• সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন

খাসকথা ও একজন খালেদ সরফুদ্দীন 

Reporter Name / ৫৩ Time View
Update : মঙ্গলবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

 

 

— শহীদুল ইসলাম বাচ্চু, নিউইয়র্ক 

 

 

“কিছু কিছু কথা আছে বলা যায় না

কিছু কিছু কান আছে মলা যায় না

কিছু কিছু কথা আছে বলে দিতে হয়

কিছু কিছু কান আছে মলে দিতে হয়”

“বশীকরণ তাবিজ/কথা” নামক বইয়ে তিনি কথাগুলো বলেন। এটি ২০১৮ সালের কথা। তবে আমি প্রথম দেখি ফেসবুকে সেই বছরের সম্ভবত মধ্যভাগ অথবা শেষদিকে। তখনও পরিচয় হয়নি। কিন্তু ‘অজ্ঞাত’ খালেদ সরফুদ্দীন এর পরপরই ‘অজ্ঞাত’ পাঠক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম’কে (উর্ফ শহীদুল ইসলাম বাচ্চু) ‘বশ’ করে ফেলেন। অর্থবহ ও গভীর চিন্তার হুল ফোঁটানো“কিছু কথা” আর মুগ্ধতার তাবিজ দিয়েও যে বশীকরণ করা যায় কিংবা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বশীভূত হতে হয় — তা টের পেয়েছিলাম।এরপর পরিচয় হয়েছে, ঘনিষ্ঠতা হয়েছে তাঁর সঁঙ্গে, তাঁর নিরবচ্ছিন্ন লেখালেখির সঙ্গে এবং এসব কিছুর উর্ধ্বে একজন ‘মানুষ’ খালেদ সরফুদ্দীনের সঙ্গে। সেইসঙ্গে বেড়েছে হৃদ্যতা, যা আমার আমেরিকা জীবনের অন্যতম প্রাপ্তি।

গৌরচন্দ্রিকা দীর্ঘ হচ্ছে। কবি, ছড়াকার, লেখক সরফুদ্দীনের কর্মকান্ডের অর্থাৎ তাঁর লেখালেখির সৌন্দর্য হ্রস্ব মাপে তো বয়ান করা সম্ভব নয়। প্রতিদিন তিনি লিখেন। মূলত: ছড়াই লিখেন। মজার মজার ছড়া। হাস্যরসের উপাদানে ভরপুর। আবার ছড়ার ভাঁজে ভাঁজে ছড়িয়ে দেন আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক স্যাটায়ার, সেগুলো অনেক সময় হয় ছুঁড়ির তীক্ষ্ন ফলার মত; সরাসরি জায়গামত বিদ্ধ হয়।

বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছিলাম সরফুদ্দীনের একটি বই নিয়ে রিভিউ লিখার অপচেষ্টা নিব। এবারের নিউইয়র্ক মুক্তধারা বইমেলায় (২০২১) ভাবনাটা গোপন রেখে তাঁকে বললাম, “আপনার ভালোলাগা বইগুলোর মধ্য থেকে একটি বাছাই করুন তো!” মনে হয় কবি সমস্যায় পড়লেন, একজন লেখকের কাছে তাঁর সকল সৃষ্টিই তো সন্তান সমতুল্য, আদরণীয়। “খাসকথা”র দৃষ্টিকাড়া প্রচ্ছদে কী মনে করে আমি হাত রাখলাম। তিনি তাৎক্ষণিক বইটি তুলে নিয়ে হাঁফ ছেড়ে যেন বাঁচলেন, “নিন, এটা পড়ুন।”

লেখালেখির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে অল্পস্বল্প জড়িত থাকলেও আজতক কোনো বইয়ের রিভিউ লিখিনি। সাহস পাইনি। বয়স বাড়ন্ত হলে সাহসেরও বাড়ন্ত হয় মনে হয়! মনের মধ্যে প্রচুর ভয় নিয়ে আজ (৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২) দু:সাহস করেই ফেললাম..!

‘খাসকথা’য় খাসকথার অভাব নেই। মোট ৮০টি ছড়া। সব ছড়াই মনে হবে মজাদার, সে তো বটেই; তবে তার চেয়েও বেশিপাঠকের মনোজগতকে ঝাঁকুনি দিবে। “ভালো ভালো লোকগুলো চলে যায়/

সুবাসিত কথাগুলো বলে যায়” (২) যখন বইয়ের শুরুতেই দেখি, মনের ভেতরঝাঁকুনিও শুরু হয়ে যায়। যত পাতা উল্টাই, নিজেকেস্হির রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

এরপর রাজনৈতিক পাঞ্চ —

“শীত এসেছে ভোটে

ভোট হেসেছে শীতে

ভোটের লাইনে সারি

উৎসবিহীন সংগীতে!” (৪) এটি পড়ার আবেশ কাটতে না কাটতেই ওয়ান মোর “রাজ্যপেশায় গরু-ছাগল/ পাতার লোভে আসে,” (৬)।

ভেজাল নিয়ে কবির নির্ভেজাল চার লাইন —

“ছি ছি ছি কী যে বলো

ভেজাল আবার কী?

