শিব্বীর আহমেদ
সমাজে ভালো মানুষের সংখ্যা বেশি। কিন্তু এই ভালো মানুষদের সংঘ অনেক দূর্বল। এরা ভালো থাকতে চায়। কোন ঝামেলায় যেতে চায়না। নিজের ভালোটা যতক্ষন পর্যন্ত ভালো আছে ততক্ষন পর্যন্ত এই ভালো মানুষদের কোন সমস্যা থাকেনা। অন্যের কি হল তাতেও তাদের বেশি কিছু যায় আসেনা।
ইতর মানুষের সংখ্যা সমাজে খুবই নগন্য। কিন্তু এই নগন্য ইতর মানুষের সংঘ অনেক বেশি শক্তিশালী। গুটি কয়েক ইতর মানুষ তাদের ইতরামি দিয়ে পুরো একটি সমাজকে নিয়ন্ত্রন করে ফেলে। ইতর মানুষের দৌরাত্বে সাধারন মানুষের মুখে তালা লেগে যায়। সত্য বলতে ভয় পায়। সমঝোতা করে নিজের ভালোত্ব বজায় রাখতে চায়। প্রতিবাদ করতে চায় না। কারন প্রতিবাদ করলেই বিপদে পড়ার সম্ভাবনা চোখের সামনে ভেসে উঠে। ভয়ে এদের জ্ঞান লোপ পায়। লাজ লজ্জার ভয়ে চুপ করে থাকে।
ইতর মানুষ বেহায়া বেলাজা বেশরম হয়। কোন কিছুতেই এদের কোন লজ্জা হয়না। কুৎসা, চুরি, লুটপাট, দূর্ণীতি, হিংসা, বিদ্বেস হানাহানি, ভয়ভীতি দেখিয়ে সমাজে এরা দাপটের সাথে চলতে চায়। এরা বোঝে মানুষ এদেরকে ঘৃনা করে। কিন্তু তাতে ইতর মানুষদের কিছুই আসে যায়না।
ইতর মানুষ সম্পর্কে হাসিসে বর্ণীত আছে যে, হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের কিছু নিদর্শন হলো জ্ঞান লোপ পাবে, অজ্ঞানতার প্রসার ঘটবে, ইতর মানুষের বিস্তার ঘটবে, এবং সমাজে ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে।’ (সহীহ বুখারি শরিফ, প্রথম খন্ড, হাদিস: ৮০)।
এক রাজার দশটি পোষা হিংস্ত্র কুকুর ছিল। যে কোন মন্ত্রীর কাজে অসন্তুষ্ট হলে রাজা সেই মন্ত্রীকে ওই দশ কুকুরের মধ্যে ছেড়ে দিতেন। কুকুরদের আঁচড় কামড়ে ঐ মন্ত্রীর প্রান যেত। একদিন এক প্রবীণ মন্ত্রীর উপদেশ রাজার মনঃপূত না হওয়ায় তিনি ওই মন্ত্রীকে কুকুরদের মধ্যে ছেড়ে দিতে আদেশ দিলেন।
মন্ত্রী অনেক কাকুতি মিনতি করলেন – কিন্তু রাজার মন নরম হল না। মন্ত্রী বললেন, রাজামশাই, আমি গত দশ বছর ধরে আপনার সেবা করছি। আজ আমার একটা সিদ্ধান্ত আপনার পছন্দ হল না বলে আমায় এই কঠোর শাস্তি দিলেন। দয়া করে আমায় এই শাস্তি দেবেন না। কিন্তু রাজা তার সিদ্ধান্তে অটল রইলেন। নিরূপায় হয়ে মন্ত্রী বললেন, মহারাজ আপনি আমায় মাত্র দশ দিন সময় দিন। তার পর আপনি আমায় যা শাস্তি দেবেন আমি মাথা পেতে নেব।
রাজা তাতে সম্মতি দিলেন। মন্ত্রী তৎক্ষনাৎ কুকুর পালক এর কাছে গিয়ে তাকে দশ দিনের ছুটি দিলেন এবং এই দশ দিন নিজের হাতে কুকুরদের যতœ করলেন, তাদের স্নান করালেন, খাওয়ালেন, তাদের সঙ্গেই খেলাধুলা করলেন।
দশদিন পর মন্ত্রী রাজসভায় প্রবেশ করা মাত্র রাজার আদেশে তাকে কুকুরদের মধ্যে নিক্ষেপ করা হল। কিন্তু রাজা আশ্চর্য হয়ে দেখলেন কুকুরগুলো মন্ত্রীকে আক্রমণ করার বদলে তার পা চেটে দিচ্ছে, লেজ নেড়ে আদর খাচ্ছে, পায়ের কাছে গড়াগড়ি খাচ্ছে। রাজা মন্ত্রীকে ডেকে অবাক চোখে এর কারণ জানতে চাইলেন।
মন্ত্রী বললেন, মহারাজ আমি মাত্র দশদিন এই কুকুরদের সেবা করেছি। তারা আমাকে মনে রেখেছে। আর আমি আপনাকে দশ বছর ধরে সেবা করেছি কিন্তু আমার একটা ভুলে আপনি সেই সেবা ভুলে গেলেন!
একথা শুনে রাজা তার ভুল বুঝতে পারলেন এবং কুকুরের বদলে কুমির পালন শুরু করলেন।
সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে; কিন্তু তোমরা হবে প্লাবনের স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মতো। আর আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের আতঙ্ক দূর করে দিবেন, তিনি তোমাদের অন্তর ভীরুতা ভরে দিবেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪২৯৭) বর্তমান পৃথিবীর চিত্র তেমনটাই হচ্ছে।