• সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৮:০৬ পূর্বাহ্ন

কবি শহীদ কাদরী ও তাঁর  সমাজ চিন্তা

Reporter Name / ৬০ Time View
Update : রবিবার, ২ জানুয়ারী, ২০২২

 

 

মিনহাজ আহমেদ

আড্ডাপ্রিয় শহীদ কাদরীর সাথে বসলে সময়ের কথা ভুলে যেতে হতো। সেটা আনুষ্ঠানিক হোক, কিংবা অনানুষ্ঠানিক হোক। একবার শহীদ ভাইয়ের স্বকণ্ঠ কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান হচ্ছিল। আমি আগে থেকেই ক্যামেরা মাইক্রোফোন নিয়ে প্রস্তুত ছিলাম, এবং পুরো অনুষ্ঠান রেকর্ড করলাম। তার কিছু কিছু আমি ইউটিউবে আমার একটা চ্যানেল আছে, সেখানে আপলোড করেছিলাম (নিচে মন্তব্য অংশে তার লিংক দিলাম) কিন্তু সেদিন শহীদ ভাই প্রসঙ্গক্রমে যে কথাগুলো বলেছিলেন, সেগুলো আপলোড করা হয়নি, দ্বিতীয়বার শোনা হয়নি, সেগুলোর কথা মনেও জাগেনি। বছর শেষের ছুটির সময় করোনায় গৃহবন্দী থাকাকালে পুরনো হার্ড ড্রাইভগুলো ঘাঁটতে গিয়ে সেটা পেলাম। বলাবাহুল্য, কথাগুলো আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে হলো, তাই শুনলাম, এবং সবাইকে শোনাবার জন্য ফেসবুকে পোস্ট করলাম।

https://www.facebook.com/737611233/posts/10159198780871234/?d=n


আমার কাছে অনেক সময় মনে হয়েছে, শহীদ ভাইয়ের দুটো চরিত্র ছিল। একটা ছিল দস্যিপনায় অভ্যস্ত এক চিরতরুণের চরিত্র। এই শহীদ কাদরী প্রেমিকা নাজমুন্নেসা পিয়ারীর বাড়ির বাইরে গিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য চিৎকার দিয়ে কোনো ছেলের নামে ডাকাডাকি করতেন। এই শহীদ কাদরী একদিন দরজাবন্ধ টয়লেটের ভেতরে বসে কবি আল মাহমুদের এক কবিতার বই পুরোটা মুখস্ত পাঠ করে আল মাহমুদকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। সেদিন শহীদ কাদরী টয়লেট থেকে বের হতেই অভিভূত অশ্রুসজল আল মাহমুদ শহীদ কাদরীকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। তিনি ভাবতেই পারেননি শহীদ কাদরী তার কবিতা এতোটা পছন্দ করবেন যে তার পুরো একটা কাব্যগ্রন্থই মুখস্ত করে ফেলবেন! আসলে এই মুখস্ত করার ঘটনাটা সত্য নয়। ঘটনা হলো, শহীদ ভাইয়ের টয়লেটে থাকা অনেকগুলো বইয়ের মাঝে আল মাহমুদেরও একটা কাব্য গ্রন্থ ছিল, শহীদ কাদরী মুখস্ত নয়, সেই কাব্যগ্রন্থ দেখে দেখেই পাঠ করেছিলেন!


শহীদ কাদরীর অপর চরিত্রটি হলো একজন সিরিয়াস তাত্ত্বিক ঋষির। এই শহীদ কাদরী কথা বলেন একজন ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো। বিভিন্ন লেখকের, দার্শনিকের, বৈজ্ঞানিকের, গবেষকের উদ্ধৃতি দিয়ে, বইয়ের উল্লেখ করে, ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়ে বক্তব্য বিষয় সম্পর্কে তিনি যুক্তিপ্রমাণ দিতেন।
কবি শহীদ কাদরীর স্বরচিত কবিতা পাঠ অনুষ্ঠানের যে অংশের ভিডিও আমি এখানে পোস্ট করেছি, সেটি শহীদ কাদরীর এই দ্বিতীয় চরিত্র। আড্ডার মেজাজে শহীদ ভাই সেদিন প্রসঙ্গক্রমে মানিক বন্দোপাধ্যায়ের একটি গল্প বলেছিলেন যাতে পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা কতটা নির্মম হতে পারে, এবং সে তুলনায় মার্ক্সবাদী সমাজ ব্যবস্থা মানুষে মানুষে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কতটা মানবিক হতে পারে, সেটা ব্যাখ্যা করেছিলেন।


পুনশ্চ: আমার এই পোস্ট-এর শিরোনাম রেখেছি “কবি শহীদ কাদরী ও তার সমাজচিন্তা”। প্রশ্ন উঠতে পারে, শহীদ কাদরীতো মানিক বন্দোপাধ্যায়ের গল্প বলছিলেন, এটাতো শহীদ কাদরীর নিজের গল্প নয়। আসলে গল্পটা মানিক বন্দোপাধ্যায়ের হলেও একজন মার্ক্সীয় আদর্শে বিশ্বাসী হিসেবেই শহীদ ভাই তার আলোচনায় মার্ক্সবাদের মানবিক দিকটির প্রশংসা করছিলেন, আর নিন্দা করছিলেন পুঁজিবাদের।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category