে আমাকে বই পড়তে দিতেন। মাযহার ভাইয়ের সাথে তখনো কথা বলা আড্ডা দেয়ার ফুরসত কম ছিল। এরপর কেন্দ্রে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজে অর্থাৎ মিলনায়তন বরাদ্দ কিংবা মিলনায়তন ব্যাবহার করে মহড়া দেয়া সবকিছুতে নিয়মের মধ্য থেকে প্রচ্ছন্ন একটা পক্ষপাতিত্বের স্নেহ তাঁর কাছ থেকে আমি পেয়েছি। এরই মধ্যে বেশ কয়েক বছর পার হয়েছে। আমাদের নিয়মিত যাতায়াত কেন্দ্রে। আর আজিজ মার্কেটে সম্ভবত তখন শুধু একটাই বইয়ের দোকান।   লিটিলম্যাগ ‘গান্ডিব’ প্রকাশক হোসেন হায়দার চৌধুরীর বুকস্টোর। সেই বইয়ের দোকানে দিনমান আড্ডা দিতেন কবি বদরুল হায়দার আর অভিনেতা হাবিবুল হাসান। আমরা তখন নিত্য আনাগোনা করি সেখানে।

এখনো মনে আছে একবার আমার আবৃত্তি দল ‘বাচনিক’ এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী করেছিলাম বিশাল তোরজোড় করেই। ‘বাচনিক’  এর লোগো করে দিয়েছিলন আমার বন্ধু চারুশিল্পী ধ্রুব এষ। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রায় সকল এলাকা জুড়েই আয়োজন করেছিলাম অনুষ্ঠানটি। অর্থাৎ মিলনায়তন জুড়ে শুধু চঞ্চল মাহমুদের আলোকচিত্র। বাইরে উন্মুক্ত মঞ্চ। সেখনে আবৃত্তি ও রবীন্দ্র সংগীত। আমন্ত্রিত অতিথি আবৃত্তিকার ছিলেন গোলাম মুস্তাফা, সৈয়দ হাসান ইমাম, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, কেয়া চৌধুরী, কাজী আরিফ, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, সালেক খান, প্রজ্ঞা লাবণী, লায়লা আফরোজ, ডালিয়া আহমেদ। গান করেছিলেন নাহার জামিল, নাঈমা আলী, পাপিয়া সারোয়ার, ইফফাত আরা দেওয়ান, মহিউজ্জামান চৌধুরী ময়না, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, মিতা হক, লিলি ইসলাম। উদ্বোধক ছিলেন জোট আহ্বায়ক ফয়েজ আহমদ, প্রধান অতিথি ছিলেন দৈনিক  ইত্তেফাক সম্পাদক আমার গুরু আর আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম বন্ধু রাহাত খান; বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্য ব্যক্তিত্ব আতিকুল হক চৌধুরী এবং কবি ও সচিব মোফাজ্জল করিম, অতিথি ছিলেন নাট্যকার মুক্তিযোদ্ধা ও পুলিশ উপ-মহাপরিদর্শক ক্যাপ্টেন মনসুরুল আজিজ, সস্ত্রীক গান শুনিয়েছিলেন শিল্পী দম্পতি তৎকালিক পুলিশ মহাপরিদর্শক বোরহান সিদ্দিকী ও রেহানা সিদ্দিকী আর আমার সহোদরের মত আপন প্রান কবি রেজাউদ্দিন স্ট্যালিন। ছিলো আমার  নির্দেশনায় দলের দু’টি বিশেষ আবৃত্তি প্রযোজনা ‘তিথোনাসের কান্না’ ও ‘মহাকালে কালবেলা’। উদ্বোধনী নৃত্যের কোরিওগ্রাফি করেছিলেন সঙ্গীতা ইমাম। আলোক পরিকল্পনা করেছিলেন ইশরাত নিশাত। মঞ্চ পরিকল্পনা  ও আমন্ত্রণপত্রের নকশা করেছিলেন খ্যাতিমান চারুশিল্পী ও ডাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক অশোক কর্মকার। সভাপতিত্ব করেছিলেন আমাদের দলের সভাপতি আবৃত্তিকার অভিনেত্রী আবৃত্তিকার  আলেয়া ফেরদৌসী। আমি তখন ছিলাম দলের সাধারণ সম্পাদক।

এত কিছুর বিশদ বর্ণনা এলো মনে এই কারণে যে আমি ও আমরা সবাই তখন তরুণ। বেসরকারি ইলেক্ট্রনিকস গণমাধ্যম তখনো শুরু হয়নি। প্রকাশিত হয়নি এতো প্লিন্ট মিডিয়া । আবৃত্তি রবীন্দ্র সংগীতে আজকের মতো তখন পৃষ্ঠপোষকতার কেউ ছিল না। আর তাছাড়া আমরা যেহেতু   সাংস্কৃতিক চর্চার বিপ্লবী ধারায় বিশ্বসী তাই কর্পোরেট স্পন্সর নেব না, এরকম অবস্থানে ছিলাম দৃঢ়।

 

আমাদের দলের কার্যনির্বাহী পরিষদ অর্থাৎ আমি, আলেয়া ফেরদৌসী, রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী  মহিউজ্জামান চৌধুরী ময়না, কবি ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন, পরবর্তীতে সচিব আবৃত্তিকার আসলাম ইকবাল বাবু, অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, আবৃত্তিকার অভিনেত্রী মাশুকা নাসরিন রাকা, নাট্যকার ও নির্দেশক মারুফ কবির, আবৃত্তিকার সংবাদ পাঠিকা সুমনা ঘোষ, আবৃত্তিকার মেরী রাশেদীন সিদ্ধান্ত নেই যে, নিজস্ব তহবিল, বন্ধুজন আর ব্যক্তিগত উৎস ও বি.টি.ভি-তে দলীয় পরিবেশনা থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়েই অনুষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ করবো।

