• রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:০৯ পূর্বাহ্ন

দিলারা হাশেম এর অন্তিম যাত্রা

Reporter Name / ১০৪ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ, ২০২২

 

দিলারা হাশেম এর অন্তিম যাত্রা
এস আশরাফ আহমেদ
পরশু শনিবার সন্ধ্যায় এক নিমন্ত্রণে যাওয়ার পথে আমার স্ত্রীকে লেখা সরকার কবিরউদ্দিন Kabiruddin Sarkar ভাইয়ের স্ত্রীর একটি মুঠোফোন বার্তায় কিছুক্ষণ আগের দুঃখজক খবরটি প্রথম জেনেছিলাম। ঔপন্যাসিক, গল্পকার ও কবি এবং ভয়েস অব আমেরিকার প্রাক্তন সংবাদ পাঠক দিলারা হাশেম আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন! বাংলা সাহিত্যের একজন খ্যাতিমান ব্যাক্তিত্ব হওয়া ছাড়াও ওয়াশিংটন ডিসি এলাকায় বসবাসকারী দুই বাংলার সাহিত্যামোদীদের কাছে তিনি ছিলেন অতীব নমস্য ব্যক্তি। ষাটের দশকে ‘ঘর মন জানালা’ উপন্যাসটি প্রকাশের সাথে সাথেই সাহিত্যাঙ্গনে তিনি নিজেকে স্থায়ী করে নিয়েছিলেন। তাঁর নামটির সাথে তখন থেকেই পরিচিত হলেও এবং বিগত প্রায় চল্লিশ বছর থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কাছ থেকে দেখলেও তাঁর সাথে সরাসরি আলাপ ও পরিচয় হয়েছিল মাত্র একবার।

এস আশরাফ আহমেদের সাথে দিলারা হাশেম

ওয়াশিংটন ডিসি এলাকায় বহু বছর থেকেই ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যামোদীদের GPA নামে একটি সংগঠন আছে যার সভ্যরা বছরে ৪-৬ বার মিলিত হয়ে থাকে। আমিও সেটির সাথে যুক্ত আছি। আজ থেকে চার বছর আগে, ২০১৮ সালের ২৫শে মার্চ লেখক ডঃ শ্যামল দাসগুপ্তের Shyamal Dasgupta ভার্জিনিয়ার বাসায় ঠিক তেমনি এক সমাবেশে আমন্ত্রিত হয়ে দুর্বল স্বাস্থ্য নিয়েই এসেছিলেন দিলারা হাশেম। তিনি নিজের বই থেকে দীর্ঘ একটি কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন। তখন লক্ষ করেছিলাম আবৃত্তির মাঝে মাঝে তিনি খেই হারিয়ে ফেলছিলেন। মনে হয়েছিল বার্ধক্যজনিত কারণে।
এক ফাঁকে পরিচিত হবার ইচ্ছায় নিজের নামটি বললে তিনি সম্পুর্ণ সজাগ হয়ে এবং স্পষ্ট করে বললেন, হ্যাঁ আপনার নাম আমি জানি, আপনি আশরাফ আহমেদ, আপনি আমাকে একটি বই পাঠিয়েছিলেন। মনে পড়লো ভুল ঠিকানায় তাঁর আশীর্বাদ চেয়ে আমার প্রকাশিত প্রথম বইটির একটি কপি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম পাঁচ বছর আগে। পেয়েছিলেন কিনা তা জানা ছিল না। কিন্তু এতোদিন পর তাঁর কথা শুনে মনটি খুশিতে নেচে উঠেছিল। নতুন কিছু পড়ছেন বা লিখছেন কিনা জিজ্ঞেস করলে বলেছিলেন নতুন কিছু পড়া হচ্ছে না কিন্তু আত্মজীবনী লিখছেন।

সরকার কবীরুদ্দিন এবং রোকেয়া হায়দারের মাঝে বসে আছেন দিলারা হাশেম

আমার পাশের শহর বেথেসডার একটি বাড়িতে পুত্র সহ তিনি বাস করেন। আমন্ত্রিয়েতার অনুরোধে ফেরার পথে তাকেও বাড়ি পৌঁছে দিতে আমরা সানন্দে রাজি হলাম। অতিথিদের অনেকে অত্যন্ত সম্মান, যত্ন ও ধৈর্যের সাথে তাঁকে ধরে ধরে গাড়িতে তুলে দিলেন। তিনি বসলেন পেছনের সিটে আমার স্ত্রীর সাথে।
দীর্ঘ ৩০-৪৫ মিনিটের ফেরার পথে ছোটখাট কথা হচ্ছিল। মনে হলো কিছুক্ষণ পরপর একই প্রশ্ন তিনি করে যাচ্ছিলেন। যেমন, উত্তর পাওয়ার পরও থেমে থেমে আমার স্ত্রীকে কয়েকবার জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কি? তোমরা কোথায় থাক? কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে আমি যে তাঁকে বই পাঠিয়েছিলাম এবং মনে থাকা আমার নামটি একই লয়ে এবং অবিকল একই বাক্যে অন্ততঃ তিনবার উচ্চারণ করেছিলেন। স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম বার্ধক্যজনিত আলযাহাইমার রোগের কাছে তিনি ভালোই পরাজয় স্বীকার করেছিলেন। কিছু কিছু কথা মনে থাকলেও স্মৃতিভ্রম এই রোগের প্রধান উপসর্গ। খুব খারাপ লেগেছিল।
এখন আরো খারাপ লাগল যখন জানলাম যে তিনি আমাদের নিকটতম, মাত্র দুই-আড়াই মাইল দূরের শেডিগ্রোভ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। আগে জানা থাকলে এই মহীয়সীর সাথে শেষ সাক্ষাতটি করে আসতে পারতাম।
তাঁর সৃজনশীল বর্ণাঢ্য জীবন ও স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category