কুডুলগাছি একটি গ্রামের নাম। দর্শনা স্টেশন থেকে সোজা উত্তরে মাথাভাঙ্গা নদী পেরিয়ে কিছুটা এগোলেই কুডুলগাছি। ১৯৪৮-৪৯ সালে ছয় বছর বয়সে আমার কিছু সময় কেটেছে এই গ্রামে। ছয় বছরের চোখে দেখা এই গ্রামটি আমার স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে ধরা রয়েছে। তখনকার এক অজ গ্রাম। দর্শনা স্টেশন থেকে দাসু দা গরুর গাড়িতে করে আমাদের কুডুলগাছি নিয়ে গিয়েছিল। মাথাভাঙ্গা নদীতে কোন সেতু ছিল না। দাসু দা আমাদের ভেতরে রেখেই গাডিটা পানিতে নামিয়ে দিয়ে নদীটা পার করে নিয়ে এসেছিল। যে ঘাট দিয়ে আমরা পার হয়েছিলাম তার নাম ছিল গলায় দড়ি ঘাট।
উঁচু উঁচু গাছে প্রায় অন্ধকার হয়ে থাকা রাস্তা দিয়ে গ্রামে ঢুকেই অবাক হয়েছিলাম। মনে হয়েছিল বুঝি কোন রূপকথার রাজ্যে এসেছি। বড বড় পাকা বাডি, দোতলা-তিনতলা। কোন কোন বাড়িতে নাটমন্দিরও ছিল, সে সব নাটমন্দিরে আয়োজন করে গানের আসরও হোত। গ্রাম, অথচ সেখানে রাস্তার ধারে দোকানপাট, পোস্ট অফিস, পাকা বড় ভবনে হাই স্কুল, চ্যারিটেবল ডাক্তারখানা। কোন গ্রামে কি এমন থাকে?
হিন্দু প্রধান এ গ্রামের এই সব বড় বড় বাড়ির বেশির ভাগই তখন পরিত্যক্ত হয়ে ছিল। তখন সবে দেশ ভাগ হয়েছে। কুডুলগাছির প্রায় গা ঘেঁষেই সীমান্ত রেখা চলে গেছে। শুনেছিলাম, বড় বড় বাডির মালিকরা গ্রাম ছেড়ে কলকাতা চলে গেছেন।
আমার সেই বয়সে গ্রামটিতে দেখেছিলাম তিনটি উপদ্রবে মানুষকে ভীত থাকতে। সাপ, বাঘ আর ভূত। হ্যাঁ ভূত! জঙ্গলে ঘেরা আলো-আঁধারির নির্জন-নিরিবিলি গ্রামটি আমার কাছে ছিল রহস্যময়। তখনকার কত ঘটনা আমার শিশু মনে দাগ কেটে গিয়েছিল।
সেই সব কথা নিয়েই বছর তিনেক আগে লিখেছিলাম এই বইটি, ‘কুডুলগাছির ভূত’। প্রকাশ করেছে অন্বয় প্রকাশ। বইমেলায় অন্বয়-এর স্টলে (নং ৫৪) বইটি পাওয়া যাবে আশা করি।