সে এক বিশাল যজ্ঞ। বাইরে মঞ্চ করা, সেখানে কাঠের পাটাতন দিয়ে উঁচু মঞ্চ তৈরি করে সেখানে এরিনা থিয়েটারের বিশাল বিশাল লাইট জোন, অসংখ্য স্ট্যান্ড আর ফ্ল্যাট মাইক্রোফোন, ইলেক্ট্রিক তার। মাঠে শীতের ভাপা পিঠা বানানোর চুলা বসানো। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার এগুলোর কোনো কিছুকেই অনুমোদন দেয়ার লোক নন। বিশেষ করে সামনে সবুজ মাঠে কেউ বসুক তা তিনি একেবারেই পছন্দ করতেন না। এখনো বেশ মনে আছে অনুষ্ঠানের দিন সকাল পর্যন্ত সেই অনুমোদন পাচ্ছিলাম না। আমি সকালেই স্যারের সাথে দেখা করি। কিন্তু স্যারের মন কিছুতেই গলছে না, বরঞ্চ স্যারের অন্য সব প্রাসঙ্গিক কথা শুনে সেদিন মনে হয়েছিলো এ কাজগুলো করা একটা অপরাধ। তবে সেদিনকার সেই পরিস্থিতিতে আগের থেকেই বেশ কিছুটা আবেগ তাড়িত হয়ে ছিলাম বলে স্যারের কথাগুলোকে হয়তো সেদিন ভুলও বুঝতে পারি। তবে আমি খুব মুষড়ে পরেছিলাম। খুব কষ্ট হচ্ছিলো আমার। নিজেকে খুবই অসহায় আর পরাজিত মনে হচ্ছিলো। স্যারের সামনে মাথা নিঁচু করে আমি চুপ করে আছি। আমার তখন কান্না পাচ্ছিলো। অবশ্য আমার মন খারাপ হবার বিষয়টি স্যার অনুমান করেছিলেন। স্যারের স্নেহ থেকে আমাকে সেদিন  তিনি এক বিন্দুও বঞ্চিত করেননি।  বরঞ্চ অধিকতর সুযোগ আর তার ভালোবাসার বন্ধনে চিরদিনের জন্য আজো আগলে রেখেছেন। যা আমি অন্যদের কাছে পরে শুনেছি। সায়ীদ স্যারই মাযহার ভাইকে বলেছিলেন আমার সকল পরিকল্পনায় স্যারের সম্মতি আর সমর্থন আমাকে জানিয়ে দিতে। তাই আজো আমার অনেক বড় আশ্রয় আর নির্ভরতার যায়গার দাঁড়িয়ে আছেন আমার প্রিয় মানুষ প্রিয় শিক্ষক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার।

আমি কিছুক্ষণ স্যারের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে টি এস সি র পরিচালক এক সময়কার ডাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক  ময়না ভাইয়ের রুমে চলে আসার চিন্তা করি পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবার জন্য। আহমাদ মাযহার ভাই কথা বলার এ মুহূর্তগুলোকে দেখছিলেন সেই সময়কার কেন্দ্রের একতলা ভবনের এসি দেয়া কম্পিউটার রুমের পাশের কক্ষ থেকে–বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।

আমি তখন কেন্দ্রের মূল গেটের প্রায় কাছাকাছি। পেছন থেকে মাযহার ডেকে বললেন ‘তুমি আসতাসো তো আবার? স্যারেরে আমি বলতাসি। সব তোমার আগের প্ল্যানের মতোই রাখো’। আমি হতবিহ্বল হয়ে মাযহার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।  আমাদের অনুষ্ঠান আগের প্ল্যান মতই হলো।

মাযহার ভাই  কি কারনে আর কতটুকু  আপনার প্রতি সেই ভালোবাসাটুকু আজো আমি বহন করে নিয়ে বেড়াই সে- কথাটুকু কোনোদিনও আপনাকে বলা হয়নি।

আমীরুল ইসলাম টুলু ভাই অনেক অভিমানে আমার দেশ ছাড়বার অনেক পর একদিন কাছে ডেকে নিয়ে বলেছিলেন– ‘ তুই কেন চইল্যা গেলি দেশ ছাইড়া , আমরা একলগে থাকতাম, ঝগড়া করতাম আবার মিল হইয়া যাইতাম–সেইটা কত আনন্দ ছিলো রে মিথুন  ‘। এখনো কানে ভেসে বেড়ায় সেই কথাগুলো।

মাযহার ভাই আর আমি, এমনিভাবে বহুকিছুর মধ্য দিয়ে আমরা আছি। আবার কোথাও নেই। দশকের পর দশক এক দৃশ্যত অথচ যেন অদৃশ্য সম্পর্কের বন্ধন যুক্ত হয়ে রইলাম। অনেক মান-অভিমান বাহাস মিল-অমিল তর্কাতর্কি। আবার কিছুক্ষণ পর এমন যেন কোনদিন কখনোই কিছুই হয়নি। এই নিয়ে আমরা এখনো চার দশক অনুরূপ আচরণে বলবৎ।

চোখের নিমিষে এতগুলো বছর গেলো চলে। তবুও আজো আমরা বহুপথ হাঁটা শেষে–আবারো একসাথে কিছুটা পথ আবারো চলেছি  হয়তো কোথাও…

‘চোখের পাতার মতাে নেমে চুপি কোথায় চিলের ডানা থামে—
সােনালি সােনালি চিল—শিশির শিকার করে নিয়ে গেছে তারে
কুড়ি বছরের পরে সেই কুয়াশায় পাই যদি হঠাৎ তােমারে ? ‘

২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

নিউইয়র্ক


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর