• সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন

।। তিতুমীর কলেজে ‘বধ্যভূমিতে একদিন’…………।।

Reporter Name / ৮৬ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২২

 

 

কাওসার চৌধুরী

গতকাল ১৯ জানুয়ারি ২০২২, বুধবার, সরকারি তিতুমীর কলেজে অনন্য একটি প্রদর্শনী হয়ে গেলো প্রামাণ্যচিত্র ‘বধ্যভূমিতে একদিন’-এর। প্রায় এক হাজারেরও বেশী ছাত্রছাত্রী এবং শ’খানেক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন এই প্রদর্শনীতে। এর বাইরে ছিলাম আমরা মাত্র দু’জন; আমি আর মাহমুদ সেলিম। সেলিম ভাইকে আমিই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম প্রামাণ্যচিত্রটি দেখতে।

সবাই জানি, মাহমুদ সেলিম ‘উদীচী’র অন্যতম সংগঠক, সুরকার, শিল্পী এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা। উনার গাওয়া গানের একটি অংশ (দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা) আমরা ব্যবহার করেছি এই প্রামাণ্যচিত্রে । অবশ্য শিল্পী তপন মাহমুদের গাওয়া গানের (ভেবোনা গো মা তোমার ছেলেরা….) কিছু অংশও ব্যবহার করেছি আমরা ‘বধ্যভূমিতে একদিন’-এ। এই দু’জনের কাছে আমরা কৃতজ্ঞতায় আনত।

সফল এই প্রদর্শনীর সকল প্রশংসা এই প্রামাণ্যচিত্রের উপস্থিত দর্শকদের। তাঁদের উপস্থিতি এই প্রদর্শনীকে উজ্জ্বল করেছে, প্রাণবন্তু করেছে। তবে, তারও আগে যাঁর নামটি উচ্চারণ করতে হয়- তিনি এই কলেজের সম্মানিত অধ্যক্ষ তালাত সুলতানা। উনাকে অনুরোধ জানানোর প্রায় সাথে সাথেই উনি সানন্দে রাজী হয়ে যান এই প্রামাণ্যচিত্রটি তাঁর কলেজে প্রদর্শনের জন্য। একটু সময় নিয়ে তিনি সহকর্মীদের সাথে আলোচনা করেই প্রদর্শনীর তারিখ নির্ধারণ করে দেন। সে অনুযায়ী গতকাল আমরা প্রামাণ্যচিত্রটি প্রদর্শন করতে পেরেছি সরকারি তিতুমীর কলেজে। এই প্রামাণ্যচিত্রের নির্মাতা হিসেবে আমি অধ্যক্ষ তালাত সুলতানার কাছে ঋণী, কৃতজ্ঞ।

প্রদর্শনীশেষে সবচেয়ে বড়ো ঝাঁকুনিটি দিয়েছেন এই কলেজের দর্শন বিভাগের শিক্ষক- অধ্যাপক মালেকা আকতার বানু। উনি বললেন- “অত্যন্ত আবেগাক্রান্ত হয়েছি এই প্রামাণ্যচিত্রটি দেখে। অনেকবার চোখ মুছেছি দেখতে গিয়ে। মুখের মাস্কটি আর্দ্র হয়ে উঠেছে আমার অশ্রুতে। একটা সময়ের পরে মনে হচ্ছিল আর বুঝি ‘ভার’ (বেদনার) নিতে পারবোনা। তারপরও ধৈর্য নিয়ে বসে থেকেছি, পুরো ছবিটাই দেখেছি।

খুবই ব্যথিত হয়েছি কুষ্টিয়ার কুমারখালিতে বীরাঙ্গণাদের অংশ এবং জয়পুরহাটে গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী শামসুন্নাহারের ‘কথনে’। চট্টগ্রামের খুকু রানী দেবী, সৈয়দপু্রে গোলাহাট হত্যাকাণ্ড, রেলওয়ে কারখানার বয়লারে বাঙালি পুড়িয়ে মারা- এসব কাহিনী সহ্য করতে পারার মত নয়!  শুধু এইটুকুই বা কেন- আসলে পুরো ছবিটির সবটুকুই অনেক বেশী  গুরুত্বপূর্ণ। যতটা পেরেছি আমি নোট নিয়েছি। এগুলো আমি লিখবো আমার ফেসবুকের পাতায়। আমার ‘ফলোয়ার’দের আমি জানাতে চাই এই কথাগুলো।”

মো. মাহবুবুর রহমান- এই কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক। উনার অনুভূতি জানাতে গিয়ে বললেন- “আপনি (নির্মাতা) নিলফামারি থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১৪৮টি বধ্যভূমিতে চিত্র নির্মাণের কাজ করেছেন। এবারে সিলেট থেকে খুলনা পর্যন্ত বধ্যভূমিগুলো নিয়ে আরও একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করুন। তাহলে পুরো দেশের বধ্যভূমির একটা চিত্র পাওয়া যাবে।”