টিনের উপর লেখা আছে

খাঁটি গাওয়া ঘি!” (৭)

ভালোবাসাও আছে কবির হৃদয়ে। কাঠখোট্টা নন। কবিরা তো এমনিতেই নরম হন। খালেদ সরফুদ্দীনও ব্যতিক্রম নন। প্রমাণ? এই নিন –

“হিমেল মাখা অনুভূতি

মেহেদি রং বিকেল

তুমি আমার ভালোবাসা

তুমিই আমার নিকেল

হিমেল মাখা অনুভূতি

মেহেদি রং বিকেল

তুমি আমার চন্দ্রমুখী

তুমিই আমার নিকেল।” (৯)

নিকেল হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ সেন্টসের (দ্বিতীয় সর্বনিম্ন) একটি মুদ্রা। জানিনা কবি সরফুদ্দীন কোয়ার্টার (২৫ সেন্টস), ডাইম (১০ সেন্টস) এবং পেনি (১ সেন্ট) বাদ দিয়ে কেন নিকেলকে বেছে নিলেন কিংবা নিকেলের বৈশিষ্ট্যের সাথে প্রিয় মানুষটিরকোন্ মিল খুঁজে পেলেন? আজ (৭ ফেব্রুয়ারি) ছড়াটি পড়লাম। গতকাল (৬ ফেব্রুয়ারি আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটির জন্মদিনগিয়েছে। এটা ঠিক, গতকাল যদি পড়তাম, তাহলে এই ছড়ার উদ্ধৃতি ধার করে অথবা এটা থেকে “মেহেদি রং,” “হিমেল মাখাঅনুভূতি,” “চন্দ্রমুখী,” “নিকেল-বিকেল” এসব চুম্বক শব্দ চুরি করে জীবনসঙ্গীনিকে শুভেচ্ছা জানাতাম!

 

“কাবিন” নিয়ে অতি সম্প্রতি কতো কান্ড, অকান্ডই না হয়ে গেছে বাংলাদেশে। নিচের এই ছড়াটি তারও অনেক আগে লেখাহলেও কাকতালীয়ভাবে “কনটেম্পোরারি” হয়ে গেল। কী আশ্চর্য! কবিরা কী দূরদর্শীও হন? —

“সাধু, তোমার যদি ইচ্ছে করে

কক্সবাজারে ঘুরতে যাবা

টাকার ছোট পুটলি রেখো

ধরতে পারে পুলিশ বাবা!

দুষ্ট বাতাস যদি ওড়ায়

তোমার বউয়ের ওড়না জামা

ভয় করো না সাথে রাখো

লক্ষ টাকার কাবিননামা।

দেখতে যদি ইচ্ছে করে

দিনের শেষে সন্ধ্যা নামা,

বুক পকেটে রাখো শুধু

একটা কাগজ কাবিননামা।

পুটলি ছাড়া কাজ হবে না

যদি ডাকো পুলিশ মামা

কষ্ট থেকে রেহাই পেতে

সাথে রাখো কাবিননামা।

পুলিশ এখন ফতোয়া দেয়

মোল্লারা সব বয়ান থামা,

যত্ন করে রাখবে শুধু

অটোগ্রাফের কাবিননামা।” (১৪)

— দীর্ঘ ছড়া, তবে সাম্প্রতিক ইস্যুকে চমৎকারভাবে ধারণ করেছে। বিশেষ করে বিবাহিত যুগল, যাঁরা বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটনএলাকায় বেড়াতে যাবেন তাঁদের জন্য প্রয়োজ্য। কবি সরফুদ্দীনের কথাটি মনে রেখে সঙ্গে কাগজখানা (কাবিননামা) ২৪/৭ সঙ্গেরাখবেন। অন্যথায় অহেতুক বিব্রতকর অবস্হায় পড়ার সমূহ আশংকা আছে, আপনাদের দু’জনকে “অপরিচিত” ও “বেআইনী” ভাগ্নে ও ভাগ্নে-বউ ভেবে নিতে পারেন সংশ্লিষ্ট “মামা!”

শৈশবের স্মৃতিকাতরতা ফুটে উঠেছে এখানে —

“অভিমানের সাথে ছিল

কিশোরবেলার আড়ি,

মাছের মাথা খাওয়া নিয়ে

চলতো কাড়াকাড়ি..।

হারিয়ে যাওয়া খুঁজতে সময়

আসছি এবার বাড়ি …

ডাক দিলে সব বন্ধুগুলো

এসো তাড়াতাড়ি।” (১৬)। এই ছড়া নির্ঘাত বেশিরভাগ পাঠককেই নস্টালজিক করবে।

সুখী দাম্পত্য জীবন বা স্বামী-স্ত্রী’র সম্পর্কে রসায়ন ও দর্শনও বাদ যায়নি কবির লেখনীতে। কীভাবে? পড়ুন এটা —

“ইচ্ছে হলে বরকে তোমার দাস বানিয়ে রাখো,

ইচ্ছেবিহীন শিরোনামে দাসীর মতো থাকো।

কিংবা যদি বরকে তুমি রাজার আস


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category