আমি উনাকে জানাতে গিয়ে গতকালের সমাবেশে বলেছি- উনার কাঙ্ক্ষিত অঞ্চলগুলোতে আমার চিত্রধারণের কথা। আমি আসলে ’৯৬ সালেই খুলনার বধ্যভূমিগুলো নিয়ে কাজ করেছি আমার নিজের উদ্যোগেই। সেই সময়ে আমি খুলনা শহরে গল্লামারি, ফরেস্টঘাটসহ আরো কয়েকটা বধ্যভূমিতে প্রোটাগনিস্টদের ‘কথন’ নিয়েছি।

খুলনা শহরের বাইরে-
দা-কোপ, বটিয়াঘাটা, শিরোমণি, রামপাল, ডুমুরিয়ার চুকনগরে চিত্রধারণ করেছি; প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলেছি। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা মানুষদের ‘কথন’ ধারণ করেছি। তার কিছু অংশ তখনই (’৯৬ সালে) বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে প্রচার করেছি।

তবে সিলেট অঞ্চলে খুব বেশী কাজ যে করা হয়েছে- তেমনটি অবশ্য নয়। অল্প কাজই করেছি মাত্র। আরো অনেক কাজ করতে হবে- বিশেষতঃ সিলেট, ময়মনসিংহ এবং কুমিল্লার কিছু অংশে। আশা করছি সুযোগ হলে সেগুলোও সম্পন্ন করতে পারবো জীবদ্দশাতেই।

তিতুমীর কলেজের সম্মানিত শিক্ষকদের মাঝে গতকাল- অধ্যাপক রতন সিদ্দিকও রক্তব্য রেখেছেন। প্রামাণ্যচিত্রটির প্রশংসা করার পাশাপাশি তিনি নতুন প্রজন্মকে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে- বেশী বেশী এই প্রামাণ্যচিত্রটি দেখার আহবান জানান। অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনি অবশ্য আমাকে উপস্থিত দর্শকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন- আমার সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত শুনিয়ে। বন্ধু রতন সিদ্দিককে অসংখ্য ধন্যবাদ।

শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগের তিতুমীর কলেজ শাখার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক বক্তব্য রাখেন। দুজনেই তারা নির্মাতাকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভবিষ্যত গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

বক্তব্য রেখেছেন কলেজের সম্মানিত অধ্যক্ষ তালাত সুলতানা। অধ্যাপক তালাত সুলতানা একজন উঁচু মানের রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী। ভেবেছিলাম উনাকে দু’লাইন রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করতে অনুরোধ করবো। কিন্তু তার আগেই উনি বক্তব্য সমাপ্ত করলেন সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে। তরুণ প্রজন্মকে আহবান জানালেন বার বার এই প্রামাণ্যচিত্রটি দেখতে। শিক্ষার্থীদের আহবান জানালেন-  মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আলোকিত হতে।

অধ্যক্ষ অধ্যাপক তালাত সুলতানা গান গাওয়ার হাত থেকে রেহাই পেলেও সেলিম ভাই কিন্তু পান নি। অনুষ্ঠানের একদম শেষে উনি গাইলেন সৈয়দ শামসুল হকের লেখা থেকে। হক ভাইয়ের লেখা দূর্দান্ত কবিতা- ‘আমার পরিচয়’তে অসাধারণ সুর করেছেন সেলিম ভাই। আমাদের অনুরোধে পুরো গানটিই গেয়ে শোনালেন মাহমুদ সেলিম।

সেই কবিতাটির ক’টি লাইন দিয়ে আজকের লেখাটি সমাপ্ত করতে চাই।

“আমি জন্মেছি বাংলায়
আমি বাংলায় কথা বলি।
আমি বাংলার আলপথ দিয়ে, হাজার বছর চলি।
………………
পরিচয়ে আমি বাঙালি, আমার আছে ইতিহাস গর্বের-
কখনো ভয় করিনাকো আমি উদ্যত কোন খড়গের।
শত্রুর সাথে লড়াই করেছি, স্বপনের সাথে বাস;
অস্ত্রেও শান দিয়েছি যেমন শস্য করেছি চাষ;
একই হাসিমুখে বাজায়েছি বাঁশি, গলায় পরেছি ফাঁস;
আপোষ করিনি কখনোই আমি, এই হ’লো ইতিহাস।”
—————————————-
দুই তিনটে ছবি আমি তুলেছি।
বাকী ছবিগুলো তিতুমীর কলেজের বন্ধুদের তোলা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category